|

ক্ষুদ্র ব্যবসা করে কিভাবে লাভবান হবেন? ৫টি মুল্যবান পরামর্শ

ক্ষুদ্র ব্যবসা

ক্ষুদ্র ব্যবসা গুলো বিনিয়োগের ঝুঁকি বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হয়ে থাকে। এই ব্যবসাগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে লাভজনক হয়ে থাকে। এমনকি এসব ব্যবসা থেকে দৈনিক আয় করা ও সম্ভব। তারপরও দেখে থাকবেন অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রায়শই লোকসান করে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হন। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসা লোকসানের মুখোমুখি হয় তাদের ব্যবসা পরিচালনায় কিছু ভুল রয়েছে। এসমস্ত ভুলই তাদের সম্ভাব্য লাভজনক ব্যবসাকে লোকসানি ব্যবসাতে রুপান্তর করেছে।

আজকের আর্টিকেল এ ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে যেসব ভুল করা উচিত নয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল। একই সাথে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে লাভবান হওয়ার জন্য ৫ টি মুল্যবান পরামর্শ শেয়ার করা হল।

ক্ষুদ্র ব্যবসা করার ক্ষেত্রে যেসব ভুল করা উচিত নয়

ক্ষুদ্র ব্যবসা করার ক্ষেত্রে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো অধিকাংশ ব্যবসায়ী অনুসরন করেননা। এই ভুলের দরুন একটি সম্ভাব্য লাভজনক ব্যবসা একসময় বন্ধ হয়ে যায়। দেখে নিন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের করা কমন কিছু ভুল।

  • একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা না করে হুট করে ব্যবসায় নেমে পড়া।
  • ব্যবসায়ের নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য সেট না করা।
  • ব্যবসায়ের সমস্ত কাজ নিজে করতে চাওয়া।
  • একটি সঠিক বাজেট না থাকা যার দরুন হয় অতিরিক্ত না হলে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খরচ হওয়া।
  • প্রয়োজন সাপেক্ষে ব্যবসায়ে ফিনান্স এর ব্যবস্থা না থাকা।
  • প্রয়োজনীয় মার্কেটিং এবং প্রচার না করা।
  • ব্যবসায়ে ফোকাস না থাকা।
  • ব্যবসার উন্নয়নের দিকে নজর না দেয়া, গতানুগতিক ব্যবসা করে যাওয়া।
  • বিক্রয় কর্মীদের উপর পর্যাপ্ত মনিটরিং না থাকা বা অতি বিশ্বাস করা।
  • রিপিট কাস্টমার এর জন্য কাস্টমার এর তথ্য সংরক্ষণ না করা।
  • পন্যের মান এবং দামের উপর ফোকাস না করে যেকোন উপায়ে বিক্রির মনোভাব রাখা।
  • মার্কেটে অন্য কম্পিটিটরদের কার্যক্রমকে মনিটরিং না করা এবং নিজের ব্যবসাকে সুপরিয়র মনে করা।
  • পটেনশিয়াল গ্রাহক সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকা।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে কিভাবে লাভবান হবেন?

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে যেসব ভুল করা উচিত নয় সে ব্যাপারে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে ভুলগুলো না করলেই কি আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসা সফল হয়ে যাবে? ব্যাপারটি এত সিম্পল নয়। নিম্নে উল্লিখিত কিছু পরামর্শ আপনার ব্যবসাকে লাভবান করতে এবং একটি সফল ব্যবসা তৈরিতে আপনাকে সাহায্য করবে।

  • একটি কার্যকর পরিকল্পনা।
  • প্রয়োজনমত বিনিয়োগ এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে অতিরিক্ত বিনিয়োগের ব্যবস্থা।
  • প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ের কার্যক্রম মনিটর এ রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের প্রস্তুতি রাখা।
  • একটি কার্যকর রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড টিম।
  • ব্যবসায়ের আয় ব্যয় এর পরিপূর্ণ হিসাব এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণ।
  • ব্যবসায়ের যেকোন প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ব্যবসায়ের লাভের একটা অংশ রিজার্ভ রাখা।
  • ব্যবসায়ের এ টু জেড মনিটর এ রাখার জন্য ব্যবসায়ে পর্যাপ্ত সময় দেয়া।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে লাভবান হতে করনীয়

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে লাভবান হওয়া তেমন কঠিন কিছু নয় যদি আপনি ব্যবসায়ে অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন। তবে যারা ব্যবসায়ে নতুন তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। তবে নিম্নে উল্লিখিত পাঁচটি পরামর্শ অনুসরণ করে ব্যবসা করলে নতুন হলেও আপনি ব্যবসায়ে লাভবান হতে পারবেন।

একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা

যেকোন কাজে পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা ব্যক্তিজীবন হোক অথবা ক্ষুদ্র ব্যবসা হোক, সাফল্য পেতে হলে কার্যকর একটি পরিকল্পনা লাগবেই। ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ, ব্যবসা পরিচালনার ধরন, পরিচালন খরচ, ঝুঁকি, সম্ভাব্য লাভ ক্ষতি, সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলায় পদক্ষেপ সবকিছু একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা আকারে তৈরি করে সে অনুযায়ী ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।

একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা করা থাকলে ব্যবসা পরিচালনার প্রতিটা স্টেপ এ এটি আপনাকে সহায়তা করবে। ব্যবসার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনার পদক্ষেপ কি হবে সেটি পূর্বপরিকল্পনা করা থাকলে আপনার জন্য ব্যবসা ম্যানেজ করা সহজ হবে। এতে আপনার ব্যবসায়ের সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

প্রাথমিক বিনিয়োগ এবং রিজার্ভ বিনিয়োগ

বিনিয়োগ যেকোন ব্যবসার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোর বেশিরভাগই ব্যবসার কোন না কোন পর্যায়ে বিনিয়োগ সংকটে ভুগে থাকে। এই সংকট মাঝে মাঝে এমন রুপ নেয় যে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই সম্ভব হয়ে উঠেনা।

যেসব ব্যবসা নতুন বিনিয়োগের সংস্থান করতে পারে তারা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে। ব্যবসাতে বিভিন্ন কারণে নতুন বিনিয়োগ লাগতে পারে। যদি আপনি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ব্যবসার মোট বিনিয়োগের একটা অংশ রিজার্ভ বা আপদকালীন বিনিয়োগ হিসেবে রেখে দিতে পারেন। পরবর্তীতে এই বিনিয়োগ এর অংশ আপনার ব্যবসায়ের যেকোন সাময়িক সংকট বা নতুন বিনিয়োগের অভাব মেটাতে পারবে।

পরিচালন খরচ কমিয়ে রাখা

আপনাকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে ব্যবসায়ের আয়ের চেয়ে ব্যয় যদি বেশী হয়ে যায় কিংবা আয় অনুপাতে ব্যয় যদি বেশী হয়, তাহলে একটা না একটা সময় আপনার ব্যবসা টিকে থাকতে পারবেনা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ কারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে সাধারণত পুঁজি কম হয়ে থাকে।

আপনাকে ব্যবসা পরিচালনায় আপনার যে পরিমাণ খরচ হওয়ার কথা তার চেয়ে সম্ভব হলে কম খরচ করবেন। এতে আপনার ব্যবসায়ের লাভের পরিমাণ বেশী হবে যা আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসাকে বড় হতে সাহায্য করবে।

আয় ব্যয়ের পরিপূর্ণ হিসাব রাখা

আয় ব্যয় এর পুংখানুপুংখ হিসাব রাখা যেকোন ব্যবসার জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই হিসাব রাখার ব্যাপারটি ক্ষুদ্র ব্যবসা এর ক্ষেত্রে আরও বেশী গুরুত্বপূর্ণ কারণ এসব ব্যবসায়ে পুঁজি কম হয়ে থাকে। আয় ব্যয়ের সঠিক হিসাব না থাকলে, বা হিসাবে গরমিল এর কারণে যদি ব্যবসা একবার লোকসানে যায়, তাহলে সেখান থেকে ব্যাক করে আবার ব্যবসাকে দাড় করানো সম্ভব না ও হতে পারে।

সরাসরি ব্যবসা পরিচালনায় অংশগ্রহন করা

ক্ষুদ্র ব্যবসা লোকসানে যাওয়ার একটা বড় কারণ হচ্ছে মালিক নিজে ব্যবসা পরিচালনা না করে কর্মচারী দিয়ে পরিচালনা করা। আপনাকে এটা মানতে হবে যে, একজন মালিক হিসেবে ব্যবসা্যের কাজ আপনি যতটা সিরিয়াসলি করবেন আপনার কোন কর্মচারী তত সিরিয়াসলি করবেনা।

অন্যদিকে একজন মালিক হিসেবে ব্যবসায়ে আপনার নিয়মিত উপস্থিতি থাকলে কর্মচারীরাও অধিক মনোযোগ দিয়ে কাজ করবেন। এতে আপনার বিক্রয় বাড়বে, সর্বোপরি কর্মীর দায়িত্বে অবহেলাজনিত কারণে লোকসান এবং ব্যবসায়ের হিসাবে গড়মিল হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে। ফলশ্রুতিতে আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসাটি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

পরিশেষ

প্রতিটা ব্যবসাতে লাভ লস দুটোরই সম্ভাবনা থাকে। ক্ষুদ্র ব্যবসা এর ক্ষেত্রে ও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে অনাকাংখিত কোন দুর্বিপাক না হলে আপনার ব্যবসাটি লাভবান হবে না লস করবে সেটা অনেকাংশেই নির্ভর করে আপনার উপর। আপনি ব্যবসাটি কিভাবে পরিচালনা করছেন তার উপর। একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা কেমন করবে সেটা যদি ও বেশ কিছু ফ্যাক্টর এর উপর নির্ভর করে। কিন্তু এটা নিশ্চিত উপরে উল্লিখিত পাঁচটি প্রধান সাজেশন যদি আপনি অনুসরণ করে ব্যবসা পরিচালনা করেন, আপনার ব্যবসা অবশ্যই লাভবান হবে।

আরও পড়ুন- দৈনিক আয়ের ব্যবসা

FAQ

নতুন ব্যবসা শুরু করার পদক্ষেপ কি?

নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রধানত নিম্নের কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
১। প্রথমে কোন ব্যবসাটি করতে চান সেটি নির্ধারণ করুন।
২। যে ব্যবসাটি করবেন সেটি করতে গেলে আপনাকে কি কি কম্পিটিশন মোকাবেলা করতে হবে সেটা এনালাইসিস করবেন এবং এগুলো মোকাবেলা করে কিভাবে ব্যবসা চালাবেন সেই পরিকল্পনা ঠিক করে রাখবেন।
৩। আপনার ব্যবসাটি শুরু করার জন্য কত মূলধন লাগবে সেটা ঠিক করুন এবং মূলধন এর ব্যবস্থা করুন।
৪। ব্যবসায়ে যে কোন আপদকালিন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য রিজার্ভ বিনিয়োগ হিসেবে কিছু মূলধন এর ব্যবস্থা রাখবেন।
৫। এবার ব্যবসায়ের স্থান নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় লোকবল এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুন।
৬। আপনার ব্যবসাটি শুরু করুন।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।