মাত্র ১০০০ টাকায় ব্যবসা শুরু করা সম্ভব! কিভাবে জেনে নিন।

অনেকেই ভাবেন ব্যবসা শুরু করতে হলেই বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করতে হবে। নানা রকম লিংক থাকতে হবে। একই সাথে প্রয়োজন পড়বে অনেক কিছু৷ আর ব্যবসা মানেই যেন একটি ফিজিক্যাল দোকান। কিন্তু আধুনিক এই যুগে আপনি চাইলেই নিজের মতো করে কম বিনিয়োগেও ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এমনকি মাত্র ১০০০ টাকা বিনিয়োগ করেও আপনার নিজের একটি ব্যবসা শুরু করা সম্ভব৷ আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ১০০০ টাকায় কি ব্যবসা করা যায়?
আজ এমনই কিছু ব্যবসার নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলব যা শুধুমাত্র ১০০০ টাকা বিনিয়োগে আপনি আজই শুরু করতে পারেন।
রেডি মিক্স চা বিক্রি
১০০০ টাকায় কি ব্যবসা করা যায়? এ প্রশ্নের উত্তরে দুর্দান্ত একটি আইডিয়া হতে পারে রেডি মিক্স চা বিক্রি।
আপনি আপনার নিকটস্থ মুদির দোকান থেকে চা পাতা, চিনি এবং দুধ কিনে এনে এই সব কিছু সুন্দর মতো পাউডার করবেন এবং পরিমাণ মতো অনুপাতে মিলিয়ে নিবেন। এবার কিছু ছোট ছোট সাইজের জিপ লকড প্লাস্টিকের প্যাকেট কিনে নিলেই মাত্র ১০০০ টাকায় একটি ব্যবসা শুরু করার জন্য উদ্যোক্তা প্রস্তুত। এই রেডি মিক্স পাতা ছোট ছোট প্লাস্টিকের জিপ লক প্যাকেটে ভরে তা অনলাইনে অথবা অফলাইনেও বিক্রি করা সম্ভব। অনেকেই আছেন চা ছাড়া এক বেলাও চলতে পারেন না। কিন্তু চা বানিয়ে সবসময় সাথে নিয়ে ঘোরাফেরা করাটা সম্ভব নয়। তাছাড়া সব সময় স্থানে চা বানিয়ে খেয়ে ফেলাটাও কোন সমাধান হতে পারেনা।
একই সাথে স্বাস্থ্য সচেতন লোকজন বাইরের বানানো চা খেতে পছন্দ করেন না৷ এবং এরাই হলো এই মাত্র ১০০০ টাকায় শুরু করা ব্যবসার মূল ক্রেতা৷ এই ছোট ছোট প্যাকেটগুলো সাথে থাকলে মানুষ ইউনিভার্সিটি, অফিস অথবা বাইরে ও যেকোন স্থানে নিজের সাথে হট ওয়াটার বোতল থাকা পানি অথবা যেকোন স্থান থেকে বিশুদ্ধ গরম পানি পেলেই শুধুমাত্র এই রেডি মিক্স চা-পাতা মিশিয়ে যেকোনো সময় পান করতে পারবেন। ব্যক্তি পর্যায়ের প্রোমোশনের জন্য নিজের প্রতিষ্ঠান অথবা কর্মক্ষেত্রে এই পণ্যটি কিছুদিন অন্যদের সামনে পান করতে পারেন এবং তাদেরকে অফার করতে পারেন। এ ধরনের ছোট সাইজের ব্যবসা পরিচিতদের মধ্যেই প্রথমে প্রচার ও প্রসার করতে হয়।
আরও পড়ুন- স্মার্ট ব্যবসা আইডিয়া
ঘরোয়া আচার বিক্রি
১০০০ টাকায় কি ব্যবসা করা যায়? এক্ষেত্রে আর একটি চমৎকার আইডিয়া হতে পারে ঘরোয়া আচার বিক্রি। মৌসুমী ফল যেমন কাঁচা আম, আমড়া, জলপাই ইত্যাদি কিন্ প্রয়োজনীয় তেল মসলা সংগ্রহ করে, তা দিয়ে আচার তৈরি করে বিক্রি করা সম্ভব। এই মূল আইটেমগুলোর সাথে আর যা প্রয়োজন তা হলো কিছু প্লাস্টিকের ছোট ছোট কৌটা। ছোট কৌটায় কম পরিমাণে বিক্রি করাই শ্রেয়। কারণ ঘরোয়া আচার মানুষ এই কারণেই চায় যাতে সেখানে কোন ধরনের কেমিক্যাল অথবা প্রিজারভেটিভ না থাকে।
সবখানে এরকম আচারের চাহিদা থাকলেও একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে টার্গেট করা যেতে পারে। যেমন ধরুন বেশিরভাগ আবাসিক যেসব ছেলে মেয়েরা থাকে তারা অধিকাংশই কিন্তু ঘরের খাবারের স্বাদ মিস করে৷ একই সাথে হলের ক্যান্টিন বা ডাইনিং এর খাবারের স্বাদ অনেকেরই ভালো লাগেনা। সাথে একটু আচার পেলে খাওয়ার রুচি ফিরে। তাই অনেকেই ঘরোয়া স্বাদের আচারের খোঁজ করেন। আবাসিক হল আছে এমন এলাকাগুলোতে তাই এই ঘরোয়া আচার ভালো পরিমাণে বিক্রি করা সম্ভব। ১০০০ টাকা দিয়ে শুরু করা ব্যবসা বড় হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা খুবই জরুরী। যে সকল সন্তানরা পড়াশোনা অথবা কাজ নিয়ে ব্যস্ত তারা কিন্তু চাইলেই তাদের ঘরে মা অথবা বড় বোন, যারা হয়তো বা পরিবারের কাজের বাইরে অন্য কোন কাজের সাথে সংযুক্ত নন, তাদের সাথে নিয়ে এ ব্যবসাটি করতে পারেন। তাহলে তা একইসাথে আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং পরিবারের সকলের জন্য মানসিকভাবেও আনন্দ নিয়ে আসবে।
নকশী কাঁথার ওয়ালমেট
১০০০ টাকায় কি ব্যবসা করা যায়? উপরের ২টি ব্যবসার আইডিয়া দেখে আপনার এতক্ষনে আইডিয়া হওয়ার কথা যে ১০০০ টাকায় ও ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। এরকম বাজেটের মধ্যে করা যায় এমন আর একটি ব্যবসার কথা বলছি।
আজকাল মানুষ অনেক ছোট ছোট সাইজের সুন্দর ওয়ালমেট দিয়ে ঘর সাজিয়ে থাকেন। গ্রাম থেকে বা হস্তশিল্পীদের কাছ থেকে কম মূল্যে নকশী কাথার ছোট ছোট টুকরো কিনে তা যদি কেউ ফ্রেম করে নেয় তাহলে কিন্তু নকশী কাঁথার ওয়ালমেট এর একটি ব্যবসা মাত্র ১০০০ টাকার ভেতর শুরু করা সম্ভব। প্রয়োজনে ইন্টারনেট থেকে ভিন্নধর্মী কিছু ডিজাইন সংগ্রহ করে তা যদি এই হস্তশিল্পীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। একই সাথে একটি অনলাইন পেইজের মাধ্যমে এই নকশী কাঁথার ওয়ালমেট রুচিশীল পণ্য হিসেবে প্রমোশন করাও জরুরী।
তাছাড়া এটি যে উপহার হিসেবে একটি ভালো আইটেম হতে পারে ক্রেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। মাত্র ১০০০ টাকায় শুরু করার জন্য একটি ব্যবসা হিসেবে তাই স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে যে কোন কেউ নকশী কাঁথার ওয়ালমেটের কথা ভাবতেই পারে। আর সেক্ষেত্রে এটি শুধু যে ব্যবসা হয়ে উঠবে তাই নয় একই সাথে নিজের দেশের শিল্প ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরারও একটি উপায় পাওয়া যাবে। একটু বড় হলে ধীরে ধীরে অনলাইন প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে দেশের বাইরে এই পণ্যগুলো পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারলে, আপনার ১০০০ টাকায় শুরু করা ব্যবসা একদিন বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যেতেই পারে।
ভালো মানের নারকেল তেল বিক্রি
১০০০ টাকায় কি ব্যবসা করা যায়? এখন আরেকটি চমৎকার আইডিয়া শেয়ার করছি।
মাত্র ১০০০ টাকায় তেলের ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নারকেল তেলের ব্যবসা হতে পারে একটি দারুন আইডিয়া। কারণ মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ করে বেশ ভালো পরিমাণে তেল সংগ্রহ করা সম্ভব। এরপর ২০০ টাকা খরচ হতে পারে প্লাস্টিকের ছোট ছোট বোতল কেনার জন্য। পাইকারিতে কেনা এই তেল এরপর ছোট ছোট বোতলে আলাদা করে এলাকার ভেতর অথবা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিক্রি করলে তা থেকে লাভ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে যেই বিষয়টি মূলত মনে রাখতে হবে তা হল নারকেল তেলটি যেন অর্গানিক হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের গ্রাম বা পরিচিত কারো এলাকা থেকে আসা একদম খাঁটি নারিকেল তেল সংগ্রহ করতে হবে। কারণ আজকাল অনলাইনে এবং আশেপাশের দোকানে অনেক রকম নারকেল তেলই পাওয়া যায়। আপনার তেল কতখানি খাঁটি সে নির্ভরতা প্রথমেই আশেপাশের প্রতিবেশী এবং আত্মীয় স্বজনের ভেতর দিতে পারলে, তাদের মাধ্যমেই দেখবেন আপনার এই পণ্যের তার নতুন নতুন ক্রেতা তৈরি হচ্ছে। আর আপনার ১০০০ টাকায় শুরু করা ব্যবসা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকছে।
উপহারের প্যাকেট বিক্রি
১০০০ টাকায় কি ব্যবসা করা যায়? উপরে ৪টি চমৎকার ব্যবসার আইডিয়া দেয়া হয়েছে যেগুলো আপনি ১০০০ টাকায় শুরু করতে পারেন। আজকের ব্লগ এ ১০০০ টাকায় করা যায় এমন ব্যবসার মধ্যে সর্বশেষ একটি আইডিয়া শেয়ার করা হল। ব্যবসাটি হল উপহারের প্যাকেট বিক্রি।
উপহারের জন্য প্যাকেট বিক্রি করা ১০০০ টাকার মধ্যে একটি খুবই স্মার্ট ব্যবসা হতে পারে। আমরা কিন্তু সবসময় শুধুমাত্র ব্রান্ডেড দোকান থেকেই যে মানুষকে উপহার কিনে দেই তা নয়। নানান সময়ে নানা ধরনের বাজেটের ভিতরে উপহার কেনা হয়। তাছাড়া দেখা যায় মানুষ কোথাও বেড়াতে গেলে দেশে বা বিদেশে বিভিন্ন ধরনের শপিং করেন। যা ফিরে এসে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলানো হয়। কিন্তু এ সকল উপহার তো আর হাতে হাতে ধরিয়ে দেয়া যায় না৷ একই সাথে পলিথিন বা কাগজের ব্যাগের ভিতর দেয়াটাও সব সময় দৃষ্টিনন্দন নয়। এক্ষেত্রে একটি দারুণ সমাধান হতে পারে যদি সুন্দর সুন্দর প্রিন্টের কিছু মোটা কাগজের উপহারের ব্যাগ পাওয়া যায়। পুরান ঢাকার দিক থেকে পাইকারি হারে এই ধরনের প্যাকেট কিনে এনে আপনি অনলাইনে বা অফলাইনে বিক্রি করতে পারেন৷ এমনকি চাইলে এলাকার মধ্যে উপহারের ব্যাগের একটি ছোট ভ্রাম্যমান দোকানও দিতে পারেন৷ একটি বড় ব্যাগের ভিতর উপহারের ছোট ছোট ব্যাগগুলো ভাঁজ করে নিয়ে, সাথে নিজের বসার জন্য বাড়ি থেকে একটি টুল বা মোড়া নিয়ে নিন৷ হয়ে গেল ১০০০ টাকার মধ্যে শুরু করার জন্য একটি ছোট্ট কিন্তু সুন্দর ব্যবসা।
শেষ কথা
১০০০ টাকায় কি ব্যবসা করা যায়? এ ব্লগেই আপনি ইতিমধ্যে ৫টি ব্যবসার আইডিয়া পেয়ে গেছেন যেগুলো ১০০০ টাকায় ও আপনি শুরু করতে পারেন। একটু খোঁজ করলে এ ধরনের আরও অনেক ব্যবসার আইডিয়া পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারলেন কিন্তু ব্যবসাটি সফল করতে প্রয়োজন আপনার নিজের সঠিক পরিকল্পনা, চেষ্টা, পরিশ্রম এবং লেগে থাকার মানসিকতা।