ঘরোয়া ব্যবসা এর ৫টি সম্ভাবনাময় আইডিয়া
ঘরোয়া ব্যবসা খুঁজছেন যেগুলো ঘরে বসেই পরিচালনা করা সম্ভব ? বাড়তি অর্থ উপার্জনের জন্য শুরু করা ছোট ঘরোয়া ব্যবসা কোটি টাকার ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়েছে, এমন অনেক উদাহরন কিন্তু আছে। যারা সফল হয়েছেন, তারা আসলে কি ব্যবসা করেছেন এবং কিভাবে করেছেন? তাদের সাফল্যের রহস্যই বা কি ? জানার আগ্রহ থাকেলে এই লেখাটি আপনার জন্য। এই লেখাটিতে এমন কিছু ঘরোয়া ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেগুলো আপনার জীবনের গতিপথ ও বদলে দিতে পারে।
ঘরোয়া ব্যবসা এর ৫টি চমৎকার আইডিয়া
ব্যবসা যেভাবেই শুরু করেন না কেন, সেটা ঘরে বসে ব্যবসা হোক অথবা দোকানে বসে, আপনার প্রাথমিক পুঁজি, পরিকল্পনা, পরিশ্রম আর লেগে থাকার উপর নির্ভর করবে এর সফলতা। যদি আপনার অন্যান্য ঘরোয়া কাজের সাথে রুটিন করে ব্যবসাতে পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারেন, তাহলে ঘরোয়া ব্যবসা শুরু না করাই শ্রেয়। এটি আপনাকে বুঝতে হবে, যে কোন ব্যবসায়ের শুরুতে নিজে শ্রম না দিতে পারলে সেটা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
ঘরোয়া ব্যবসা হলেও এটি একটি ব্যবসা এবং আপনার উপার্জনের মাধ্যম, সেটা মাথায় থাকতে হবে। যদি এসমস্ত বিষয়গুলো ম্যানেজ করতে পারেন, তাহলে পরিকল্পনা মাফিক ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
ঘরে বসেই কম পূঁজিতে লাভজনক ব্যবসা সমূহের একটি তালিকা দেয়া হলো। বেশ কিছু ব্যবসা রয়েছে, তাই বাছাই করে ৫টি ঘরোয়া ব্যবসা এর তালিকা দেয়া হলো।
- বেবি সিটিং
- টিউশন প্রোভাইডার সার্ভিস
- ক্যাটারিং সার্ভিস
- হোম টেইলারিং সার্ভিস
- বিউটি কেয়ার/পার্লার
উপরের ৫টি ঘরোয়া ব্যবসা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যবসার জনপ্রিয়তা, ঝুঁকিমুক্ত ব্যবসা, সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট এর পরিমাণ, লাভের পরিমাণ এবং অপেক্ষাকৃত কম পুঁজির বিষয় সমূহ বিবেচনা করা হয়েছে।
বেবি সিটিং সার্ভিস
এটি সম্পূর্ণ কমার্শিয়াল আকারে যেমন শুরু করা যায়, তেমনি ঘরোয়া ভাবে ও শুরু করতে পারেন। বেবি সিটিং হল বাবা মায়ের স্বল্প সময়ের অনুপস্থিতিতে বাচ্চার দেখাশোনার কাজ পরিচালনা করা। বিশ্বের অনেক দেশে এটি অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্যবসা যা পেশাদার বেবি সিটার দিয়ে পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশে এখনো এটি বহুল প্রচলিত ব্যবসা হয়ে উঠেনি। তবে কর্মজীবী বাবা মায়ের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সহসাই এটি প্রচলিত ব্যবসা হয়ে উঠতে পারে। এটি একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় ঘরোয়া ব্যবসা।
আপনি প্রাথমিকভাবে ঘরে বসেই আপনার বাসা থেকেই এটি শুরু করতে পারেন। আপনারা আশেপাশের বাসা এবং আবাসিক এলাকা গুলোতে আপনার এই সার্ভিস এর প্রচারণা চালান। প্রথমদিকে ২/৩ টি বাচ্চার দেখাশোনার কাজ দিয়ে শুরু হলেও আপনার সার্ভিস ভালো হলে ধীরে ধীরে ব্যবসাটি বড় হয়ে উঠবে।
ইউটিউব বা গুগল করে পেশাদার বেবি সিটার দের কাজ গুলো সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে এটি শুরু করতে পারেন। এটি একটি নতুন ব্যবসার আইডিয়া। একইসাথে এটি একটি অন্যতম কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা।
টিউশন প্রোভাইডার সার্ভিস
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই এটি আরেকটি জনপ্রিয় ব্যবসা। এই ব্যবসার জন্য আপনার তেমন বড় কোন সেটআপ দরকার হয়না। আপনার কমিউনিকেশন স্কিল ভালো থাকলে, সংশ্লিষ্ট সেক্টরে চেনাজানা থাকলে আপনি আপনার ঘর থেকেও এটি পরিচালনা করতে পারেন, তাই এটিকে ঘরোয়া ব্যবসা হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। এটি একটি অন্যতম ঝুঁকিমুক্ত ব্যবসা।
প্রথমে আপনার আশেপাশের তিন চারটি বড় আবাসিক এলাকায় আপনার এজেন্সির প্রচারণা চালাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ পড়ুয়া ভালো ছাত্র যারা টিউশনি করে বা করার ইচ্ছা রাখে, তাদের সাথে যোগাযোগ করে ডাটাবেস তৈরি করেন।
একটা লিখিত চুক্তিপত্র এবং অন্যান্য ডকুমেন্টস এর একটা ফরমেট রেডি রাখবেন। এবার আপনার কাজ যেসব অভিভাবক হোম টিউটর খুঁজছেন আর যারা টিউটর হিসেবে কাজ করতে চান তাদের মাঝে যোগাযোগ স্থাপন করিয়ে দেয়া।
এক্ষেত্রে অবশ্যই অভিভাবকের চাহিদা এবং টিউটরের সংশ্লিষ্ট যোগ্যতার মধ্যে সামঞ্জস্য করে টিউটর সরবরাহ করার বিষয় টি মাথায় রাখতে হবে। প্রথম দিকে আপনাকে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী দের টার্গেট হিসেবে রাখতে হবে কারন এই লেভেলে আপনি কম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেশী কাজ পাবেন।
একবার কিছু ভালো টিউটর দিতে পারলে আপনার এজেন্সির নামডাক ছড়িয়ে পড়বে। তখন অন্য ভালো হোম টিউটর এবং অভিভাবকরাই নিজ প্রয়োজনে আপনার এজেন্সি কে খুঁজে নিবে।
ক্যাটারিং সার্ভিস
এটিকে সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ঘরোয়া ব্যবসা বলা যায় নির্ধিদ্বায়। এই ব্যবসায় ক্লায়েন্ট কে মাসিক, সাপ্তাহিক বা দৈনিক অর্ডার এর ভিত্তিতে খাবার সরবরাহ করতে হয়। ক্যাটারিং ব্যবসায়ে ক্লায়েন্ট এর সাথে যোগাযোগ রক্ষা এবং তাদের খাবার সরবরাহের জন্য বাইরেও লোকবল রেখে পরিচালনা করতে হয়।
কিন্তু খাবার তৈরি ও এ সম্পর্কিত অন্য কাজগুলির অধিকাংশই ঘর থেকে পরিচালনা করা যায় বিধায় এটি ঘরোয়া ব্যবসা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই ব্যবসাটি মোটামুটি ভালোভাবে শুরু করতে চাইলে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে বিনিয়োগে শুরু করতে পারেন। ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া এর মধ্যে এটি একটি জনপ্রিয় ব্যবসা।
ব্যবসার শুরুতে আপনার পরিচিতজনদের সহযোগীতায় প্রথম দিকে কিছু অফিসে দুপুরের খাবার সরবরাহের কন্ট্রাক্ট যোগাড় করুন। এরকম ৮-১০ টি অফিসে দুপুরের খাবার সরবরাহের কন্টাক্ট নিতে পারলে আপনার ব্যবসা টি দ্রুত লাভজনক হয়ে উঠবে। এছাড়াও পাশাপাশি আপনার আশেপাশের আবাসিক এলাকাগুলোতে ছোটোখাটো প্রোগ্রাম এর খাবার সরবরাহের কাজ নেয়ার চেস্টা করুন।
জম্মদিন, গায়ে হলুদ, আকিকা, আকদ্ ইত্যাদি প্রোগ্রামে অনেকেই ৫০-৬০ জনের খাবার বাসায় না বানিয়ে বাহির থেকে অর্ডার করেন। প্রথমদিকে ছোটোখাটো কাজ নিতে হবে। কারণ যত অধিক সংখ্যক লোকের খাবার সরবরাহ করবেন তত লোকবল এবং সময় বেশী লাগবে।
এসব কিছু প্রথমদিকে ম্যানেজ করা কস্টকর। এতে খাবারের গুনগত মান এবং সঠিক সময়ে খাবার সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে। যার ফলে আপনার সার্ভিস এ নেগেটিভ রিভিউ আসবে যার ফলে নতুন ক্লায়েন্ট তৈরিতে সমস্যা হবে। ঘরোয়া ব্যবসা হিসেবে ক্যাটারিং সার্ভিস বড় আয়ের উৎস হতে পারে যদি গুনগত মান, উপযুক্ত দাম এবং সঠিক সময়ে সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
হোম টেইলারিং সার্ভিস
এটি আরেকটি অন্যতম জনপ্রিয় ঘরোয়া ব্যবসা এবং ঝুঁকিমুক্ত ব্যবসা ও বটে। আপনি যদি সেলাই এর কাজটি ভালোভাবে জানেন, তাহলে আপনার এই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে হোম টেইলারিং সার্ভিস শুরু করতে পারেন। একটি সেলাই মেশিন এবং আনুষংগিক জিনিসপত্র কিনে আপনার বাসা থেকেই এই ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন।
অন্য যেকোনো ব্যবসার মতোই এখানেও আপনার আশেপাশের প্রতিবেশী, বন্ধু, পরিচিতজন, আবাসিক এলাকায় আপনার সার্ভিস এর প্রচার চালাতে হবে। প্রয়োজনে কিছু লিফলেট চাপাতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে ও প্রচার করতে পারেন।
আপনার কাজের মান ভালো হলে কাজের সুনাম চারদকে ছড়িয়ে পড়বেই। এতে আপনি আরো নতুন নতুন ক্রেতা পাবেন এবং আপনার ব্যবসা ও বড় হয়ে উঠবে। কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা এর মধ্যে এটি একটি অন্যতম ঘরোয়া ব্যবসা।
বিউটি কেয়ার
এই জনপ্রিয় ঘরোয়া ব্যবসা টি অন্যতম ঝুঁকিমক্ত ব্যবসা। প্রাথমিকভাবে আপনার বাসার যেকোনো একটি অতিরিক্ত রুমকেই আপনার ব্যবসায়িক কর্মক্ষেত্র বানিয়ে নিতে পারেন। পরে আপনার কাজের পরিধি ও ক্লায়েন্ট বাড়লে বড় পরিসরে পুরোপুরি বানিজ্যিক ভাবে এই ব্যবসা করতে পারেন।
যদি আপনি নিজে কাজ জানেন, তাহলে এই ঘরোয়া ব্যবসা শুরু করা এবং বড় করে তোলা অপেক্ষাকৃত সহজ। কাজ না জানলেও ক্ষতি নেই, আপনি অন্য কাউকে নিয়োগ দিয়েও এটা শুরু করতে পারেন। এতে প্রাথমিক বিনিয়োগ ও অনেক কম লাগে এবং ক্লায়েন্ট পাওয়া ও মোটামুটি সহজ। আপনার কাজের মান ভালো এমনিতেই ক্রেতাদের আস্থা বাড়বে এবং আপনি রিপিট কাস্টমার পাবেন।
যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে এবং এটিকে সফল করে তুলতে একটি ভালো পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাথে অতি অবশ্যই দরকার আপনার আত্নবিশ্বাস এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা। এসব কিছু যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে ছোট পরিসরে স্বল্প বিনিয়োগে আপনি শুরু করতে পারেন আপনার ঘরোয়া ব্যবসা।
যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে এবং এটিকে সফল করে তুলতে একটি ভালো পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাথে অতি অবশ্যই দরকার আপনার আত্নবিশ্বাস এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা। এসব কিছু যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে ছোট পরিসরে স্বল্প বিনিয়োগে আপনি শুরু করতে পারেন আপনার ঘরোয়া ব্যবসা।
ঘরোয়া ব্যবসা শুরু করতে আপনার করণীয়
যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে এবং এটিকে সফল করে তুলতে একটি ভালো পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাথে অতি অবশ্যই দরকার আপনার আত্নবিশ্বাস এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা। এসব কিছু যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে ছোট পরিসরে স্বল্প বিনিয়োগে আপনি শুরু করতে পারেন আপনার ঘরোয়া ব্যবসা।
আপনার পরিশ্রম এবং সঠিক পরিকল্পনায় আজকের কম পুজির ঘরোয়া ব্যবসা এক সময় হয়ে উঠতে পারে কোটি টাকার ব্যবসা। হয়ে উঠতে পারে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস।
এরকম আরও কিছু ব্যবসার আইডিয়া পেতে পারেন এখানে।
১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া
FAQ
মুলত হোম বিজনেস বা ঘরোয়া ব্যবসা হল বাসা থেকে পরিচালিত স্বল্প পুঁজির ব্যবসা। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনধিক ৫ জন কর্মী দ্বারা মালিকের সরাসরি নির্দেশনায় পরিচালিত হয়।
অনলাইনে খাবারের ব্যবসা, অনলাইন বা পাড়াভিত্তিক কাপড়ের ব্যবসা, হোম টিউশন সার্ভিস, সবজি বা সিজনাল ফলের ব্যবসা, বাসাবাড়িতে দুধ সরবরাহের ব্যবসা ইত্যাদি।
ঘরে বসে যে ব্যবসা করা হয় ঘরোয়া ব্যবসা বলে। এই ধরনের ব্যবসা সাধারনত অল্প পুঁজির এবং কম লোকবল দিয়ে পরিচালিত হয়। ঘরোয়া ব্যবসা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোট এরিয়ার মধ্যে পরিচালিত হয়।
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে মহিলার এগিয়ে আসছেন ব্যবসায়, এটা একটা ভালো দিক। বিশেষ করে ঘরোয়া ব্যবসা গুলোতে নারীর অংশগ্রহন উল্লেখযোগ্য এবং এদের সাফল্যের হার ও আশা জাগানিয়া। তবে যারা ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন কিন্তু ঘরে বসে কি ব্যবসা করতে পারবেন বুঝতে পারছেন না, তারা নিচে উল্লিখিত কিছু সহজ ঘরোয়া ব্যবসা দেখতে পারেন।
১। অনলাইনে মৌসুমী ফলের ব্যবসা
২। ভার্চুয়াল ফ্যাশন মল
৩।হোমমেড মসলার ব্যবসা
৪।হোমমেড আচার এর ব্যবসা
৫। হোমমেড ফ্রোজেন ফুড এর ব্যবসা
ঘরে বসে করা যায় এমন কিছু জনপ্রিয় ক্ষুদ্র ব্যবসা নিম্নে দেয়া হল।
১। হোমমেড স্নাক্স আইটেম এর ব্যবসা।
২। বুটিক/বাটিক পার্লার।
৩। রান্না প্রশিক্ষন।
৪। অনলাইন টিউটোরিয়াল।
৫। ছাদবাগান/নার্সারি এর ব্যবসা।
টাকা ছাড়া ব্যবসা মানে বিনা পুঁজিতে ব্যবসা। বিনা পুঁজিতে সাধারণত সার্ভিস টাইপ ব্যবসা গুলো করা যায়। এসব ব্যবসা করতে গেলে নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার দক্ষতা থাকা আবশ্যক।