১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগে করুন এই ৫টি ব্যবসা, হয়ে উঠুন সফল ব্যবসায়ী!

১৫ লাখ টাকায় ব্যবসা

একটি ব্যবসা শুরু করতে গেলেই আমরা ভাবি কত টাকা বাজেটের মধ্যে ব্যবসাটি শুরু করা সম্ভব। মানে কী পরিমান বিনিয়োগ করে একটি ব্যবসা প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু করা যাবে। অনেক সময় এর উল্টাটাও হয়। হয়তোবা আমাদের হাতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আছে। তখন আমরা কি কি ব্যবসা করা সম্ভব তা নিয়ে ভাবি। আজ আমরা আলোচনা করব ১৫ লাখ টাকায় কি কি ব্যবসা করা সম্ভব?

Advertisement

বর্তমান সময়ে সবকিছুর দাম আকাশচুম্বী হলেও, তারপর সঠিক পরিকল্পনায় ১৫ লাখ টাকা এখনো বিনিয়োগ করার জন্য বেশ ভালো একটি অংকের টাকা। তাহলে চলুন জেনে নিই, ১৫ লাখ টাকায় ব্যবসা করা সম্ভব, এমন কিছু ব্যবসার তালিকা।

১৫ লাখ টাকায় ব্যবসা- লাভজনক বিবেচনায় ৫টি ব্যবসা

১৫ লাখ টাকায় শুরু করতে পারেন, বাছাই করা এমন ৫টি লাভজনক ব্যবসার তালিকা দেয়া হল।

১। মিনি সুপার শপ

Advertisement

২। অটোমেটেড লন্ড্রি সার্ভিস

৩। ফুড ডিহাইড্রেশন ও প্যাকেজিং

৪। ইকো-ফ্রেন্ডলি ব্যাগ বা প্যাকেজিং বিজনেস

৫।  মাইক্রো গ্রিনস ও হাইড্রোপনিক ফার্মিং

মিনি সুপার শপ– হতে পারে আপনার ভাগ্য বদলের মাধ্যম!

১৫ লাখ টাকায় ব্যবসা এর আইডিয়া গুলোর মধ্যে একটি দারুন সম্ভাবনাময় ও লাভজনক ব্যবসা হতে পারে মিনি সুপার শপ এর ব্যবসা। অনেক এলাকাতেই বড় রাস্তার পাশে বড় সুপার শপ থেকে থাকে। যেখানে পণ্যের ভিন্নতা অনেক বেশি। কিন্তু সব সময় মানুষের পক্ষে রেডি হয়ে এইসব সুপারশপ পর্যন্ত যাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে নারীদের জন্য সংসার সামলে এ কাজটি করা কঠিন হয়ে ওঠে। এদিকে দোকানেও আধুনিক মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সবকিছু সবসময় পাওয়া যায় না। তাই এলাকার ভিতরেই সুপার শপ এর একটি ছোট ভার্সন যদি শুরু করা যায় তা লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক।

Advertisement

১৫ লাখ টাকায় ব্যবসা শুরু করার জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো অপশন। সঠিক স্থান নির্বাচন করে এবং যথেষ্ট পরিমাণে নিত্য পণ্যের সাথে  ভিন্ন ধরনের কিছু পণ্য শপে রাখতে পারলে তা স্বাভাবিকভাবেই কাস্টমারকে আকর্ষণ করবে। ধরা যাক একটি এলাকার নির্দিষ্ট কোন গলিতে ব্যবসা স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে আপনি মিনি সুপারশপটি দিলেন। সেক্ষেত্রে কিন্তু শুধুমাত্র ওই গলি না বরং ভালো মানের পণ্য পেলে আশেপাশের কয়েক এলাকা থেকেও কাস্টমার আপনার মিনি সুপার শপে আসবে। কারণ গলির ভিতরে অবস্থিত মিনি সুপারশপগুলোতে যাওয়া তাদের জন্য যতখানি সময় সাশ্রয়ী হবে, বড় রাস্তার ধারে বা আরো দূরে বড় সুপারশপে যাওয়া ততখানিই সময় লাগবে। তাছাড়া একটু দূরে সুপারশপে যাওয়া মানেই তৈরি করার একটি বিষয় থাকে কিন্তু এলাকার মিনি সুপার শপ মানে পুরুষ নির্বিশেষে সেই সুপারশপকে মুদির দোকানের মতোই সাধারণভাবে ভাববে। প্রয়োজন অনুযায়ী যখন তখন সেখানে উপস্থিত হবার ব্যাপারে কোন জড়তা কাজ করবে না।

আরও পড়ুন- ১০ লাখ টাকায় ব্যবসা

অটোমেটেড লন্ড্রি সার্ভিস– চাহিদাসম্পন্ন লাভজনক ব্যবসা

শহরের মানুষের জীবন এখন অনেক বেশি ব্যস্ত এবং যান্ত্রিক।  আধুনিক যাত্রার যে কয়েকটি সাধারণ কাজ করতে মানুষকে হিমশিম খেতে হয় তার মধ্যে একটি হলো পরনের কাপড় নিয়মিত পরিষ্কার করা। যাদের বাসায় কাজের লোক আছেন এবং কাপড় পরিষ্কারের কাজ করেন তাদের কথা আলাদা। তবে সবার কাজে সাহায্যকারী লোক নেই। তাছাড়া অনেক ব্যাচেলর আছেন যারা ঢাকা শহরে পরিবার ছাড়া থাকেন, অনেকে নিয়মিত শহরে নানা প্রয়োজনে আসা-যাওয়া করেন কিন্তু এখানে থাকেন না, আবার অনেকে পানির কাজ বেশি করলে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এইসব মানুষের কথা মাথায় রেখে ১৫ লাখ টাকায় ব্যবসা করার মত যে ব্যবসাটি হতে পারে তা হল automated লন্ড্রি সার্ভিস। একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করে অটোমেটেড ওয়াশিং মেশিন আপন পারেন। এরপর প্রিপেইড কার্ড সিস্টেম করে এই সার্ভিস দেয়া শুরু করা যেতে পারে।

ফুড ডিহাইড্রেশন ও প্যাকেজিং– যুগোপযোগী একটি ব্যবসা

বর্তমান সময়ে মানুষের ভিতরে ফল, শাকসবজি সংরক্ষণের একটি অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে এক সিজনের ফল বা সবজি অন্য সিজনে যাতে খাওয়া যায় তাই মানুষের এই চেষ্টা। দেখবেন আজকাল অনেকেই সারা বছর গরমের ফল আম বা শীতের সবজি ফুলকপি খাচ্ছেন। তবে এগুলোকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে এবং সেই সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটি সবসময় যে খুব সহজ তা নয়। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারলে এ সমস্ত সবজির গুণগত মান নষ্ট হওয়া সহ স্বাদে পরিবর্তন আসে। তাই ১৫ লাখ টাকায় ব্যবসা হিসেবে দারুন এক আইডিয়া হতে পারে ফুডডিহাইড্রেশন ও প্যাকেজিং এর ব্যবসা।

ফুড ডিহাইড্রেশনের ব্যবসার জন্য এই কাজের প্রয়োজনীয় যে সমস্ত আধুনিক মেশিন রয়েছে কিনতে হবে। এই ব্যবসা স্থাপনের জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন নেই। ছোটখাটো পরিসরে শুরু করা সম্ভব। এরপর ভালো মানের পণ্য অর্থাৎ শাকসবজি বা ফল সংগ্রহ করে সেগুলোকে ডিহাইড্রেডেড করার পর সঠিকভাবে প্যাকেজিং  করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনে অর্ডার নেবার মাধ্যমে বাড়িতে বাড়িতে বা সুপারশপে এধরনের প্যাকেজড পণ্য সরবরাহ করার করা সম্ভব। তাই, বলা চলে ১৫ লাখ টাকার ভিতর যে সকল আধুনিক ব্যবসা করা যায় তার মধ্যে এটি অন্যতম।

ইকো-ফ্রেন্ডলি ব্যাগ বা প্যাকেজিং বিজনেস

বর্তমান বিশ্বে প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হওয়ার বিষয়টি দিন দিন আরো প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে। প্রতিটি দেশের সরকার এবং সাধারণ মানুষ চিন্তা করতে শুরু করেছে তাদের পরিবেশকে কিভাবে আরেকটু ভালো রাখা যায়। তারই অংশ হিসেবে বিশ্ব জুড়ে ধীরে ধীরে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হচ্ছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগের চাহিদা বাড়ছে। তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চিন্তা করলে ১৫ লাখ টাকায় ব্যবসা হিসেবে বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগের ব্যবসা অবশ্যই আপনার পছন্দের তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে।

কাগজ, পাট বা কর্নস্টার্চ-ভিত্তিক ব্যাগ তৈরি করে তার ব্যবসা করা সম্ভব। ছোট একটি কারখানার জন্য স্থান, কয়েকজন কর্মী, কাঁচামাল এবং প্রয়োজনীয় মেশিন মিলিয়ে ১৫ লাখ টাকার ভিতরে এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। তবে একই সাথে আপনার পণ্যের সঠিক মার্কেটিংও হতে হবে।পরিবেশসচেতন মানুষ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে অন্যদেরকেও এই পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলতে হবে।

মাইক্রো গ্রিনস ও হাইড্রোপনিক ফার্মিং

অনেকে এই ব্যবসাটির সাথে পরিচিত না ও থাকতে পারেন। ১৫ লাখ টাকায় ব্যবসা এর আইডিয়াগুলোর মধ্যে একটি ইউনিক ও সম্ভাবনাময় ব্যবসা এটি।

আজকাল বিশ্বের সবখানেই মানুষ ভেজাল খাবার নিয়ে আতঙ্কে থাকেন। তাছাড়া কৃষিজাত পণ্য কী পরিমান সার কীটনাশক বা কেমিক্যাল ব্যবহার করে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কায় ভোগেন। ফলে মনে মনে অনেকেই খোঁজেন উন্নতমানের পুষ্টিকর, ভেজাল মুক্ত এবং কেমিক্যাল মুক্ত কৃষিপণ্য। মানুষের এই চাহিদাকে মাথায় রেখে++ হিসেবে মাইক্রোগ্রিনস ও হাইড্রোপনিক ফার্মিংয়ের কথা ভাবা যেতে পারে। ছোট জায়গায় দ্রুত উৎপাদনশীল ও পুষ্টিকর সবজি চাষ করার একটি মাধ্যম এই  মাইক্রোগ্রিনস ও হাইড্রোপনিক ফার্মিং।

মূলত  শাক-সবজির চাষের ছোট সংস্করণই এই ব্যবসায়ের মূলমন্ত্র। লেটুস, শাক, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ছোট পরিসরে ভেজাল ও কেমিক্যাল মুক্তভাবে চাষ করে শহরের বাজারে সরবরাহ করে এই ব্যবসায়ে থেকে লাভ অর। এক্ষেত্রে খুব বেশি পরিমাণে সম্ভব হয় না কিন্তু যেহেতু পণ্যের মান অনেক বেশি ভালো থাকে তাই স্বাস্থ্য সচেতন মহলে এর চাহিদা অনেক। অনেক সময় চেয়ে বেশ কিছুটা বেশি অর্থ ব্যয় করে হলেও এই পদ্ধতিতে চাষ হওয়া পণ্য তারা কিনতে চায়। সঠিকভাবে আপনার এই ব্যবসার মার্কেটিং করতে পারলে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের দ্বারাই যথেষ্ট পরিমাণ মুনাফার মুখ দেখা সম্ভব। ১৫ লাখ টাকার মধ্যে কোন ব্যবসা করতে চাইলে বর্তমান সময়ে চোখ বন্ধ করে নিজে প্রশিক্ষণ নেয়া থেকে শুরু করে মাইক্রোগ্রিনস ও হাইড্রোপনিক ফার্ম স্থাপন পর্যন্ত সবই এই বাজেটের ভিতর করতে পারবেন। 

শেষ কথা

১৫ লাখ টাকায় ব্যবসা শুরু করা যায় এমন আরও অনেক ব্যবসা রয়েছে। সব ব্যবসা সমান লাভজনক নাও হতে পারে। কিছু ব্যবসায় ঝুঁকির পরিমাণ ও বেশী হতে পারে। সবদিক বিবেচনায় উপরে পাঁচটি ব্যবসার আইডিয়া শেয়ার করা হল। তবে যে ব্যবসাটিই আপনি শুরু করেন না কেন, নিজে ভালোভাবে জেনে বুঝে, আপনার এলাকায় পণ্যটির ব্যবসায়িক সম্ভাবনা, লাভজনকতা ও ঝুঁকি সবকিছু বিবেচনা করেই ব্যবসায়ে নামা ভালো। এতে আপনার ঝুঁকি যেমন কমে আসবে তেমনি ব্যবসায়ে সফলতার হার ও বেড়ে যাবে।

Advertisement

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।