বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ৬টি ব্যবসার আইডিয়া
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কি কি এটা জানার ব্যাপারে অনেকের আগ্রহ রয়েছে। মূলত বিনিয়োগের সঠিক পরিকল্পনামাফিক ব্যবহারে লাভজনক ব্যবসা করা সম্ভব। লাভের পরিমাণ কমবেশী হতে পারে, সেটা পরিকল্পনা, পরিবেশ এবং পরিস্থিতি এর উপর নির্ভর করে। তবে এর মধ্যে ও কিছু ব্যবসা রয়েছে যেগুলোর বিনিয়োগ বিবেচনায় আয় বেশী । এগুলোই মূলত সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই আর্টিকেল এ বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া গুলোর একটা তালিকা দেয়া হলো এবং এ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা
বেশ কিছু ব্যবসা রয়েছে যেগুলো বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা এর তালিকায় আসবে, কিন্তু সবদিক বিবেচনায় নিচে উল্লিখিত ব্যবসা গুলোকে উপরের সারিতে রাখতে হবে।
- খাবারের ব্যবসা।
- মাছের ব্যবসা।
- আমদানী নির্ভর ব্যবসা।
- কাপড়ের ব্যবসা।
- নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এর ব্যবসা।
- ষ্টেশনারী ব্যবসা।
লাভজনক খাবারের ব্যবসা
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা বিবেচনায় খাবারের ব্যবসা উপরের সারিতেই থাকবে। জনাকীর্ণ স্থানে মানসম্পন্ন খাবারের ব্যবসা করলে লাভবান হওয়া যায়। এতে কাস্টমারের অভাব হয়না এবং বিক্রিও ভালো হয়। বিক্রি ভালো হলে খাবারের মান ঠিক রেখে ব্যবসা চালানো যায় এবং ব্যবসা লাভজনক হয়। একবার খাবারের সুনাম ছড়িয়ে পড়লে নতুন নতুন কাস্টমারও আসতে থাকে, যেটা বিক্রয় বাড়াতে সাহায্য করে।
খাবারের ব্যবসায়ে সফল এমন ব্যক্তিদের তথ্যমতে, এই ব্যবসায়ে খরচ বাদ দিয়ে মাসিক ২০% থেকে ২৫% নীট লাভ করা সম্ভব। বার্ষিক হিসাব করলে রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট এর হিসাবটা দাড়ায় ২৪০% থেকে ৩০০%, যা রীতিমতো ঈর্ষনীয় লাভজনক ব্যবসা।
ম্যাকডোনাল্ড, কেএফসি, পিৎজা হাট এর মত বিশ্ববিখ্যাত চেইন রেস্টুরেন্টগুলোর বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা দেখুন। এদের প্রতিটা ফ্রাঞ্চাইজি বর্তমানে লাভজনক ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। এদের এই জনপ্রিয়তা ও লাভজনক ব্যবসার মূল শক্তি হচ্ছে এদের সঠিক পরিকল্পনা, খাবারের মান এবং স্বাদে বৈচিত্র্য । বছরের পর বছর এরা খাবারের কোয়ালিটি অক্ষুন্ন রেখে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
এছাড়া খাবারের ব্যবসায়ে পরিকল্পনামাফিক ব্যবসা করলে ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়। সেই হিসেবে একে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ ও বলা যায়।
সম্পর্কিত পোস্ট- চা পাতার ব্যবসা।
মাছের লাভজনক ব্যবসা
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে মাছের ব্যবসা অন্যতম একটি লাভজনক ব্যবসা। খাবারের ব্যবসা এর মত এই ব্যবসাতে ও ভালো লাভের মার্জিন থাকে। এ ব্যবসায়ে পাইকারি পর্যায়ে নীট ১২%-১৫% এবং খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে ২২%-২৫% নীট লাভ থাকে। যদি আপনি বাৎসরিক হিসাব করেন, এই ব্যবসায়ে নিট ROI ১৫০% থেকে ২০০% এর উপরে ও থাকতে পারে। মানে ঠিকঠাক ব্যবসা করতে পারলে, বছর ঘুরতেই আপনার মূলধন দ্বিগুণ এর বেশী হয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। এখন আপনিই ভেবে দেখুন, কেন এই ব্যবসাকে বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
বাজারে গদি ভাড়া নিয়ে খুচরা বিক্রি ছাড়াও এটি নিজের বাসায় ডিপ ফ্রিজে স্টোরেজ করে অনলাইনে ও বিক্রি করা যায়। আবার বিভিন্ন সুপারশপ বা বড় রেস্টুরেন্টে ও অর্ডার এর ভিত্তিতে সরবরাহ করা যায়। তবে সুপারশপ বা রেস্টুরেন্টে সরবরাহের ক্ষেত্রে দামে ছাড় দিতে হয়। এখানে ক্ষেত্রবিশেষে বাকীতে ও পন্য সরবরাহ করতে হয়।
আপনি যদি ব্যবসায়ে নতুন আসতে চান, তাহলে নতুন ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে এ লাভজনক ব্যবসাটি বাসা থেকেও করতে পারেন। পাইকারি ব্যবসায়ীদের থেকে মাছ সংগ্রহ করে অনলাইনের মাধ্যমে খুচরা বিক্রি করলে লাভের অংক বেশ ভালোই থাকে। যদি আপনার বিদেশের বাজারে মাছ সরবরাহের লিংক থাকে, তাহলে লাভের মার্জিন আরো ভালো থাকবে। খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে প্রচুর পরিমাণে চিংড়ি সহ অন্যান্য মাছ ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি হয়।
এসব বিবেচনায় মাছের ব্যবসাকে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর একটি ধরা হয়।
লাভজনক আমদানী নির্ভর ব্যবসা
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে আমদানি নির্ভর ব্যবসাকে প্রথম সারিতেই রাখতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ইলেকট্রনিকস সহ দেশের বাজারে ভালো চাহিদা রয়েছে এমন যেকোনো পন্য আমদানি করে বাজারে সরবরাহ করা যেতে পারে।
এই ব্যবসায়ে আমদানীর জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স সহ আমদানি, শিপিং এবং বাজারজাতকরণের জন্য বড় অংকের বিনিয়োগ লাগতে পারে। তবে মার্কেটের চাহিদা, মওসুম ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে বাজারজাতকরণের সুব্যবস্থা রেখে এ ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করলে পণ্যভেদে নীট লাভের পরিমাণ ৩০% থেকে ৫০% ও হতে পারে।
মার্কেটের চাহিদা, মওসুম, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিপিং খরচ, প্রতিদ্বন্দ্বী আমদানিকারকদের অবস্থান এসব কিছু বিবেচনায় আনতে হবে। কারন, আপনি একটা পন্য আনলেন সেটা উপরে উল্লিখিত বিভিন্ন কারনে বাজারজাতকরণে প্রভাবিত হতে পারে। এসব কিছু ঠিকঠাক ম্যানেজ করতে পারলে এটি নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া গুলোর একটি।
পন্য জাহাজে আনতে সময় বেশী লাগে কিন্তু খরচ কম পড়ে আবার কার্গো বিমানে আনলে খরচ বেশী পড়বে কিন্তু সময় কম লাগবে। এখন পন্যভেদে এবং আপনার পরিকল্পনাভেদে শিপিং এর মাধ্যম আপনাকে ঠিক করতে হবে।
লাভের পরিমাণ ভালো হলে ও ভুল সোর্সিং, শিপিং এর সমস্যা, পন্যের দাম উঠানামা সহ নানাবিধ কারণে আমদানি নির্ভর ব্যবসায়ে ঝুঁকির পরিমাণও বেশী। তাই অন্যতম লাভজনক ব্যবসা হলেও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যবসায় নামা ভালো।
কাপড়ের লাভজনক ব্যবসা
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কি এই প্রশ্নে অনেকেই কাপড়ের ব্যবসার কথা বলে থাকবেন। এই ব্যবসাটি শুধু বর্তমানে না, প্রাচীনকাল থেকেই অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। খোঁজ নিলে দেখবেন অনেক বড় বড় ব্যবসায়ীর পারিবারিক বা খানদানী ব্যবসা হলো এ কাপড়ের ব্যবসা।
বিভিন্নভাবে আপনি বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা টি করতে পারেন।
- স্টক লট খুচরা বিক্রি
- স্টক লট পাইকারি বিক্রি
- টিশার্ট/জিনস/থ্রি পিস সহ অন্যান্য কাপড়ের আইটেম পাইকারি বাজার থেকে সংগ্রহ করে খুচরা বা অনলাইনে বিক্রি।
- বেনারসি/জামদানী/কাতান সহ বিভিন্ন প্রকারের শাড়ী খুচরা দোকান বা অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি।
- আন্ডারগার্মেন্টস পাইকারি, খুচরা বা অনলাইনে বিক্রি।
- থান কাপড় পাইকারী, খুচরা বা অনলাইনে বিক্রি।
সঠিক সোর্সিং, মান ও দাম ঠিক রাখতে পারলে এ ব্যবসায়ে বিক্রিবাট্রা যথেষ্ট ভালো। এ ব্যবসায়ে পাইকারি পর্যায়ে মাসিক নীট ১৫% এর কমবেশী এবং খুচরা পর্যায়ে নীট ৩০%-৩৫% লাভ করা যায়। মুলত এসব বিবেচনায় এই ব্যবসাটিকে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সম্পর্কিত পোস্ট- স্টক ব্যবসার আইডিয়া ।
নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচামালের লাভজনক ব্যবসা
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা এর তালিকায় এই ব্যবসাটিও প্রথম সারিতেই থাকবে। কারণ এই ব্যবসায়ে উত্পাদক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যন্ত মোটামুটি ৬০%-৭০% পর্যন্ত গ্যাপ থাকে। কোন কোন পন্যে এটি চাহিদার উপর ভিত্তি করে ১৫০%-২০০% ছাড়িয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজ, কাচামরিচ, আদার দাম এর উপযুক্ত উদাহরণ।
যে ব্যবসায়ে এই ধরণের গ্যাপ এবং দামের দ্রুত উঠানামার সুযোগ থাকে, সেটা সঠিকভাবে করতে পারলে অনেক লাভ করার সুযোগ থাকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচামালের ব্যবসা দুই ভাবে করা যায়।
- সরাসরি উৎপাদক থেকে সংগ্রহ করে পাইকারদের নিকট বিক্রি করা। এতে নীট লাভের পরিমাণ ১০%-১৫% হতে পারে। পচনশীল পণ্য, পাইকারী এর ক্ষেত্রে অধিকসময় স্টক করার ঝুঁকি নিতে হয়না।
- সরাসরি উৎপাদক থেকে অথবা পাইকারদের থেকে সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রি করা। পাইকারদের নিকট থেকে কিনলে প্রয়োজনমত কিনে বিক্রি করার সুযোগ থাকে। তাই স্টক খুব বেশী করার প্রয়োজন পড়েনা। কিন্তু উত্পাদক থেকে কিনলে ভালো রেট এ কিনার জন্য মিনিমাম একটা স্টক কিনতে হয়। এতে স্টক পচা বা নস্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। খুচরা বিক্রেতাদের নীট লাভের পরিমাণ পন্যভেদে ২৫%-৫০% পর্যন্ত ও হতে পারে।
ষ্টেশনারী ব্যবসা- সময়ের লাভজনক ব্যবসা
ষ্টেশনারী ব্যবসা বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা এর মধ্যে অন্যতম একটি ব্যবসা। পন্যভেদে ষ্টেশনারী আইটেমের খুচরা বিক্রিতে ১০% থেকে ২০% বা তার ও বেশী লাভ হয়ে থেকে। আপনি চাইলে খুচরা বিক্রেতা হিসেবে এই ব্যবসাটি করতে পারেন। আবার ডিলারশিপ নিয়ে বা পাইকারি বাজার থেকে কিনে খুচরা দোকান এ ও বিক্রি করতে পারেন। খুচরা বিক্রিতে আপনার তেমন কোন বিনিয়োগ লাগবেনা, অল্প বিনিয়োগ হলেই চলবে। যদি আপনি খুচরা দোকানদারদের নিকট বিক্রি করেন, তাহলে এলাকাভেদে বিক্রির উপর নির্ভর করে ৩-৪ লাখ টাকার মধ্যে বিনিয়োগ লাগতে পারে।
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা- আরও কিছু তালিকা
উপরে উল্লিখিত ব্যবসা গুলো ছাড়া ও বর্তমান সময়ে লাভজনক ব্যবসা এর তালিকায় আসতে পারে, এমন কিছু ব্যবসার নাম নিম্নে দেয়া হল।
- টিস্যু এর ব্যবসা- টয়লেট টিস্যু, রেগুলার টিস্যু, ওয়েট টিস্যু ইত্যাদি।
- বাচ্ছাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন এর ব্যবসা।
- প্লাস্টিক/রাবার এর স্যান্ডেল এর ব্যবসা।
- সিজনাল ফল এর ব্যবসা।
- ওয়ান টাইম কাপ-প্লেট এর ব্যবসা।
- ষ্টেশনারী আইটেম সাপ্লাই এর ব্যবসা।
- ফ্যান এর ব্যবসা- উৎপাদন, পাইকারি অথবা খুচরা বিক্রি।
- মোবাইল এপস ডেভেলপমেন্ট এর ব্যবসা।
- বাচ্চাদের খেলনা এর ব্যবসা- উৎপাদন, পাইকারি অথবা খুচরা বিক্রি।
- পুরনো, ছেঁড়াফাটা নোট কেনাবেচার ব্যবসা।
ব্যবসার আইডিয়া সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য সম্বলিত আর্টিকেল এখানে পড়ুন।
FAQ
২০২৩ এর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হলো ফুড ও বেকারী আইটেম, মসলা, কোল্ড স্টোরেজ, মাছ ও শুটকি, ইলেকট্রনিকস পণ্য, টুরিজম ব্যবসা ইত্যাদি।
বিনা পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা করতে হলে নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা করতে হবে। যেমন- হোম টিউটর প্রোভাইডার, ভিডিও টিউটরিয়াল কোর্স তৈরি এবং বিক্রি, নোটবুক তৈরি এবং বিক্রি, ম্যারেজ মেকার, এপস ডেভেলপমেন্ট, টুরিস্ট গাইড ও টুরিজম সার্ভিস ইত্যাদি।
নিম্নে কিছু স্মার্ট ব্যবসার আইডিয়া দেয়া হলো।
১। নিজস্ব ব্লগিং সাইট ও ইউটিউব চ্যানেল।
২। অনলাইন টিউটরিয়াল।
৩। অনলাইন ফ্যাশন স্টোর।
৪। গেমিং এপস।
৫। কফি ও আইসক্রিম শপ।
সবদিক বিবেচনায় নিলে তেল-গ্যাসের ব্যবসাকে বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
অল্প পুঁজি দিয়ে নিচের ব্যবসাগুলো করা যায়।
১। হোমমেড মসলার ব্যবসা।
২। হোমমেড খাবারের ব্যবসা।
৩। হোমমেড আচারের ব্যবসা।
৪। ষ্টেশনারী ব্যবসা।
৫। মোবাইল রিচারজ শপ।
৬। মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসা।
৭। ফুটপাথে কাপড়ের ব্যবসা।
৮। রোড সাইড টি স্টল।
৯। সবজির ব্যবসা।
১০। ফলের ব্যবসা।
নিরাপদ ব্যবসা ও রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট বিবেচনায় খাবারের ব্যবসাকে সবচাইতে ভালো ব্যবসা বলা যায়।