ডাকঘর সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগ কি নিরাপদ ও লাভজনক?
আপনার হাতে কি নিত্য প্রয়োজন মিটানোর বাহিরে অলস টাকা আছে? আপনি কি সে টাকা বিনিয়োগ করতে চান?তাহলে আপনার জন্য এই ব্লগটি। আজ আপনাদের জানাবো ডাকঘর সঞ্চয়পত্র সম্পর্কে। ডাকঘর বিষয়টির সাথে আশা করছি আপনি পরিচিত, যদি পরিচিত নাও হয়ে থাকেন, এই ব্লগটিতে ডাকঘর এবং ডাকঘর সঞ্চয়পত্র সম্পর্কিত সকল বিষয় সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পেয়ে যাবেন।
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কি?
আপনি ভাবছেন, ডাকঘর চিঠির আদান-প্রদানে যুক্ত থাকলে তারা সঞ্চয়পত্রের সাথে কিভাবে সংযুক্ত থাকবে৷ মূলত ডাকঘরের সঞ্চয় ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংকে যদি আপনি টাকা ইনভেস্ট করেন অর্থাৎ জমা করে রাখেন। তবে সে থেকে আপনি একটি আয় করতে পারবেন,এটিই ডাকঘর সঞ্চয়পত্র। তবে এটি উচ্চসূদে মুনাফা দেয়না সেটি আপনাকে মাথায় রাখতে হবে৷ জানা যায়, ব্রিটিশ সরকার ১৮৭২ সালে ডাক-হরকরাদের সুবিধার ক্ষেত্রে এই কর্মসূচি গ্রহণ করে। বাংলাদেশে এই পদ্ধতি চালু হয় ১৯৭৪ সালে এবং এটি পরিচালনার জন্য ‘ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক বিধি ‘ ১৯৮১ সালে চালু করা হয়।
ডাকঘর সঞ্চয় ব্যুরোর সুযোগ সুবিধা
ডাকঘর সঞ্চয় ব্যুরো এর মাধ্যমে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সম্ভব
১. সাধারণ সঞ্চয় হিসাব : সাধারণ সঞ্চয়ে একাউন্ট খুললে আপনি চলতি হিসেব এর মতই প্রতিমাসে টাকা জমা দিতে পারবেন এবং সাথে উত্তোলন করতে পারবেন ইচ্ছেমত।
২. নির্মাণকর্তা সঞ্চয় হিসাব: আপনি যদি কারিগর বা ব্যাবসায়ী হয়ে থাকেন, তবে আপনার জন্য এটি সুবিধাজনক হবে। আপনি আপনার সঞ্চয়ে টাকা জমা করতে পারবেন এবং ভবিষ্যতে ব্যাবহারের জন্য যেকোন সময় টাকা উত্তোলনও করতে পারবেন।
৩. পেনশন সঞ্চয় হিসাব: এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। আপনি যদি এক্ষেত্রে টাকা জমা দিতে চান তবে আপনাকে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে যাতে আপনি একটা নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে ভাল পরিমাণ অর্থ পেতে পারেন। এটি সাধারণত বৃদ্ধ বা বয়স্ক মানুষদের জন্য সুবিধাজনক।
৪. ঋণ সঞ্চয় হিসাব:
আপনি যদি ব্যাবসায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন, তবে আপনার নিশ্চই ঋণ নিতে হয়। সেই ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ঋণ সঞ্চয় হিসাব কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি একটি ডাকঘর সঞ্চয় হিসাব খুলে প্রয়োজনীয় ঋণ নিতে পারবেন যা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ যোগ্য।
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র এর ক্ষেত্রে যারা টাকা জমা দিতে পারবেন
যেকোন ব্যক্তি পোস্ট অফিস সেভিংস ব্যাঙ্কে যাদের পক্ষে টাকা জমা দিতে পারেন-
- নিজে।
- কোন নাবালক, যার সে অভিভাবক অথবা কোন পাগল ব্যক্তির পক্ষে যার, তিনি আইনের আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক বা ব্যবস্থাপক, তবে শর্ত থাকে যে মানসিক হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট হাসপাতালে বন্দী কোনো পাগলের পক্ষে টাকা জমা দিতে পারেন।
- ফার্মের নামে।
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক আমানতকারী অন্যের সাথে একটি যৌথ অ্যাকাউন্টও খুলতে পারে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি।
- একজন নাবালক তার পক্ষে তার অভিভাবক কর্তৃক খোলা কোনো অ্যাকাউন্ট ছাড়াও তার নিজের নামে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে।
- একজন বিবাহিত মহিলা তার নিজের নামে একটি পৃথক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না-তার স্বামীর নিজের নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা আছে তার সাথে অথবা তাদের উভয়ের একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট আছে।
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র থেকে আয়
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র বিধি অনুযায়ী বর্তমানে আপনি একক নামে অর্থাৎ শুধু আপনার বা একজনের নামে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন৷ যুগ্ম নামের জন্য ২০ লাখ বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে এর আগের নিয়মে একক নামের বিপরীতে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এবং যুগ্ম নামে ৬০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা্র সুযোগ ছিল।
ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকিং এর আওতায় আপনি ২ ভাবে টাকা জমা রাখতে পারবেন।
১) ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাব : এ নিয়ম অনুসারে আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখেন। তবে মুনাফা পেতে পারবেন ৬মাস পর পর। এটিতে পরবর্তীতে আপনি পুন-বিনিয়োগ করতে পারবেন।
মেয়াদী হিসেবে আপনি যদি টাকা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদী পর্যায়ে ইনভেস্ট করেন। সেক্ষেত্রে আপনি মুনাফা পেয়ে থাকবেন ১১.২৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে মেয়াদ থাকবে ৩ বছরের। তবে যদি ৩ বছরের পূর্বেই বিনিয়োগ ভেঙে ফেলতে চান তবে, ১ বছরের জন্য ১০.২০% এবং ২ বছরের জন্য ১০.৭০% মুনাফা পেয়ে থাকবেন। তবে আপনি যদি বছরের জায়গায় প্রতি ৬মাসে টাকা তুলতে চান, সেটিও সম্ভব। সেক্ষেত্রে মুনাফা পাবেন ১ বছরের জন্য ৯%, ২বছরে ৯.৫% এবং ৩বছরে ১০% মুনাফা আপনাকে প্রদান করা হবে।
২) ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাব : সাধারণ সঞ্চয়ী হিসেব মতে আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখেন। তাহলে প্রতি মাসে একটি মুনাফা তুলতে পারবেন সেই একাউন্টের জন্য। বর্তমানে সাধারণ হিসাবে আপনি প্রতি মাসে সরল মুনাফায় ৭.৫% টাকা পেয়ে থাকবেন। উপরে উল্লেখিত হিসাব গুলোর বাইরে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকিং এর আওতায় আরও একটি কর্মসূচি ছিল, যেটি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক বোনাস নামে পরিচিত ছিল এবং সেটি ১৯৯২ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়।
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র এর ক্ষেত্রে টাকা তোলার সময় যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হয়
একজন আমানতকারী যার একাউন্টটি হেড অফিসে বা একটি সাব-অফিসে তৈরি করা, তিনি তার একাউন্ট থেকে সপ্তাহে দুবার টাকা তুলতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে কোনো একদিনে একাধিক টাকা তোলা যাবে না। একজন আমানতকারী যার একাউন্ট একটি শাখা অফিসে তৈরি বা রেজিস্টার করা, তিনি সপ্তাহে শুধুমাত্র একবার তার একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারে অর্থাৎ সোমবার থেকে শনিবারের সময়কালকে বোঝায়।
তবে একজন নাবালক শুধুমাত্র তার নিজের নামে জমা করা টাকা তুলতে পারে। একজন নাবালকের পক্ষে জমা করা অর্থ শুধুমাত্র তার অভিভাবক উত্তোলন করতে পারেন। একজন পাগলের পক্ষে জমা করা অর্থ শুধুমাত্র, আদালত দ্বারা নিযুক্ত তার অভিভাবক বা মানসিক হাসপাতালের সুপারিনিয়েন্ট দ্বারা উত্তোলন করা সম্ভব। মহিলারা, বিবাহিত বা অবিবাহিত হোক না কেন, তাদের নিজেদের নামে জমা করা অর্থ নিজেরাই উত্তোলন করতে পারবেন; এবং বিবাহিত মহিলারা যদি অবিবাহিত মহিলা হিসাবে তাদের একাউন্টে অর্থ বা টাকা জমা করেন, তবে তাদের নিজেরও নামে তুলতে পারবেন।
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র হিসেবে টাকা রাখা নিরাপদ ও লাভজনক কিনা?
জ্বি, যেহেতু ডাকঘর একটি সরকারি সংস্থা। আর বর্তমান প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সরকারি ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আপনার টাকার সিকিউরিটি বা টাকার রক্ষণাবেক্ষণ থাকবে শতভাগ। এক্ষেত্রে আপনার টাকার লোকসান হবার সুযোগ একদমই ‘নেই’ এর কোটায়। আপনি যদি চান,আপনার টাকা একটি নিরাপদ স্থানে সংরক্ষিত থাকবে এবং তা আপনাকে একটি ভাল মুনাফা দিয়ে থাকবে। তাহলে ডাকঘর সঞ্চয়পত্র, পারিবারিক সঞ্চয়পত্র এসবে বিনিয়োগ আপনার জন্য একটি নিরাপদ এবং লাভজনক।
বর্তমান সময়ে আমরা সবাই চাই আমাদের টাকা একটি নিরাপদ স্থানে থাকুক এবং যদি তা থেকে আমাদের বাড়তি আয় হয় তাহলে সেটি আমাদের জন্য শতভাগ সফল একটি জায়গা। সেই দিক বিবেচনায় ডাকঘর আপনার জন্য হয়ে উঠতে পারে একটি বিশ্বাসযোগ্য স্থান যেখানে আপনি টাকা বিনিয়োগে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ভাল পরিমান আয় করে থাকবেন। তবে আপনার টাকার পরিমাণ এবং আপনার টাকা বিনিয়োগের চিন্তা এখানে নির্ভর করবে আপনার উপর।