৫টি সেরা লস ছাড়া ব্যবসা আইডিয়া

লস ছাড়া ব্যবসা

লস ছাড়া ব্যবসা এর প্রতি সাধারণত তাদের আগ্রহ বেশী থাকে যারা কম পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করতে নামেন এবং পুঁজি হারানোর ঝুঁকি নিতে চান না। যদিও লস ছাড়া বা ঝুঁকি ছাড়া ব্যবসা নেই তারপরও এমন কিছু ব্যবসা রয়েছে যেগুলোতে লসের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অর্থাৎ আপনি যদি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে বিনিয়োগের ঝুঁকিগুলো বিবেচনায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করেন তাহলে আপনার ব্যবসাতে লস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে।

যারা এই ধরনের ঝুকিমুক্ত বা রিস্ক ফ্রি ব্যবসা খুঁজছেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের উপকারে আসবে আশা করছি।

৫টি সেরা লস ছাড়া ব্যবসা এর তালিকা

সাধারণত সেবামুলক ও কম পুঁজির ব্যবসাতে লস হওয়ার সম্ভাবনা কম অথবা শুন্য। এটা খুবই স্বাভাবিক যে আপনার বিনিয়োগ যত বেশী আপনার ব্যবসায়ের ঝুঁকি ও ততটাই বেশী। ঝুঁকি মানেই লসের সম্ভাবনা। নিম্নে যেসব ব্যবসার নাম দেয়া হল সবদিক বিবেচনায় সেই ব্যবসাগুলো ২০২৩ এর লস ছাড়া ব্যবসা এর সেরা তালিকায় রাখা যায়। আপনি যদি ঝুঁকি ছাড়া ব্যবসা করতে চান, তাহলে নিচের ব্যবসা গুলো থেকে যেকোন একটি বেছে নিতে পারেন।

  1. টিউশন প্রভাইডার ব্যবসা।
  2. কোচিং সেন্টার।
  3. মোবাইল টপ-আপ এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসা।
  4. রুম শেয়ারিং ব্যবসা।
  5. রিয়েল এস্টেট ব্রোকার।

টিউশন প্রভাইডার ব্যবসা

আজকাল অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে প্রাইভেটলি পড়াতে ভালো শিক্ষক এর খোঁজ করে থাকেন। অনেক ছাত্রছাত্রী নির্ধারিত বিষয়ে প্রাইভেট পড়ার জন্য ভালো শিক্ষক এর খোঁজ করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত জানাশোনা বা নেটওয়ার্ক এর অভাবে বিষয়ভিত্তিক ভালো শিক্ষক পাওয়া তাদের জন্য দুরুহ হয়ে পড়ে। ঠিক একইরকম ভাবে অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ এবং টিউশন খুঁজছেন কিন্তু জানাশোনার অভাবে ভালো টিউশন পান না।

এই সমস্যাকে আপনি একটি সম্ভাবনাতে রুপ দিতে পারেন। আপনি একটি টিউশন প্রভাইডার বিজনেস খুলতে পারেন যেটি উভয়পক্ষের যোগাযোগ এর জন্য একটি মিডিয়া হিসেবে কাজ করবে। উভয়পক্ষই নিজ পছন্দমত শিক্ষক বা টিউশন খুঁজে নিতে পারবেন আপনার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। বিনিময়ে আপনি উভয় পক্ষ থেকেই একটি নির্ধারিত কমিশন আয় করতে পারেন। প্রাথমিক ভাবে আপনি এটি একটি ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমে প্রচারনা চালিয়ে ও করতে পারেন। পরে ব্যবসাটি বড় হলে আপনি একে এপস এর মাধ্যমে আরও অরগানাইজড উপায়ে চালাতে পারেন।

এই ব্যবসাটি আপনি আপনার ঘর এর একটা রুম থেকেই শুরু করতে পারেন। এখানে প্রাথমিক প্রচার প্রচারনা বাবদ খরচটাই আপনার প্রধান বিনিয়োগ। ক্লায়েন্ট পেলে আপনার ইনকাম আর না পেলে লস নেই বলে এটি অন্যতম একটি লস ছাড়া ব্যবসা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

সম্পর্কিত পোস্ট- বিনা পুঁজিতে ৬টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া!

কোচিং সেন্টার ব্যবসা

বর্তমান সময়ে কোচিং সেন্টার অন্যতম একটি লাভজনক ব্যবসা যদি আপনার কোচিং সেন্টার এ পর্যাপ্ত ছাত্রছাত্রী কোচিং নিতে আসে। ব্যবসাটি যদি আপনি ঝুঁকিমুক্ত রেখে চালাতে চান তাহলে আপনার প্রাথমিক বিনিয়োগ একেবারেই কম রাখতে হবে। এজন্য প্রথমে কোচিং সেন্টারটি ছোট আকারে আপনার বাসার একটা রুম থেকে শুরু করতে পারেন অথবা খুব কম ভাড়ায় চাহিদামত রুম ভাড়া নিতে পারেন।

এরপর বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ভালো শিক্ষকদেরকে আপনার কোচিং এ ক্লাস নেয়ার জন্য চুক্তি করতে পারেন। অবশ্যই চুক্তিতে শিক্ষকের সম্মানি ক্লাস বা কোর্সভিত্তিক হতে হবে। মাসিক বেতন বা স্থায়ী কোন চুক্তি আপনার ব্যবসার জন্য নেতিবাচক হতে পারে। এরপর আপনার চেষ্টা থাকতে হবে যাতে যত বেশী সংখ্যক ছাত্রছাত্রী আপনার কোচিং সেন্টার এ কোচিং নিতে ভর্তি হয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখবেন কোর্স বা ক্লাস প্রতি আপনার যা খরচ হবে ছাত্রছাত্রী থেকে ভর্তি ফি বাবদ প্রাপ্ত আয় যাতে তার চাইতে উল্লেখযোগ্য পরিমানে বেশী হয়। এতে আপনার কোচিং সেন্টার এর ব্যবসা লাভজনক হবে এবং লসের সম্ভাবনা থাকবেনা।

বর্তমানে কোচিং সেন্টার এর চাহিদা, বিনিয়োগ এবং লাভ বিবেচনায় এই ব্যবসাটি অন্যতম একটি লস ছাড়া ব্যবসা বলা চলে কারণ এতে সম্ভাব্য লসের ঝুঁকি একেবারেই কম।

সম্পর্কিত পোস্ট- ছোট ব্যবসার আইডিয়া

মোবাইল টপ-আপ এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসা

মোবাইল টপ-আপ এবং মোবাইল ব্যাংকিং একটি কম পুঁজির ব্যবসা। আপনার আবাসিক এলাকার মোড়ে ছোট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এমনকি ব্যস্ততম রাস্তার পাশে খালি জায়গায় একটি চেয়ার টেবিল বসিয়ে ও এই ব্যবসাটি আপনি করতে পারেন।

এই ব্যবসাটি পুরোপুরি নগদ টাকার ব্যবসা বিধায় বাকিতে পণ্য বিক্রয়ের যে ঝুঁকি থাকে সেটা একেবারেই নেই। মোবাইল টপ-আপ এবং মোবাইল ব্যাংকিং এখন অনেকটাই নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের মত। অর্থাৎ এই ব্যবসাতে আপনার কাস্টমারের অভাব হবেনা। সাধারণত এই ব্যবসায়ে প্রতি হাজার টাকা বিক্রয় এ ২৫-৩০ টাকার মত কমিশন আয় হয়। একটি দোকানে যদি দৈনিক ৫০০০০ টাকার টপ আপ এবং মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন হয় তাহলে দৈনিক আয় দাড়ায় ১২৫০ থেকে ১৫০০ টাকা। মাসিক খরচ বাদ দিয়ে ও এই ব্যবসায়ে আপনার ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা নিট আয় থাকবে।

দৈনিক নগদ লেনদেন হয় বিধায় এই ব্যবসায়ে বিনিয়োগ ও খুব বেশী প্রয়োজন হয়না। মুলত কম পরিচালন খরচ এবং কম বিনিয়োগে অধিক রিটার্ন এর কারনে এই ব্যবসাটি অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত এবং একটি লস ছাড়া ব্যবসা।

রুম শেয়ারিং ব্যবসা

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে রুম শেয়ারিং ব্যবসা একটি ইউনিক বিজনেস আইডিয়া। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই এই রুম শেয়ারিং ব্যবসাটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই ব্যবসাতে বিখ্যাত কয়েকটি গ্লোবাল কোম্পানি ও রয়েছে। যেমন-

  • airbnb
  • vrbo
  • homeaway
  • flipkey
  • wimbu
  • the plum guide
  • onefinestay
  • hometogo
  • housetrip

এই ব্যবসাটির পূর্বশর্তই হল আপনার বাসার একটা এক্সট্রা রুম আপনি গেস্ট বা ক্লায়েন্টদের তাদের চাহিদামত সময়ের জন্য ভাড়া দিবেন। সাধারণত ব্যস্ত জেলা বা বিভাগীয় শহরে কিংবা পর্যটন এরিয়াতে এই রুম শেয়ারিং ব্যবসার সম্ভাবনা অনেক বেশী। সাধারণত ব্যস্ততম পর্যটন মওসুমে হোটেল এর রুম না পাওয়া বা রুম ভাড়া বেশী হওয়ার কারণে অনেকেই কিছুটা কম খরচে এই ধরনের থাকার রুম খোঁজেন। এমনকি জরুরী কাজের জন্য বা অন্য কোন কারণে অনেকেই এক শহর থেকে অন্য শহরে ট্রাভেল করে থাকেন। রুম শেয়ারিং ব্যবসা এসব লোকদের জন্য বেশী দামে হোটেল এ থাকার চেয়ে কম খরচে নিরাপদ আবাসিক বিকল্প হতে পারে।

এই ব্যবসার বড় সুবিধা হল, ভাড়া দিলে আপনার একটা এক্সট্রা আয় হল আর ভাড়া না হলে আপনার আয় হলনা কিন্তু লস ও হলনা। এই কারনেই এই ব্যবসাটিকে অনায়াসেই লস ছাড়া ব্যবসা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

রিয়েল এস্টেট ব্রোকার ব্যবসা

এই ব্যবসাটি ও আপনার বাসার একটা রুমকেই অফিস বানিয়ে শুরু করতে পারেন। কারণ এই ব্যবসাটি মুলত আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও নেটওয়ার্ক নির্ভর। এই ব্যবসাটির জন্য আপনার নিচের বিষয়গুলো মুলত খেয়াল রাখতে হবে।

  • আপনি যত বেশী সম্ভব জায়গার মালিকদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে, বিক্রয়যোগ্য জায়গার খোঁজ রাখতে হবে।
  • সম্ভাব্য ক্রেতাদের একটা বড় লিস্ট থাকা লাগবে এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের সাথে ভালো যোগাযোগ থাকতে হবে।
  • আপনাকে অবশ্যই জায়গার বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয় এর আস্থা অর্জন করতে হবে।

যদি উপরে উল্লিখিত তিনটি বিষয় আপনি মেনে চলেন তাহলে এই ব্যবসাতে আপনার সাফল্য অনিবার্য। এই ব্যবসাটি একটি অন্যতম লস ছাড়া ব্যবসা। কারণ এখানে জায়গা সফলভাবে বিক্রয় হলে আপনি ক্রেতা বিক্রেতা উভয়পক্ষ থেকে একটা ভালো কমিশন পাবেন। কিন্তু জায়গা বিক্রয় না হলে আপনার কোন লস হবেনা। অবশ্য এক্ষেত্রে আপনার প্রাথমিক বিনিয়োগ অবশ্যই একেবারেই কম রাখতে হবে।

শেষকথা

একথা আমরা সবাই জানি সব ব্যবসাতেই কম বেশী লস এর সম্ভাবনা থাকে। কারণ ব্যবসাতে লাভ লস দুটোরই সমান সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু উপরে যে ব্যবসা গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেসব ব্যবসা আপনি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে লস হওয়ার সম্ভাবনা নেই। লস ছাড়া ব্যবসা আপনি তখনই করতে পারবেন যখন আপনার ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত আয় আপনার ব্যবসার পরিচালন খরচ থেকে বেশী হবে।

তাই যে ব্যবসাটিই আপনি করবেন খেয়াল রাখবেন আপনার ব্যবসার পরিচালন খরচ যাতে আপনার ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত আয় থেকে বেশী না হয়। প্রয়োজনে ব্যবসার আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আপনার ব্যবসার পরিচালন খরচ সমন্বয় করবেন।

আরও পড়ুন- নতুন ব্যবসার আইডিয়া

শেয়ার ব্যবসা

FAQ

ব্যবসায় লোকসান হলে কি হয়?

ব্যবসায়ে লোকসান মানুষের মনে নেতিবাচক অনুভুতি তৈরি করে। কাজ করা ইচ্ছাশক্তি কমিয়ে দেয় যেটি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। কারণ এতে ব্যবসা আরও বেশী লোকসানে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এমনকি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা ও হতে পারে। তাই ব্যবসায়ে লোকসানের মুখোমুখি হলে ঠাণ্ডা মাথায় লোকসানের কারণসমূহ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে ব্যবসাকে ধীরে ধীরে লাভজনক করে তোলার চেষ্টা করতে হবে।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।