সহজ ১০টি ব্যবসা, শুরু করতে পারেন আজই!
অনেকেই ব্যবসা শুরু করতে চান কিন্তু লাভ-লোকসান, সমস্যা এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এর কারণে ব্যবসা শুরু করাটাকে কঠিন কাজ মনে করে আর শুরুই করেননা। ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে, এটা স্বাভাবিক। এরকম চ্যালেঞ্জ সব কাজেই থাকে। তারপরও যারা ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কোন ব্যবসাটি শুরু করবেন, কতটা সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে এমন নানারকম দুশ্চিন্তায় থাকেন, তাদের জন্য আজকের আর্টিকেল এ সহজ ১০টি ব্যবসা সম্পর্কে ধারনা দেয়া হল। আশা করি এই লেখাটি আপনার ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ধারনা এবং সাহস এর যোগান দিবে।
নিচে দেয়া হল সহজ ১০টি ব্যবসার তালিকা এবং বিস্তারিত। এখান থেকে আপনার সুবিধামত একটি ব্যবসা বেছে নিন এবং শুরু করে দিন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনার যাত্রা।
চা বিক্রি
সহজ ১০টি ব্যবসা এর তালিকা এর মধ্যে এটি অন্যতম। বাঙালির চা প্রেমের জুড়ি নেই। সকালের নাস্তা, বিকেলের আড্ডা, কিংবা শীতের কাপুনিতে সকলেরই চাই এক কাপ গরম গরম চা। এই ভালোবাসাকে পুঁজি করেই একটি সহজ ব্যবসা চিন্তা করা সম্ভব।
সামান্য কিছু টাকা বিনিয়োগ করে চা বানানোর সরঞ্জাম ও তা পানের জন্য কিছু কাপ কেনা এই ব্যবসার মূল খরচ। চাইলে সাথে কম খরচের বিস্কুট কিংবা প্লেইন কেক রাখা যেতে পারে। আজকাল অনেকেই সাধারণ চায়ের পাশাপাশি মালাই, চা ফলের রসের চা, ফুলের পাপড়ির চা ইত্যাদি নানা রকম চায়ের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। ভালো ব্যবসা করতে সেদিকেও নজর দেওয়া যায়।
বিড়াল পালন
বিড়াল পালন হতে পারে সহজ ১০টি ব্যবসা এর মধ্যে অন্যতম ইউনিক এবং অবশ্যই লাভজনক একটি ব্যবসা যেটি আপনাকে অবিশ্বাস্য সাফল্য এনে দিতে পারে।
অনেকেই ভালোবেসে বিড়াল পোষেন। সেখান থেকে শুরু হতে পারে বিড়ালের ব্যবসা। ক্যাট ফুড এবং সাধারণ খাবারের মিশেলে বিড়ালের খাদ্যাভ্যাস তৈরি করতে পারলে কম খরচেই বিড়াল পালন সম্ভব। কয়েক মাস পর পর বিড়াল সন্তান জন্মদানের পর বাচ্চা বিড়াল বিক্রয়ের মাধ্যমে সহজেই একটি ভালো পরিমাণের আয় হয়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার বিড়ালকে যেন প্রয়োজনীয় সকল ভ্যাকসিন দেয়া হয় এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে লালন পালন করা হয়।
আরও পড়ুন- ১০ হাজার টাকায় ২৫টি ব্যবসার আইডিয়া
ইলেট্রনিকস এক্সেসরিজ
বর্তমান ডিজিটাল যুগে নানা রকম ইলেকট্রনিক্স এক্সেসরিজের চাহিদা বেড়েই চলেছে। এই ব্যবসাকে সহজ বলার একটি অন্যতম কারণ হলো এখানে মূলত ব্যবসায়ী নিজের হাতে কোন কিছু তৈরি করার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র কোথা থেকে পাইকারি দামে ভালো মানের ইলেকট্রনিক এক্সেসরিজ সংগ্রহ করা সম্ভব, তা জেনে পণ্যগুলো খুচরা আকারে বিক্রি করাই এ ব্যবসায়ের মূল কাজ।
পাশাপাশি সাধারণ এক্সেসরিজের পাশাপাশি কেউ যদি কিছু অন্যরকম পণ্য যেমন রান্নার কাজ সহজ করার নানান রকম ইলেকট্রনিক্স এক্সেসরিজ, ব্যায়াম বা পড়াশোনার সাথে সম্পর্কিত নানা রকম ইলেকট্রনিক্স এক্সেসরিজ ইত্যাদির ব্যবসা করে তবে তার পণ্যের চাহিদা আরো বেশি থাকবে। লাভজনকতা বিবেচনায় এটি সহজ ১০টি ব্যবসা এর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্যবসা।
মায়েদের যত্নের পণ্য
একজন নতুন মায়ের নানান রকম যত্নের প্রয়োজন পড়ে। ভেবে দেখুন প্রতিবছর অসংখ্য নারী মা হচ্ছেন। মা হবার পর তাদের নানারকম শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়। এমতবস্থায় যদি মায়েদের যত্নের কিছু পণ্য নিয়ে ব্যবসা করা যায় তবে তা সহজেই লাভের মুখ দেখবে। এর মধ্যে থাকতে পারে সন্তান জন্মদানের দাগ চলে যায় এ ধরনের ক্রিম, সন্তান জন্মদানের কারণে শরীরে জমা অধিক ওজন কমানোর জন্য ব্যায়ামের এক্সেসরিজ, চুল পড়া রোধের নানা রকম ভিটামিন ইত্যাদি।
খুব বেশী পুঁজির প্রয়োজন নেই, লাভজনক ও ইউনিক একটি ব্যবসা এটি। তাই এটি আমাদের সহজ ১০টি ব্যবসা এর তালিকায় রাখা হল।
ভেষজ প্রসাধনী
মানুষ দিন দিন স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠছে এবং প্রকৃতির উপর নির্ভর করে নির্মল জীবন শুরু করতে চাচ্ছে। তাই ভেষজ পণ্যের চাহিদাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে নানা রকম প্রসাধনীতে তারা কেমিক্যালের ব্যবহার চায় না। তাই বর্তমান সময়ে ভেষজ তেল, শ্যাম্পু, ক্রিম, সাবান ইত্যাদির ব্যবসা করলে তা একই সাথে সহজ এবং লাভজনক ব্যবসায় হতে পারে। বাজারে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভেষজ প্রসাধনীর চাহিদা রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সহজে ভালো পরিমাণ আয় করতে পারেন।
কম বিনিয়োগে এবং তেমন কোন পরিশ্রম ছাড়াই এ ব্যবসাটি শুরু করা সম্ভব বলেই এটি সহজ ১০টি ব্যবসা এর মধ্যে অন্যতম।
আরও পড়ুন- চাকরির পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায়?
আকর্ষণীয় সাবান তৈরী
সাবান একসময় শুধুই একটি প্রয়োজনীয় পণ্য ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাবানকে মানুষ একটি আর্টের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে কম খরচে সাবান বানানোর নানান প্রশিক্ষণ নেওয়ার সম্ভব। এরপর সাবান বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে নিলেই আপনি সাবান বানানো ও বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত। বর্তমানে বিভিন্ন আকৃতি ও রঙের আকর্ষণীয় সাবান বাজারে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
এ ব্যবসাটি সহজ ১০টি ব্যবসা এর মধ্যে অন্যতম একটি ব্যবসা কারণ এ ব্যবসাটি শুরু করতে আপনার বিনিয়োগ যেমন কম লাগবে তেমনি এটি লাভজনক।
গল্প, কবিতা, গান বিক্রি
কায়িক শ্রম এর ব্যাপার নেই, তেমন বিনিয়োগ এর ঝামেলা ও নেই এ ব্যবসায়। সহজ ১০টি ব্যবসা এর তালিকায় তাই এ ব্যবসাকে স্থান দেয়া হয়েছে।
আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা যথেষ্ট প্রতিভাবান। নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে গল্প, কবিতা, কিংবা গান লিখতে পারেন। আপনারা কিন্তু চাইলেই ফ্রিল্যান্সিং হিসাবে আপনাদের এই লেখাগুলো বিক্রি করতে পারেন। আজকাল অনেক অনলাইন গ্রুপেও এ ধরনের মেধাবৃত্তিক সেবা ক্রয় ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা আছে। এই ব্যবসায়ের সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো আপনাকে যা আনন্দ দেয়, তাই আবার আপনার জন্য অর্থ বয়ে নিয়ে আসবে।
আচার বিক্রি
এটি এমনিতেই এখনকার সময়ে জনপ্রিয় একটি ব্যবসা। এ ব্যবসাটি ঘরোয়াভাবেই শুরু করা যায় এবং বিনিয়োগ ও খুবই কম লাগে বিধায় এটি সহজ ১০টি ব্যবসা এর মধ্যে অন্যতম।
এখন সময় পাল্টেছে। মানুষ আগের মত ধৈর্য ধরে আচারের মতো খাবার তৈরি করতে চায় না। কিন্তু আচারের যে স্বাদ আর ঘ্রাণ তার একটা চাহিদা বরাবরই রয়ে গেছে। তাই সময় ও সুযোগ বুঝে বাসায় বসেই সিজনাল ফল দিয়ে আচার তৈরি ও তা বিক্রি করা সম্ভব। ফরমালিন ও কেমিক্যাল মুক্ত ভাবে আচার তৈরি করলে বাজারে তার ভালো চাহিদা তৈরি হওয়ার কথা। আজকাল অনলাইনে এবং অফলাইন দুই জায়গায়ই আচার বিক্রির অনেক প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে। ক্রেতার ফিডব্যাক অনুযায়ী আরো নতুন নতুন আইটেম আনতে পারলে তা আপনাকে আরো বেশি জনপ্রিয় করে তুলবে।
কাস্টমাইজড গিফট
ধারনাটি এদেশে মোটামুটি নতুনই বলা চলে তবে লাভজনক ব্যবসা এটি। ব্যবসাটি শুরু করতে তেমন কোন ঝক্কি ঝামেলার ব্যাপার নেই। তাই এ ব্যবসাটি আমাদের সহজ ১০টি ব্যবসা এর তালিকায় এসেছে।
জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী অথবা অন্যান্য নানা আয়োজনে প্রথমেই গিফটের কথা মনে আসে। কিন্তু গিফটে একঘেয়েমি চলে আসলে তা কারো কাছেই ভালো লাগে না। এ কারণেই দিন দিন কাস্টমাইজড গিফটেড চাহিদা তৈরি হচ্ছে। এতে করে যাকে গিফট দেওয়া হবে তার পছন্দ অথবা রুচি অনুযায়ী সাজিয়ে গুছিয়ে নানা রকম গিফট আইটেম দেওয়া সম্ভব হয়৷ এই বাড়তি চাহিদাকে মাথায় রেখে সহজ একটি ব্যবসার কথা চিন্তা করতে পারেন। কারন কাস্টমাইজড গিফটের ক্ষেত্রে সাধারণত গোড়া থেকে কিছু বানানোর চাপ নেই। বরং বিভিন্ন খুচরা জিনিস কিনে তা একসাথে সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কাস্টমাইজড গিফট তৈরি করা হয়। অথবা খুচরা জিনিসেওর উপর নাম লেখা বা বিশেষ টেক্সট লেখা ইত্যাদি কাজ করতে হয়।
ধরুন, কাস্টমার যাকে গিফট দেবেন তিনি রবীন্দ্রনাথের ভক্ত। আবার একই সাথে গোলাপ ফুল এবং নির্দিষ্ট কোন ব্রান্ডের চকলেট খেতে পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে কাস্টমাইজড ব্যবসা করলে এই পছন্দ অনুযায়ী একটি বক্সে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা কিংবা গল্পের বই, বাজেটের মধ্যে থেকে কোন এক ধরনের গোলা্ তিন থেকে চারটি চকলেট ইত্যাদি দিয়ে গিফট বক্স সাজানো সম্ভব। এর ফলে যাকে গিফট দেওয়া হচ্ছে তিনি একসাথে তার পছন্দের একাধিক আইটেম পাচ্ছেন৷ মূলত যাকে গিফট দেওয়া হবে তাকে এই বিশেষ আনন্দ দেয়া অথবা চমকে দেয়ার উদ্দেশ্যেই মানুষের মধ্যে কাস্টমাইজড গিফটের চাহিদা বাড়ছে।
ডে কেয়ার
ডে কেয়ার এর ব্যবসা বলতে অনেকেই বড় বিনিয়োগ এর ব্যবসা ভেবে বসতে পারেন। আদতে এটি আপনি আপনার ঘর থেকেই শুরু করতে পারেন প্রাথমিকভাবে। আপনার আশেপাশের আবাসিক ভবনের চাকুরীজীবী প্রতিবেশীরাই হতে পারে আপনার প্রাথমিক ক্লায়েন্ট। এ ব্যবসাটি তাই সহজ ১০টি ব্যবসা এর মধ্যে অন্যতম একটি ব্যবসা।
বর্তমানে মানুষ অনেক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। একই সাথে নারী ও পুরুষ সবাইকেই জীবন নির্বাহের জন্য রোজগারের পথ খুঁজতে হচ্ছে। ফলে অনেক শিশুকেই যত্ন ও লালন-পালনের জন্য কোথাও রাখার প্রয়োজন পড়ে। কারণ সব সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সাথে থাকে এমন কোন কথা নেই। বিশেষ করে ঢাকা শহরে অনেক স্বামী-স্ত্রী শুধুমাত্র সন্তানকে নিয়ে থাকেন। তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং ভাল খাবার পরিবেশন করে সাথে সন্তানদের সাথে ভালো ব্যবহার করা হয় এমন ডে কেয়ার সেন্টারের চাহিদা বেড়েই চলেছে।
তবে এই ব্যবসা করতে গেলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে মানুষের কাছে তার সন্তানের চেয়ে প্রিয় কোন কিছুই নয়। তাই সেন্টারে বাচ্চাদের লালন পালন করবে যারা, তারা যেন শিশুদের যত্ন নিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়, তাদের যেন কোন ছোঁয়াচে রোগ না থাকে এবং প্রত্যেকের ব্যবহার যেন বন্ধুসুলভ হয় তা খেয়াল রাখতে হবে।