সময়ের প্রেক্ষাপটে ৫টি লাভজনক ষ্টক ব্যবসার আইডিয়া

বিশ্বজুড়ে পণ্য স্টক করে তা পরে বিক্রি করার একটি প্রচলন রয়েছে। দেশভেদে পণ্য ও সিজন ভিন্ন হলেও এর প্রধান বিষয়গুলো একই। যেমন কম মূল্যে স্টক করে, বেশি মূল্যে বিক্রয়, পণ্য রক্ষনাবেক্ষন ইত্যাদি। আজ আমারা আলোচনা করবো, সময়ের প্রেক্ষাপটে ৫টি লাভজনক স্টক ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে।
ধান
বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান। বাংলাদেশে সব মৌসুমে, সব এলাকায়, সব শ্রেণীর মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। তাই ধানের প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশে সবসময়ই সমান।
কৃষকেরা সাধারণত বোরো ও আমন মৌসুমে ধান উৎপাদন করেন। বোরো মৌসুমে এপ্রিল-মে মাসে ধান কাটা হয়, যা সংরক্ষণ করে আমন মৌসুমে সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে বিক্রি করে মুনাফা করা যায়।
বছরের এক সময় উৎপাদন হওয়া ধান যথেষ্ট পরিমাণে স্টক করে রাখলে, পরবর্তীতে তা ভালো দামে বিক্রি করে মুনাফা করা সম্ভব। উৎপাদন মৌসুমে ধান কিনে শুকনো ও পরিষ্কার স্থানে সংরক্ষণ করলে পচনশীলতা কমে। ধান কে দীর্ঘ সময় ভালো রাখাই এই লাভজনক স্টক ব্যবসার আইডিয়া সফল করার প্রধান চ্যালেঞ্জ। গুদামের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে পোকামাকড় ও রোগবালাই থেকে রক্ষা করা খুব জরুরি। বর্তমানে নানা ধরনের ধানের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নানা রকম উচ্চফলনশীল ধান। এই ধরনের জাতের ধান চাষ করে কৃষকরা যেমন একদিকে তাদের আয় বৃদ্ধি করতে পারেন, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা সফল ও লাভবান স্টক ব্যবসার আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে পারেন।
মধু
আদিকাল থেকেই মানুষ নানা কারণে মধু গ্রহণ করে। নানারকম অসুখ-বিসুখ সারাতে যেমন মধুর জুড়ি নেই, তেমনি খাবার মিষ্টি করার জন্য চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবেও মধুর নাম উপরের দিকেই থাকবে। আর এই মধু নিয়েই লাভজনক স্টক ব্যবসার আইডিয়া করলে তা থেকে যথেষ্ট পরিমাণে আয় করা সম্ভব। বর্তমান যুগে মানুষ আরও স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠছে। এবং তাদের ডায়েট প্ল্যান এর একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ভালো মানের মধু। সরাসরি মধু খাওয়া থেকে শুরু করে নানান ধরনের রেসিপি তৈরিতে মধুর ব্যবহার গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই মধু স্টক করে পরবর্তীতে ভালো পরিমান লাভে বিক্রি করার যথেষ্ট সুযোগ আছে।
দেশের নানা অঞ্চলে নানা ধরনের ফুলের মধু বেশি সংগ্রহ করা হয়। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে মধু উৎপাদন বেশি হয়। সঠিক মৌসুমে এই মধু সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা জরুরি। মধু সংগ্রহের পর অন্ধকার ও শীতল স্থানে সংরক্ষণ করলে তার গুণাগুণ বজায় থাকে। এবং এই গুণগতমান বজায় রাখাই মধুর ক্ষেত্রে লাভজনক স্টক ব্যবসার আইডিয়া সফল করার অন্যতম রহস্য। মধু থেকে প্রসাধনী, ওষুধ ও খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা করা যায়। তবে শুধুমাত্র মধুর স্টক করে রেখে, সরাসরি তা বিক্রি করেও তা থেকে লাভ করার সুযোগ কম নয়।
আরও পড়ুন- ছোট ব্যবসার আইডিয়া
মাছ
কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি। বাঙালির জীবনে যেমন ভাতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য এবং সেই কারণে ধানের স্টক ব্যবসার আইডিয়া একটি লাভজনক আইডিয়া, ঠিক একইভাবে সেই ভাতের সাথে বাঙালির প্রিয় জিনিস মাছের স্টক ব্যবসাও কম লাভজনক নয়। শুধু প্রিয় বলেই না, গ্রাম বাংলা থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের এর প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর অন্যতম উৎস ছোট বড়, নানা রকম মাছ। যদিও মাছ একটি পচনশীল খাদ্য, তবে সঠিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে স্টক করা সম্ভব। এবং এই মাছই স্টক করে লাভবান ব্যবসার আইডিয়াগুলোর মধ্যে একটি।
পুকুরে মাছ চাষ করে নির্দিষ্ট আকারে পৌঁছানোর পর হিমাগারে সংরক্ষণ করে দাম বাড়লে বিক্রি করা যায়। নদী এবং সামুদ্রিক মাছও আছে এই তালিকায়। তবে অনেক ব্যবসায়ী আছেন নিজেই পুকুরে মাছের চাষ করেন এবং পরবর্তীতে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে এই মাছ স্টক করে বেশি দামে বিক্রি করেন। তাপমাত্রা ও স্যানিটেশন রক্ষা করে মাছের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, এই ধরনের স্টক ব্যবসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্টকে থাকা মাছের স্বাস্থ্য ভালো অবস্থায় তা বিভিন্ন ধরনের বাজারে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে মোটা অংকের মুনাফা করা সম্ভব।
আলু
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত কোন সবজি যদি থেকে থাকে তা হলো আলু। এদেশের মানুষ আলু দিয়ে নানান ধরনের রেসিপি তৈরি করে থাকে। সেসব রেসিপির বৈচিত্র এতই বেশি যে বাংলার ঘরে ঘরে প্রায় প্রতি বেলায় আলুর প্রয়োজন পড়ে। শীতকালে নতুন আলু পাওয়া যায়, এবং এর স্বাদ অসাধারন। যা সংরক্ষণ করে গ্রীষ্মকালে বিক্রি করে মুনাফা করা যায়। আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার ব্যবহার করে পচনশীলতা রোধ করতে হয়।
আলু থেকে চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পাউডার ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা করা যায়। তবে সরাসরি শুধুমাত্র কাঁচা আলু বিক্রি করার বাজারও কম নয়। তাই অন্যতম লাভবান স্টক ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে আলুর ব্যবসার কথা বলা যেতেই পারে। আলু সংরক্ষণের পূর্বে ভালোভাবে শুকিয়ে নেয়া ও হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করার সময় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লবন
এখন এমন একটি ষ্টক ব্যবসার আইডিয়া এর কথা বলব যা ছাড়া বলতে গেলে প্রায় কোন ধরণের রান্নাই সম্ভব না। শুধু রান্না নয় বরং পাশাপাশি আরো নানান ধরনের কাজে এই পণ্যটির ব্যবহার আছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন অন্যতম স্টক করে লাভবান ব্যবসা দাঁড় করানোর আইডিয়া হিসাবে সেই পণ্যটিকে মাথায় রেখে কিছু পরিকল্পনা করা যেতেই পারে। এবং সেই পণ্যটি হলো লবণ।
লবন একটি অপরিহার্য খাদ্য উপাদান, যা সারা বছরই প্রয়োজন হয়। বেশি পরিমাণে লবন কিনে সংরক্ষণ করে, দাম বাড়লে বিক্রি করা যায়। লবন সংরক্ষণ করে তা আর্দ্রতা ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা করা হলো প্রধান চ্যালেঞ্জ। ভালো পরিমাণে লবণ স্টক করে বছরের বাকি সময় জুড়ে লাভে তা বিক্রি করা একটি ভালো আইডিয়া।
শেষকথা
যেকোনো পণ্য স্টক করে তা থেকে লাভ করার লক্ষ্যে যে ষ্টক ব্যবসার আইডিয়া গুলো নিয়ে আমরা ভাবি, সেই সবকয়টির ক্ষেত্রেই পণ্য সংরক্ষণের কিছু জিনিস আমাদের মাথায় রাখা উচিত। যার মধ্যে প্রথমেই আছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। গুদাম বা সংরক্ষণস্থল সবসময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে, যাতে পোকামাকড় ও রোগবালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সাথে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা অন্যতম জরুরি একটি ধাপ। প্রতিটি পণ্যের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা প্রয়োজন। তাই সংরক্ষণস্থলের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
বিষয়ে যথেষ্ট জানাশোনা থাকতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আর পণ্যের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত প্যাকেজিং ব্যবহার করতে হবে, যাতে পচনশীলতা কমে এবং গুণাগুণ বজায় থাকে। সঠিক প্যাকেজিংয়ের অভাবে সময়ের সাথে পণ্যের গুণগতমান কমতে থাকে। এবং যত্নের সাথে স্টকের পণ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যাতে যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত সমাধান করা যায়। এভাবেই প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস মাথায় রেখে, নিজের বিনিয়োগের পরিমাণ বুঝে, সঠিক পণ্য স্টক করে ব্যবসা করলে তা থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি।