কিভাবে আমার ব্যবসা সফল করতে পারি? সফলভাবে ব্যবসা শুরু করার জন্য ৭ টি টিপস।
আমাদের মধ্যে অনেকেই বলি ব্যবসা শুরু করতে চাই, অন্যের অধীনে কাজ করতে ভাল লাগে না। কিংবা ব্যবসা নিয়ে আমার খুব আগ্রহ। কিন্তু বাস্তবতা হল ব্যবসা করার জন্য এই আগ্রহ জরুরি হলেও, ব্যবসার ব্যাপারে শুধুমাত্র ধারণা থাকাই এর জন্য যথেষ্ট না।
চ্যালেঞ্জে ভরা বাজারে ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে কিছু কাজ আপনাকে করতেই হবে। আমার ব্যবসা এর অভিজ্ঞতা থেকে আজ সেই কাজগুলো নিয়েই আলোচনা করব।
নিজের ব্যবসার সঠিক বাজার বোঝা
ব্যবসায় করতে গেলে সবচেয়ে প্রথমে নিজের ব্যবসার যে পণ্য বা সেবা তার সঠিক বাজার সম্পর্কে বুঝতে হবে। এর মাধ্যমেই সফল ব্যবসায়ের প্রথম ধাপ পাড়ি দেয়া যায়। দুটো ভিন্ন ধরনের উদাহরণ দেই। ধরা যাক আপনি এলাকায় পার্লারের ব্যবসা শুরু করছেন। সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনার মূল বাজার মহিলা। আপনার এলাকার মহিলারা পার্লারের এক একটি সেবার জন্য কি পরিমান টাকা খরচ করার অবস্থায় আছে তা বুঝে আপনি নিজের ব্যবসাটা পরিচালনা করতে পারেন।
কিন্তু ভাবুন, আপনি বাচ্চাদের খেলনার ব্যবসা করবেন। খেলনা বাচ্চাদের পণ্য হলেও, সে ক্ষেত্রে কিন্তু শুরুতেই বাচ্চা আপনার সঠিক বাজার নয়। আপনি হয়তো বাচ্চাদের আকর্ষিত করার জন্য কিছু কাজ করতে পারেন। কিন্তু আপনার সঠিক বাজার আসলে বাচ্চার বাবা-মা। আপনি কোন এলাকায় ব্যবসা করছেন, সেই এলাকার বাবা-মায়ের আয় কেমন, রুচি কেমন, কেমন খেলনা তারা তাদের বাচ্চাদের জন্য পছন্দ করেন, এসব আগে বুঝতে হবে। এতে করে কেমন পণ্য আপনার ব্যবসায়ের জন্য রাখবেন, কিভাবে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবেন, কিংবা তাদের জন্য নিজের পণ্যের বিজ্ঞাপন কি উপায়ে ভাববেন, এই বিষয়গুলো ঠিক করা যায়। আমার ব্যবসা এর ক্ষেত্রে সবকিছু বাদ দিয়ে প্রথমে সঠিক বাজার চিহ্নিত করার পিছনে, আমি মোট দেড় মাস সময় ব্যয় করি। পরবর্তীতে তার ফলও পেয়েছি।
ব্যবসায়ে সঠিক মানুষ নিয়োগ
একজন ব্যবসায় মালিক সব কাজ একা করতে পারেন না। এমনকি পারলেও তা উচিত নয়। কারণ একজন ব্যবসা মালিককে অনেক দিক নিয়ে ভাবতে হয়। সে যদি এখন প্রতিটি কাজে মনোযোগ দিতে যায় কিংবা প্রতিটি কাজে যদি তাকেই সময় ব্যয় করতে হয় তাহলে কিন্তু কাজের চেয়ে অকাজ বেশি হবে। আপনার ব্যবসায় ছোট কিংবা বড় যাই হোক না কেন সেই অনুযায়ী কিছু লোক না রাখলেই নয়। তবে সেক্ষেত্রে আপনার ব্যবসায় সঠিক মানুষ রাখতে হবে।
আমার ব্যবসা করাকালীন সময়ে, যেটি আমার প্রথম ব্যবসা ও বটে, একজন অভিজ্ঞ শুভাকাঙ্ক্ষী এ কথাটি প্রথমেই আমার মাথায় এমন ভাবে সেট করেছিলেন যে, পরবর্তীতে ব্যবসায় নিয়ে কথা বলতে গেলেই সবাইকে আমি এই একটি উপদেশ অবশ্যই দেই। যোগ্যতার কথায় পরে যাচ্ছি, প্রথমে বলতে চাই ব্যবসায় সফল হতে হলে সৎ লোক প্রয়োজন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ব্যবসার শুরুতেই কিছু আগাম পরিকল্পনা করুন। আমি এক সময় ভাবতাম, যেই পণ্যের ব্যবসা করতে চাই তা সংগ্রহ করে বিক্রি শুরু করে দিলেই ব্যবসায় শুরু হয়ে গেল। বাস্তবতা এমন নয়। যখন সত্যিই আমার ব্যবসা দাঁড় করাতে গেলাম তখন বুঝলাম একটি ব্যবসা শুরু করতে হলে অনেক কিছু আগাম ভাবতে হয়। কোথা থেকে কাঁচামাল আসবে, জনবল কিভাবে পাব, আগামী ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে কী পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন হতে পারে, কাগজপত্রজনিত কি কি প্রস্তুতি প্রয়োজন সহ ব্যবসায় কি পরিমাণ আয় হলে কি ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এর সবই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ। যা বর্তমান সময়ে করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আর্থিক পরিকল্পনা
ব্যবসা সাধারণত জমানো অর্থ অথবা অভিভাবকের দেওয়া আর্থিক সাপোর্ট থেকে করা হয়। পাশাপাশি অনেকে নিজের বিজনেস আইডিয়া বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর সাথে শেয়ার করে সেখান থেকেও সাপোর্ট নেয়। কিন্তু এর কোনটি অসীম নয়। নিজের জমানো টাকা অথবা অভিভাবকের দাওয়াত সাপোর্ট যেমন শেষ হয়, একইভাবে ফলাফল দেখতে না পেলে বিনিয়োগকারীর আগ্রহ নষ্ট হয়।
আমার ব্যবসা শুরু করার সময় আমি একজন বিনিয়োগকারীর সাহায্য নেই। সে সময় আমার অভিজ্ঞ এক বন্ধু আমাকে বোঝায় যে, বিনিয়োগকারীর কাছে কি পরিমান আর্থিক সাহায্য চাইবো তা আগেই হিসাব করা উচিত। বারবার আর্থিক বিষয়ে কথা বলা, নির্দিষ্ট অংক জানাতে না পারা, সময় অসময়ে কাঙ্খিত অর্থের পরিমাণ পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি বিষয় বিনিয়োগকারীর আগ্রহ নষ্ট করতে পারে। তাই একটি ব্যবসা শুরু করতে এবং তা পরিচালনা করতে প্রাথমিকভাবে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে তা আগে হোমওয়ার্ক করে নিজেকে সঠিকভাবে বের করতে হবে। এবং বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ লাভের পর তার সঠিকভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
সময় নষ্ট নিষিদ্ধ
শুনতে কঠিন লাগতে পারে কিন্তু আমার ব্যবসা শুরু করে আমি যে জিনিসটি খুব ভালোমতো বুঝেছি তা হল ব্যবসা করতে গেলে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা যাবে না। আরাম করে কখনো ব্যবসা হয় না। নিজের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যবসার কাজে বিনিয়োগ করতে হবে। এমনকি বিশ্রাম নেওয়ার সময়টুকু চিন্তা করতে হবে এই বিশ্রাম নেয়ার ফলে আপনি আসলে নিজেকে ব্যবসার কাজে আরো নিবিড়ভাবে ব্যস্ত রাখতে পারবেন।
ডকুমেন্টেশন এ নজর
ব্যবসা করতে গেলে অনেকে ভাবে পরিশ্রম করব, টাকা ঢালবো, সময়ের সাথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হবে। ব্যাপারটা এরকম না। এই সব কিছুর পাশাপাশি টেকনিক্যাল দিকে ঠিকঠাক থাকা খুবই জরুরী। আমার যে অভিজ্ঞ বন্ধুর কথা বলছিলাম তার পরামর্শ অনুযায়ী আমি আমার ব্যবসা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র, যেমন কোম্পানির নামের ছাড়পত্র, কোম্পানির নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি প্রথমেই ঠিকঠাক করি। কাগজপত্র নিয়ে কখনো কোন আইনি জটিলতায় পড়া যাবে না। পাশাপাশি ব্যবসার সকল ডকুমেন্টেশন এবং টেকনিক্যাল দিক ঠিক রাখতে যে সকল জনবল প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে হবে।
সকল কিছু রেকর্ড
একটি ব্যবসার অনেক খুঁটিনাটি বিষয় থাকে, একই সাথে থাকে বড় কিছু ধাপ। এর সবকিছু ঠিক রাখতে হবে। আমার ব্যবসা এর ক্ষেত্রে লিখিত এবং ডিজিটাল দুই পদ্ধতিকেই আমি পছন্দ করি। এতে করে একটির ব্যাকআপ হিসেবে আরেকটি কাজ করে। আর যখন আপনি আয়, ব্যয়, সকলের কাজ, ছোট ছোট নানা উদ্যোগের ফলাফল, পরিকল্পনা অনুযায়ী কি হচ্ছে অথবা হচ্ছে না এর সবকিছুই ট্র্যাক রাখতে শুরু করবেন তখন দেখবেন আপনি সহজে বুঝতে পারছেন আপনার কি করা উচিৎ এবং কি করা উচিৎ না।
শেষ কথা
উপরে আমার ব্যবসা থেকে যা অভিজ্ঞতা হয়েছে, ওই আলোকেই একটি সফল ব্যবসা দাড় করাতে কি করণীয় সে পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু এগুলো হচ্ছে বেসিক। এর বাইরেও ব্যবসা ভেদে আপনাকে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে। সে অনুযায়ী করণীয় ঠিক করতে হতে পারে। বেসিক করণীয় ঠিক রেখে পরিস্থতি বিবেচনায় বিভিন্ন পরিকল্পনা অনুসরন করে ব্যবসা পরিচালনা করলে আপনার ব্যবসায়ে অবশ্যই সফল হতে পারবেন।
আরও পড়ুন- দৈনিক আয়ের ব্যবসা।
FAQ
বাসায় বসে করার মত ব্যবসা তো অনেক রয়েছে কিন্তু সব ব্যবসা তো সবাই করতে পারবেনা। এটা আপনার দক্ষতা, সময় এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এর উপর নির্ভর করবে। মোটামুটি সবাই করতে পারবেন, তুলনামুলক সহজ, কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং লাভজনক কিছু ব্যবসা করা যায়, যেমন-
১) টিউশন মিডিয়া
২) ঘরে বানানো খাবার বিক্রি।
৩) টেইলারিং শপ।
৪) ড্রপ শিপিং ব্যবসা।
৫) অনলাইনে বিক্রি (পোশাক, বাচ্চাদের খেলনা, ঘরোয়া গ্যাজেট ইত্যাদি)
বিষয়টা গুগল ম্যাপে ফ্রি ব্যবসা করা নয়। মুলত গুগল ম্যাপে ফ্রিতে আপনি আপনার ব্যবসায়িক লোকেশন সেট করতে পারেন। একটি ব্যবসায়িক প্রোফাইল তৈরি করতে পারেন যেটা গুগলে সার্চ দিলে পাওয়া যাবে। এটি আপনি এডিট ও করতে পারেবেন।
সাধারণত কম পুঁজির ও ছোট সেটআপে করা ব্যবসা গুলোকে ছোট ব্যবসা বলা হয়। এই ব্যবসাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একমালিকানাধিন হয় এবং এগুলোতে ঝুঁকির পরিমাণ ও কম থাকে। এই ব্যবসাগুলোর বার্ষিক বিক্রয় ও কম হয়ে থাকে।