অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে কিভাবে লাভবান হবেন?
কাপড়ের ব্যবসা পৃথিবীর অন্যতম পুরনো ব্যবসা। ব্যবসায়ীরা বহু যুগ আগে থেকেই মানুষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শখ মেটানোর জন্যও নানারকম কাপড় নিয়ে ব্যবসা করছে। কাপড় এমন এক জিনিস যা আব্রু রক্ষা ছাড়াও মানুষের সৌন্দর্যকে আরো ফুটিয়ে তোলে।
এক সময় হাতে ধরে কাপড়ের মান পরীক্ষা করে, গায়ে ধরে রুপ পরীক্ষা করে তবেই কেনা হতো। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে কাপড়ের ব্যবসা শুধুমাত্র চার দেয়ালের দোকানেই আটকে নেই৷ বরং অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা গত এক দশকে ভীষণভাবে জনপ্রিয় হয়েছে। অনলাইনের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে হাজার হাজার কাপড়ের ব্যবসা এর প্রতিষ্ঠান।
কাপড়ের ব্যবসা করে লাভবান হওয়ার টিপস
বর্তমানে অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করতে হলে একজন ব্যবসায়ী সাধারণত ফেইসবুক পেইজ খুলে। অনেকে আবার এক্ষেত্রে ইনস্টাগ্রামও পছন্দ করে। একটু বেশী বিনিয়োগ থাকলে অনেকে নিজস্ব ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে ও বিক্রি করে থাকেন।
কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বা প্রাথমিকভাবে ছোট আকারে শুরু করতে চাইলে ফেসবুক পেজ খুলে ব্যবসা শুরু করাটাই উত্তম। ফেসবুক পেজ খুলে এরপর সেই পেইজের একটি সুন্দর নাম দিতে হয়। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে নামের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। একটি ব্যবসার নাম দেখে কাস্টমার অনেক সময় বিবেচনা করে যে, এই ধরনের একটি পেইজের পণ্য তার পছন্দের সাথে মিলবে কিনা।
তা কি কি করতে হবে এই অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করে লাভবান হতে হলে?
কাপড় এর মান নিশ্চিতকরণ
হতে পারে বর্তমান যুগে অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে করতে কাস্টমার হাতে ধরে কাপড় পরীক্ষা করতে পারে না। কিন্তু তাই বলে একজন ব্যবসায়ী হিসাবে মান পরীক্ষা করা ছাড়াই কাপড়ের ব্যবসা শুরু করা যাবে না। নিম্নমানের কাপড় অনলাইনে একবার বিক্রি করতে পারলেও পরবর্তীতে কাস্টমার হারাতে হয়। তাছাড়া একজন কাস্টমারের রিভিউ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই ভালো মানের কাপড় দিতে পারলে সে কথা যেমন অনেক কাস্টমারই জানতে পারবে, একইভাবে কাপড়ের মান ভালো না হলে তা বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে৷
অনলাইনে ব্যবসার যুগে বেশিভাগ পণ্য নিয়েই মানুষ অনলাইনে আলোচনা করে, একে অন্যকে জানায়, এমনকি খারাপ পণ্য নিয়ে অনেকেই অন্যদেরকে সচেতন করার জন্য লেখালেখি করে। তাই অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করে লাভ করতে হলে প্রথমেই ভালো মানের কাপড় নিয়ে ব্যবসায় নামা জরুরী।
সুন্দর ফটোশুট করা
বর্তমান যুগ একটি ছবিসর্বস্ব যুগ হয়ে গেছে। যেন সবকিছুই ছবির উপর নির্ভরশীল। তাই আপনার অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করার জন্য প্রথমেই সুন্দর করে ফটোশুট করাটা প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে ‘আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী’ কথাটি আরো একবার প্রমাণিত হয়। ভালো মানের ক্যামেরা অথবা ফোনে পণ্যের ছবি তুলে তা ব্যবসায়িক পেইজ থেকে আপলোড করা জরুরী।
তবে অনেক সময় ডিলারেরে থেকে নেয়া পণ্যের ক্ষেত্রে ডিলার নিজেই কিছু ছবি সরবরাহ করে। সেগুলো দিয়েও কাজ চালানো সম্ভব। আজকাল ছবি তোলার পাশাপাশি অনেকেই ছোট ছোট ভিডিও করে রাখে। তা হতে পারে মডেল সহ পণ্য অথবা শুধুই পণ্য। এবং এসব ক্ষেত্রে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সুন্দর হওয়া কাম্য। শুধুমাত্র সুন্দর ছবি ও ভিডিওর উপর নির্ভর করে অনেক অনলাইন কাপড়ের ব্যবসা কম সময়ের ভিতরই লাভবান হচ্ছে।
অনলাইন স্টোর তৈরি
এরপর অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসার একটি ভালো স্টোর তৈরি করতে হবে। এখানে খেয়াল রাখা জরুরী যে অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে দোকানের অস্তিত্ব নেই তাই এই অনলাইন স্টোরগুলোই কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ করা, পণ্য দেখানো, বিক্রয় নিশ্চিত করার মাধ্যম।
অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসার ক্ষেত্রে পণ্যগুলো সুন্দর করে সাজাতে হবে। সাথে একই কাপড়ের বিভিন্ন রং, ডিজাইন, মাপ ইত্যাদি থাকলে তা উল্লেখ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে স্টোরে পণ্যের সাথে মূল্য জানিয়ে দেওয়া ভালো। স্টোরে এমন ভাবে পণ্যগুলোর ছবি ব্যবহার করতে হবে যেন একজন কাস্টমারের মনে হয় একটি সত্যিকার দোকানে ঠিক যেভাবে প্রত্যেকটি পণ্য দেখতে পেতো এবং পণ্য সংক্রান্ত সকল তথ্য পেতো তার সবই এই অনলাইন স্টোরেও আছে।
শুধুমাত্র সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে না রাখার কারণে, অনেক অনলাইন কাপড়ের ব্যবসার পেইজ দেখে কাস্টমারের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয় না। আবার অনেক সময় শুধুমাত্র সুন্দর উপস্থাপনের কারণে পণ্যের চাহিদা ও বিক্রি বেশি থাকে।
অনলাইনে প্রচার ও প্রচারণা
বর্তমানে চারপাশে অনলাইনে অনেকেই কাপড়ের ব্যবসা করছে। আবার অফলাইনের ব্যবসা তো রয়েছেই। তাই কাপড়ের ব্যবসায় প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এমতাবস্থায় পণ্যের সঠিক প্রচারণা চালানো না গেলে ব্যবসায় ভালো করা সম্ভব নয়। অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করে লাভবান হতে হলে অনলাইনের প্রচার ও প্রসারের পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
অনলাইনে কাপড় বিক্রির ক্ষেত্রে ফেইসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম বেশি ব্যবহৃত হয়। বর্তমান সময়ে ফেসবুক রিলস এবং ইনস্টাগ্রাম স্টোরির সাহায্যে অনেকেই কাস্টমারের নজর কাড়ছে।
তাছাড়া প্রত্যেকটি অনলাইন কাপড়ের ব্যবসার ক্ষেত্রে তার নিজস্ব কাস্টমারের ধরন আছে। সেই নির্দিষ্ট ধরনের কাস্টমারকে বের করে তাকে অনলাইনে পণ্য দেখানোই হল সঠিক প্রচার ও প্রচারণা। যেমন শাড়ি এমন একটি পণ্য যা মূলত মহিলা কাস্টমারদেরকে দেখানো বেশি জরুরী। ফেইসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে বুস্টিং পদ্ধতিতে যেকোনো ব্যবসায় তার পণ্যের ধরন, দাম ইত্যাদি অনুযায়ী কাঙ্খিত কাস্টমারের কাছে পৌঁছাতে পারে।
অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারন জরুরী
অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করতে এসে অধৈর্য হলে চলবে না। একে তো অফলাইন এবং অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসার অনেক প্রতিযোগিতা। তার ওপর কাপড় এমন একটি জিনিস যা বয়স, সময়, ঋতু ইত্যাদি ভেদে নানা রকম ডিজাইন, স্টাইল অহরহ বদলাতে থাকে।
তাছাড়া ফ্যাশন সচেতন মানুষেরা সহজেই এক ধরনের ডিজাইনে একঘেয়েমি বোধ করে। তাই প্রতিনিয়ত পণ্যের ডিজাইন, ম্যাটারিয়াল, স্টাইল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করতে থাকতে হয়। আর প্রথম মুহূর্ত থেকেই ব্যবসায় লাভ হবে এমন কোন কথা নেই। ব্যবসায় মাত্রই সময় নিয়ে এর ভিত্তি গড়ার ব্যাপার থাকে।
তাই অনলাইন কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে অধৈর্য না হয়ে একে সময় দিতে হবে। আর একটি ব্যবসায়ে যত বেশি সময় দেয়া হয়, একে নিয়ে তত ভালো রিসার্চ করা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে ব্যবসায় লাভ করা সম্ভব হয়।
মার্কেট ট্রেন্ড সম্পর্কে অবহিত থাকা
অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে লাভবান হবার কার্যকর একটি উপায় হল পোশাকের ক্ষেত্রে কি মার্কেট ট্রেন্ড চলছে তা খেয়াল রাখা। অনলাইনের ব্যবসা পুরোপুরি চলছেই ট্রেন্ড ফলো করার উপর নির্ভর করে। যখন যেই ডিজাইনের, প্যাটার্নের, ম্যাটেরিয়ালের অথবা স্টাইলের পোশাকে ট্রেন্ড চলছে তা দ্রুত খেয়াল করে সেই ধরনের পোশাক অনলাইন স্টোরে আনার মাধ্যমে ব্যবসাগুলো কম সময়ে বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারে। আর এই বিষয়টি নিয়মিত সফলভাবে করতে পারা মানে অনলাইন ব্যবসায় সফল হওয়ার সুযোগ বেড়ে যাওয়া।
এবং এই ট্রেন্ডগুলোর সম্পর্কে বুঝতে হলে, আগাম ধারণা রাখতে হলে দেশ এবং দেশের বাইরের নানারকম কাপড়ের বাজার নিয়ে ধারণা রাখতে হবে। বিশেষত আমাদের দেশের ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ট্রেন্ডগুলো ফলো করলে বেশ আপডেটেড থাকা যায়।
পরিশেষ
সর্বোপরি সঠিক ধরনের পোশাকে বিনিয়োগ, নিয়মিত মার্কেট সম্পর্কে আপডেটেড থাকা, কাস্টমারের চাহিদা সম্পর্কে বোঝা, এবং ধৈর্য ধরে প্রতিনিয়ত সেই চাহিদার যোগান দেয়ার চেষ্টা করার মাধ্যমে অনলাইন কাপড়ের ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। মূলত এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে, প্রতিযোগিতামূলক অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসার যুগেও সফল হওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুন- বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা।