ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম কি এবং কিভাবে শুরু করবেন?
আপনি কি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন? ব্যবসার প্রমোশনে ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজের চিন্তাধারা বাস্তবায়ন এর ক্ষেত্রে একটি চমৎকার অপশন হল ব্যবসা। আর ব্যবসায়িক জগতে নিজেকে মেলে ধরতে মানুষ দিন দিন আগ্রহ দেখাচ্ছে ই-কমার্স ব্যবসার দিকে। আর একজন নবীন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনি যদি ই-কমার্স ব্যবসা করতে চান এবং ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
ই-কমার্স কি?
নিত্য দিনের হ্যাসেল এড়াতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে পছন্দের প্রোডাক্ট কেনার ক্ষেত্রে ই-কমার্স এর জুড়ি মেলা ভার। ই-কমার্স এর পূর্ণরুপ হল ইলেক্ট্রনিক-কমার্স। মূলত ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে বিজনেস এর অপারেশন করার পারফেক্ট ম্যাথডকে বলা হল ই-কমার্স। ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যাটফর্ম এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটির সকল কার্যক্রম ইন্টারনেট এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
আপনি যেমন ওনার হয়ে আপনার ওয়েসাইটে প্রোডাক্ট শোক্যাসিং করতে পারবেন ঠিক তেমনিভাবে অপর সাইডে আপনার কাস্টমার অনলাইন এর মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট পারচেজ করতে পারবে। আর এ কারণেই দিনে দিনে ই-কমার্স বিজনেসের জনপ্রিয়তার মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে বিজনেস সেট আপে আপনি যদি ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম মেনে প্ল্যানিং করেন তাহলে এই ফিল্ডে সাকসেস রেট তুলনামূলক বেশি হবে।
আরও পড়ুন- ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা
কেন করা উচিত ই-কমার্স ব্যবসা?
বর্তমান সময়ে আমরা সকলেই ব্যস্ত। আর ব্যস্ত জীবনে নিজের আইডিয়াকে ইম্পলিমেন্ট করে, ডিমান্ডিং কোন ফিল্ডে ক্যারিয়ার ডেভেলপ এর একটি পারফেক্ট মাধ্যম হল ই-কমার্স।
এটি এমন একটি বিজনেস আইডিয়া, যেখানে অনেক মানুষ এ পারফেক্ট টিপস এবং ট্রিক্স শেয়ার করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সক্ষম হচ্ছে। আর আপনিও যদি হতে চান তাদের মধ্যে একজন তাহলে পারফেক্ট প্ল্যানিং এর কোন বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন- অনলাইন ব্যবসা
ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম
একটি বিজনেস স্টার্ট করতে গেলে শুধুমাত্র প্ল্যানিং কিংবা ইনভেস্টমেন্ট এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং প্ল্যানিং এর পাশাপাশি এক্ষেত্রে ডেডিকেশনটাও ইম্পর্টেন্ট। তাই ই-কমার্স বিজনেস স্টার্ট করার ক্ষেত্রে ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম সম্পর্কে চলুন জেনে নেই-
১। মার্কেট রিসার্চ
আপনি কি ধরনের বিজনেস করতে চাচ্ছেন তার উপর বেস করে মার্কেট রিসার্চ করাটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মার্কেট রিসার্চ এর উপর ডিপেন্ড আপনার প্ল্যানিং যেমন এক্সিকিউট করতে পারবেন ঠিক কি ধরণের পরিবর্তন আনা যায় তা আপনি আরও ক্লিয়ারলি আইডেন্টিফাই করতে পারবেন।
২. ফান্ডিং
ই-কমার্স বিজনেস ডেভেলপ ওর ক্ষেত্রে ফান্ডিং বেশ গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করে। আপনি কি ধরণের বিজনেস স্টার্ট করবেন, কি ধরণের প্রোডাক্ট অর্গানাইজ করবেন, কিভাবে বিজনেসের পুরো অপারেশন প্রসেস রান করবেন তার উপর ফান্ডিং অনেকাংশে ডিপেন্ড করে।তাই আপনি যদি ই-কমার্স বিজনেস করার প্ল্যানিং করেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই ফান্ডিং এর বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
৩. নিশ সিলেকশান
ই-কমার্স বিজনেস এর ক্ষেত্রে নিশ সিলেকশান বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আপনি কোন নিশ নিয়ে কাজ করবেন তা আপনাকে শুরু থেকে ডিসাইড করতে হবে। সে অনুযায়ী আপনাকে আপনার প্ল্যানিং রেডি করতে হবে। তাই ই-কমার্স বিজনেস শুরু করার ক্ষেত্রে নিশ ডিসাইড করুন।
৪. প্রোডাক্ট সিলেকশান
ই-কমার্স বিজনেস এর ইনিশিয়াল লেভেল এর প্ল্যানিং হয়ে গেলে আপনাকে এইবার প্রোডাক্ট সিলেকশানে মনোযোগ দিতে হবে।যেহেতু আপনি অলরেডি মার্কেট রিসার্চ করেছেন আপনি নিশ্চিত জানেন কোন প্রোডাক্ট এর ডিমান্ড বেশি।তাই সে অনুযায়ী আপনি বিজনেস এর জন্য ক্যাটাগড়ি ওয়াইজ প্রোডাক্ট সিলেক্ট করুন।
৫. পন্য সংগ্রহ
ই-কমার্স বিজনেস এর ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক চিন্তা ভাবনা করে প্রত্যেকটা ডিসিশান নেওয়ার পাশাপাশি তা ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে। তাই আপনি যখন প্রোডাক্ট সিলেক্ট করবেন তা ইনিশিয়াল স্টেজে আপনি একটি নির্দিষ্ট কোয়ান্টিটি প্রোডাক্ট ডিসপ্লে করতে পারেন।পরবর্তী আপনার অর্ডার এর উপর ডিপেন্ড করে প্রোডাক্ট কোয়ান্টিটি ডেভেলপ করতে পারেন।
৬. ওয়েবসাইট/এপ্লিকেশন তৈরি
যেহেতু আপনি বিজনেস অনলাইনে করবেন সেহেতু আপনার টার্গেট অর্ডিয়েন্সকে টার্গেট করতে হলে তাদের কাছে আপনাকে পৌছাতে হবে। এক্ষেত্রে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডেভেলপ করতে আপনাকে বিজনেস এর জন্য ওয়েবসাইট এবং এপ্লিকেশন ডেভেলপ করার দিকে জোর দিতে হবে।
প্রোডাক্ট এর ফান্ডিং এর কাজ ও হলো মার্কেট রিসার্চ ও হল এখন কাজ বিজনেস স্টার্ট করা। আর ই-কমার্স বিজনেসকে এগিয়ে নিতে অবশ্যই ওয়েবসাইট অবশ্যই ইউজার এর উপর ডিপেন্ড করে কম্বাইন এপ্লিকেশন রেডি করতেই হবে।সেক্ষেত্রে অবশ্যই লার্জ অর্ডিয়েন্স এর কথা চিন্তা করে আপনাকে অবশ্যই ইউজার ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট/এপ্লিকেশন ডেভেলপ করতে হবে। ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম মেনে আপনি ইউজার ফ্রেন্ডলি এপ্লিকেশন ডেভেলপ করার দিকে ফোকাস করবেন।
৭. অফিস সেট -আপ করা
শুরুতে বিজনেস আপনি ঘরে বসে স্টার্ট করলেও বিজনেসের গ্রোথ হবার সাথে সাথে আপনাকে অফিস সেট আপ এর কথা এক্ষেত্রে বিবেচনা করতেই হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার অফিস কার্যক্রম অনলাইন বেইসড রাখতে চান সেক্ষেত্রে ফিজিক্যাল অফিস এর কোন প্রয়োজন নেই। তবে আপনি যদি অফলাইন বেইসড এক্টিভিটি গড়ে তুলতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অফলাইন এ অফিস সেট আপ করতে হবে।
৮. মার্কেটিং
ই-কমার্স বিজনেস হোক কিংবা অফালাইন বিজনেস প্রচার এবং প্রসারের ক্ষেত্রে প্রোপার মার্কেটিং এর জুড়ি নেই। তাই আপনার বিজনেস আপনি যখন প্রোমোট করতে চাচ্ছেন, সেল জেনারেট করতে চাচ্ছেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই মার্কেটিংএর দিকে ফোকাস করতে হবে। যেহেতু আপনার বিজনেস অনলাইন কেন্দ্রিক,সেহেতু প্রচার যদি শুধুমাত্র অনলাইন কেন্দ্রিক সীমিত রাখেন তাহলে বেশ ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা আছে। তাই ই-কমার্স বিজনেস গ্রোথের কথা বিবেচনা করে অনলাইন মার্কেটিং এর পাশাপাশি অফলাইন মার্কেটিংয়েও টাইম ইনভেস্ট করতে হবে।
৯. ক্যাম্পেইন
মনে রাখবেন বিজনেসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রপার প্ল্যানিং এর বিকল্প নেই।তাই বিজনেস এর গ্রোথের জন্য আপনি বিভিন্ন ক্যাম্পেইন প্ল্যান করেই প্রোমোশন করতে হবে।এক্ষেত্রে বিভিন্ন স্পেশাল ডে,ইভেন্টকে সামনে রেখে আপনি নানান ধরণের ক্যাম্পেইম প্ল্যান করতে পারেন।
১০. রেভেনিউ জেনারেট করা
যেহেতু বিজনেস করছেন সেক্ষেত্রে রেভেনিউ অবশ্যই ম্যাটার করে। তাই বিজনেস বুস্ট আপ করতে চাইলে আপনাকে একটি সলিড প্ল্যানিং নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিজনেস শেয়ার এ করেন কিংবা জয়েন্টে আপনাকে অবশ্যই রেভেনিউ ফোকাস বিজনেসে ডাইভার্ট হতে হবে।
শেষকথা
ই-কমার্স বিজনেস শুরু করা অনেকে যতটা সহজ ভেবে থাকেন আদতে ততটা সহজ নয়। যেনতেনভাবে শুরু করা যেতে পারে কিন্তু এই ধরনের ই-কমার্স ব্যবসা অধিকাংশই লস দিয়ে ব্যবসা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। লাভজনক ই-কমার্স ব্যবসা করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম মেনে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে।
আপনি যদি প্রপার গাইডলাইন মেনে ফোকাস করতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারেন তাহলে আপনি এই ফিল্ডে সফলতা লাভ করবেন। আশা করি উপরে আলোচিত ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম আপনাকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ই-কমার্স বিজনেস শুর করতে এবং সফল হতে সাহায্য করবে।