অল্প টাকায় কোন কোন ব্যবসা করা যায় যা আপনার ভাগ্য বদলে দিতে পারে?
অনেকের ধারনা অল্প টাকায় কোন ব্যবসা শুরু করা সম্ভব না! অনেকে ভেবে থাকেন অল্প টাকায় ব্যবসা শুরু করতে পারলেও সেটা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব! কেউ কেউ ভেবে থাকেন ব্যবসা করতে অনেক টাকা বিনিয়োগ লাগে! যদি আপনি ও এই দলে থাকেন তাহলে সময় এসেছে আপনার চিন্তভাবনা পরিবর্তন করার! আজকের ব্লগে আপনি এমন জানতে পারবেন অল্প টাকায় কোন কোন ব্যবসা করা যায়?
শুধু দুই একটা না আজকের ব্লগে দেয়া হল ৫টি ব্যবসার আইডিয়া যা অল্প টাকায় শুরু করা যায়।
অল্প টাকায় কোন কোন ব্যবসা করা যায়?
চালের গুড়া ও আটা তৈরি
অল্প টাকায় কোন কোন ব্যবসা করা যায়, এই প্রশ্নের উত্তরে আমার প্রথম পছন্দের ব্যবসাটি হল চালের গুড়া ও আটার ব্যবসা।
মানুষ দিন দিন অনেক স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠছে। কারণ পরিবেশ ও খাদ্যজনিত নানা সমস্যার কারণে পৃথিবী জুড়ে নানা রকম অসুস্থতা বেড়েছে। এই কারণে সচেতন মানুষ প্রথমেই নজর দিচ্ছে তাদের খাবার বা ডায়েটের দিকে। এবং এই কারণে যে কয়টি ব্যবসা নতুন করে সম্ভাবনার মুখ দেখছে তার মধ্যে আছে চালের গুঁড়ো ও লাল আটার ব্যবসা। অল্প টাকা বিনিয়োগ করে এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। মূলত সাদা-আটার তুলনায় লাল আটা শরীরের জন্য ভালো। এবং যারা ডায়েট করেন জন্য দেশি খাবারগুলোর মধ্যে এই আইটেমটি খুবই জনপ্রিয়৷ পাশাপাশি মুখের স্বাদে পরিবর্তন আনতে অনেকে চাল ভাঙ্গিয়ে তা দিয়ে রুটি, দোসা ইত্যাদি বানিয়ে খেয়ে থাকেন৷ স্থানীয় গ্রামীন মহিলাদের মাধ্যমে চাল ভাঙ্গিয়ে বা আটা তৈরি করে বিভিন্ন রকম সাইজের প্যাকেট বানিয়ে বাজারজাত করলে এ ব্যবসায় লাভের মুখ দেখা যাবে৷
অল্প টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করতে, প্রথমে মেশিন না কিনেও ব্যবসার পরিকল্পনা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করে কাঁচামাল, প্যাকেট এবং পরিবহনের মতো বিষয়গুলো সামাল দিতে হবে৷ তবে বিনিয়োগের পরিমাণ কিছুটা বাড়াতে পারলেই ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ঘরোয়া গ্রাইন্ডার সেটআপ করে চাল ভাঙ্গানো বা আটা তৈরি করা সম্ভব৷ প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা লাভ করা যেতে পারে। ক্ষেত্রে মাসে ৫০০ কেজির মত বিক্রি করলে ভালো লাভের মুখ দেখতে পারবেন৷ অল্প টাকা বিনিয়োগ করে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে এটি নিঃসন্দেহে ভালো।
আরও পড়ুন- ব্যবসা করার টিপস
জৈব সার তৈরি ও বিক্রি
অল্প টাকায় কোন কোন ব্যবসা করা যায়? আসুন আরেকটি চমৎকার অল্প টাকার ব্যবসার সাথে পরিচিত হই। অল্প টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা করতে চাইলে জৈব সার তৈরি ও বিক্রি একটি ভালো আইডিয়া হতে পারে। খুবই সহজে রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট, গবাদি পশুর গোবর ইত্যাদি দিয়ে জৈব সার তৈরি করা সম্ভব। যেহেতু অল্প টাকা বিনিয়োগ করে এই ব্যবসা শুরু করা হবে তাই প্রথমেই অনেক বেশি চিন্তা না করাই ভালো। বরং শহরে যারা ছাদে বাগান করেন এবং গ্রামীণ যেসব কৃষক আছেন তাদের কাছে অল্প অল্প করে এই জৈব সার তৈরি করার পর বিক্রি করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। খুবই অল্প কিছু জিনিস নিয়ে শুরু করে ফেলা সম্ভব বলেই অল্প টাকায় বিনিয়োগের ব্যবসা হিসেবে এই ব্যবসার কথা বলা। ওয়ান টাইম ড্রাম বা প্যাকেট কিনে নিয়েই কাজ শুরু করে দেওয়া সম্ভব। তবে কিছু টাকা খরচ করে নিজের ব্রান্ডের জন্য প্যাকেট ডিজাইন করতে পারলে তা ক্রেতাদের মধ্যে ভরসার যোগান দিবে। বাজারে এক কেজি অরগানিক সারের দাম ৩০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সারের মান ও প্যাকেজিং এর উপর এই দর ঠিক করা উচিত।
রূপচর্চার ঘরোয়া আইটেম
অল্প টাকায় কোন কোন ব্যবসা করা যায়? অসাধারন আর একটি লাভজনক ব্যবসার কথা বলছি যেটিও অল্প বিনিয়োগে শুরু করা সম্ভব।
বর্তমান আধুনিক যুগে নানা রকমের রূপচর্চার আইটেম বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলোর বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। কিছু আছে কেমিক্যালের পরিমাণ এত বেশি যে মানুষের ক্ষতি করে। আবার নেক পণ্য ভালো মানের হলেও দেখা যায় দাম আকাশচুম্বি। এছাড়াও বাংলাদেশের মত দেশে যে সমস্যাটি কমন তা হল ভাল ভাল ব্র্যান্ডের নামের কনটেইনার, বক্স ইত্যাদি ব্যবহার করে নকল পণ্য ভরে উচ্চ দামের বিক্রি করা হয়। ফলে দেখা যায় ব্যবহারকারীরা নানা ধরনের রোগে ভোগে। আর এই সমস্যাটিকে মাথায় রেখে অল্প টাকা বিনিয়োগ করে রূপচর্চার ঘরোয়া আইটেম তৈরী সম্ভব। অনেকেই এই সেক্টরে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তবে সত্যি কথা বলতে আকর্ষণীয় প্যাকেজিং অথবা বিশ্বমানের পণ্যের অল্টারনেটিভ হওয়ার জন্য যে ধরনের ইমেজ তৈরি করা প্রয়োজন তা এই প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ডগুলো পারছে না। কিন্তু দিন দিন মানুষের প্রাকৃতিক বা অর্গানিক পণ্যের প্রতি যে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে তা মিটিয়ে ভালো অংকের লাভ করতে চাইলে, অল্প টাকা বিনিয়োগে এই ব্যবসা শুরু করা যায়।
পুরান ঢাকা থেকে কাঁচামাল ও বোতল কিনে, সেই বোতলের উপর নিজস্ব রুচিসম্মত ব্র্যান্ডিং কর্ ভালো কাঁচামাল দিয়ে রূপচর্চার পণ্য তৈরি করলে বাজারে সাড়া ফেলবে। তবে সেইক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে মানের ব্যাপারে কোন ধরনের আপোস করা যাবে না। Paraban free, natural, handmade এই শব্দগুলো প্যাকেজিংয়ের গায়ে উল্লেখ করে দিলে ক্রেতার ভরসা বাড়বে। বাংলাদেশের সহজলভ্য আইটেম যেমন নারকেল, কালোজিরা। মেথি, তিসি, নিমপাতা ইত্যাদি দিয়ে খুবই ভালো মানের রূপচর্চার পণ্য তৈরি করা সম্ভব। সবচেয়ে ভালো হয় এ ধরনের পণ্য তৈরির একটি কোর্স করে ফেললে। এতে করে নিরাপদ ও উন্নত মানের রূপচর্চার পণ্য তৈরি ও বিক্রি করা সম্ভব।
অর্গানিক মশার স্প্রে
অল্প টাকায় কোন কোন ব্যবসা করা যায়? অল্প টাকায় কোন কোন ব্যবসা করা যায়? অর্গানিক মশার স্প্রে ব্যবসাটির সাথে যদিও অনেকে পরিচিত নয় কিন্তু এটি ও অল্প টাকায় লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া। আমরা সবাই জানি মশা কত ধরনের অসুখ ছড়ায়। আর তাইতো এই মশার হাত থেকে বাঁচতে আমরা নানান রকম স্প্রে অথবা কয়েল ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আতঙ্কের বিষয় হলো ডাক্তাররা বলেন এই ধরনের পণ্য ব্যবহার করার কারণে নানা রকম রোগ মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। তাই বলে তো আর মশার সাথে বসবাস করা যায় না। তাই অল্প টাকা বিনিয়োগ করে মশার অর্গানিক স্প্রে বা কয়েলের ব্যবসা শুরু করা যায়। অ্যালকোহল, লেমন গ্রাস অয়েল, পানি মিশিয়ে যা তৈরি করা সম্ভব। খরচ ও সময় দুটোই কম লাগে বলে লাভ হবে বেশি। সাথে সুন্দর প্যাকেজিং করলে সব ধরনের মানুষের কাছে অল্প টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করা মশার অর্গানিক স্প্রে বা কয়েলের ব্যবসা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। এই পণ্যের মার্কেটিং এর জন্য স্বাস্থ্যজনিত উপকারের জায়গাটি তুলে ধরে মানুষের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে হবে।
ক্রোকারিজ আইটেম রিসেলিং
অল্প টাকায় কোন কোন ব্যবসা করা যায়? এই টপিকে উপরে দেয়া হয়েছে চমৎকার ৪টি ব্যবসার আইডিয়া। এখন আপনাদের সর্বশেষ ব্যবসার আইডিয়া শেয়ার করছি যা অল্প টাকায় শুরু করতে পারেন।
আজকাল রিসেলিং ব্যবসা বাংলাদেশে বেশ জমে উঠেছে। বিশেষ করে জামাকাপড় ও আসবাবপত্র তো অনেকেই রিসেলিং করার মাধ্যমে ব্যবসা তৈরি করে ফেলছেন। কিন্তু আজ আমরা এমন একটি রিসেলিং আইটেম নিয়ে কথা বলব যা বাংলাদেশে ওভাবে শুরু হয়নি। কিন্তু যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। আর তা হলো আপনার বাড়িতে থাকা থালাবাসন। খুব অল্প টাকা বিনিয়োগ করে এই ব্যবসা করা সম্ভব। ফেসবুকে একটি পেইজ খুলে অথবা গ্রুপ করে এবং তার মার্কেটিং এর কিছু টাকা খরচ করলেই এ ব্যবসাটি শুরু করা যায়। আজকাল অনেকেই খাবার সাজিয়ে পরিবেশন করা খুব পছন্দ করেন। তাছাড়া একই থালাবাসনে বারবার খাবার পরিবেশন করার চল কমে আসছে। বরং সবাই চায় নতুন নতুন নানান ডিজাইনের থালাবাসন ব্যবহার করে অতিথিদের চমকে দিতে। পাশাপাশি এখন অনেকেই ঘর সাজানো বা রান্নার ব্লগ করে থাকেন। তাদের জন্য নিত্যনতুন থালাবাসনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু নিয়মিত এত বেশি গুছিয়ে রাখাটা কঠিন। তাই অল্প টাকা বিনিয়োগ করে থালাবাসন রিসেলিংয়ের একটি দারুন ব্যবসা হতে পারে।
এক্ষেত্রে আপনি আপনার নিজের বাসা ও আপনার পরিচিতদের থেকে রিসেল করতে চায় এমন পণ্যের ছবি নিবেন, পরবর্তীতে আপনার পেইজ বা গ্রুপ থেকে আপনি নিজেই এগুলোকে বিক্রি করে বিক্রিত অর্থের একটি অংশ নিজের কমিশন হিসেবে রেখে বাকি টাকা যিনি সেল করলেন তাকে বুঝিয়ে দিবেন। যাদের হয়তো বা কি মূল্য দিয়ে থালা-বাসন কেনার আর্থিক ক্ষমতা নেই, তারাও তুলনামূলক সুন্দর সুন্দর থালা বাসন ব্যবহার করতে পারবেন। আপনার অল্প টাকা বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠা করা একটি ব্যবসা থেকে শুধুমাত্র যে আপনার আর্থিক লাভ হবে তাই না, বরং এর সাথে সম্পর্কিত অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতার জীবনও সহজ হবে। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন যিনি পণ্য পাঠাচ্ছেন তিনি অক্ষত অবস্থায় পাঠাচ্ছেন কিনা। তাই কোন পণ্য পাঠানোর সময় বিক্রেতা এবং গ্রহণের সময় ক্রেতা সাথে সাথে পণ্যের ছবি সাবমিট করার একটি অপশন বা ব্যবস্থা রাখতে হবে। একটু সাবধানতা অবলম্বন করে কাজ করলেই এই ব্যবসা সফল হওয়া সম্ভব।
