ব্যবসার আইডিয়া হোক অল্প বিনিয়োগে। ৬টি অল্প বিনিয়োগের ব্যবসা
ব্যবসার আইডিয়া থাকাটা মুখ্য ব্যাপার না, সেই আইডিয়াকে সঠিক পরিকল্পনা, বিনিয়োগ ও শ্রম দ্বারা সফল করে তুলতে পারাটাই আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
অল্প বিনিয়োগে ব্যবসা করা যায় কিনা এটি নিয়ে মানুষজন প্রায়ই আমাকে জিজ্ঞাসা করে থাকে। ছোটবেলা থেকেই ব্যবসা সংক্রান্ত ইসুগুলো আমাকে আকর্ষণ করত বেশী। এজন্য আমার আশেপাশের মানুষজন এবং বন্ধুদের সাথে এগুলো নিয়েই আলোচনা ও হত বেশী। তারা ও আমাকে সব সময় এসব নিয়ে জিজ্ঞাসা করত এবং আমি ও আমার আইডিয়া গুলো শেয়ার করতাম। আজ এই লেখাটাতে আপনাদের সাথে ৬টি অল্প বিনিয়োগে ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে জানাব যেগুলো নিয়ে কাজ করলে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকবে।
ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ করা যায় অল্প বিনিয়োগেও
আপনি যদি ছাত্র হোন অথবা স্বল্প বেতনের চাকরিজীবী হন, তাও অল্প বিনিয়োগে ব্যবসা করা সম্ভব। অল্প বিনিয়োগের ব্যবসায় অর্থায়ন এর বিষয়টি তুলনামূলক সহজ। ইচ্ছা থাকলে চাকুরি বা পড়ালেখার ফাঁকে সময় বের করে আপনি ব্যবসা করতে পারবেন। যদি আপনার ব্যবসার আইডিয়া সময় উপযোগী হয় যেটি একইসাথে ইউনিক এবং ক্রেতা আকর্ষণে সক্ষম, তাহলে কম পুঁজিতে ও একটি সফল ব্যবসা দাড় করানো সম্ভব।
আর যদি আপনার হাতে অফুরন্ত সময় থাকে, তাহলে আপনি সময়গুলিকে আপনার ব্যবসা বড় করবার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন। বিন্দু বিন্দু শিশির থেকেই জলাধার তৈরি হয়।
অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া এর তালিকা
আপনার নিজের ব্যবসা শুরু করার স্বপ্ন দেখছেন কিন্তু মূলধন কম? চিন্তায় পড়েছেন যে অল্প টাকায় ব্যবসার আইডিয়া আছে কিনা! তাহলে আপনার জন্য ৬টি অল্প বিনিয়োগে ব্যবসার কথা শেয়ার করছি।
- ফটোগ্রাফি
- ব্যক্তিগত বা ভার্চুয়াল সহকারী
- ইভেন্ট পরিকল্পনা সেবা
- অনলাইন কোর্স এবং টিউটরিং
- ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা
- ব্লগিং
ফটোগ্রাফি
এটি সময়ের অন্যতম একটি অল্প বিনিয়োগে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া। আপনি যদি ফটোগ্রাফিতে দক্ষ হন এবং পেশাদার ফটোগ্রাফার হওয়ার দক্ষতা আপনার থাকে তবে আপনি একটি পেশাদার ক্যামেরা, লেন্স, ট্রাইপড এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কিনতে বা ভাড়া নিতে পারেন। আপনই এক লক্ষ টাকারও কম বিনিয়োগে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বিবাহের ফটোগ্রাফি, পোর্টফোলিও শ্যুট, ইভেন্ট ফটোগ্রাফির একটি বড় সুযোগ রয়েছে এবং এককালীন বিনিয়োগে আপনি একটা লম্বা সময় ভাল ইনকাম করতে পারবেন।
পেশাদার ফটোগ্রাফি্তে ভালো কিছু করতে চাইলে আপনার দরকার ভালো মানের ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং পেশাদার প্রশিক্ষন। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড এর ভালো মান এর ক্যামের পাওয়া যায়। যেমন ক্যানন, নিকন বা পেনটেক্স ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত বা ভার্চুয়াল সহকারী
একজন ব্যক্তিগত বা ভার্চুয়াল সহকারী অনসাইট না হয়েই সেক্রেটারিয়াল বা ফ্রন্ট-ডেস্কের অনেক কাজ সম্পাদন করে। এই পেশার ব্যক্তিরা বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের জন্য বাড়ি থেকে কাজ করে। এক কথায় এই পেশার জড়িতরা ভার্চুয়াল অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করে। ফটোগ্রাফির মতই এটিতেও ভাল পরিমান ইনকাম করা যায়। এতে ল্যাপটপ সহ টুকটাক আরও কিছু অফিসিয়াল কাজের সহায়ক কিছু জিনিষের জন্য কিছু বিনিয়োগ লাগবে। তবে ৫০-৬০ হাজার টাকার মধ্যেই এই বিনিয়োগ রাখা সম্ভব। অল্প বিনিয়োগে এটি একটি নতুন ব্যবসার আইডিয়া।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস
আপনি যদি একজন অত্যন্ত সংগঠিত এবং ক্রিয়েটিভ ব্যক্তি হয়ে থাকেন, আপনার কমিউনিকেশন স্কিল ভালো হয়ে থাকে, তাহলে আপনি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস শুরু করতে পারেন। এটি একটি অন্যতম ব্যবসার আইডিয়া। কম পূঁজিতে লাভজনক ব্যবসা এটি। আজকের দিনে অনেকেই তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম সুন্দর ভাবে করার জন্য পেশাদার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস নিয়ে থাকেন। বিয়ে, গায়ে হলুদ, কর্পোরেট প্রোগ্রাম বা গেট টুগেদার পার্টি, যেটাই হোক, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এরকম প্রোগ্রাম গুলোকে অত্যন্ত পেশাদারভাবে ম্যানেজ করে থাকে। এই ব্যবসাটি শুরু করতে খুব বেশী পুঁজি লাগবেনা, তবে নিয়মিত কাজ পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই শক্ত পেশাদার এবং ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।
অনলাইন কোর্স এবং টিউটরিং
আপনি কোন ব্যাপারে দক্ষ? যোগব্যায়াম? বেকিং? ওয়েব ডিজাইন? পেইন্টিং? আপনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ, সেটির উপরে ভার্চুয়াল ক্লাস অফার করে অন্যদের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে যেমন সহায়তা করতে পারেন, তেমনি এটা আপনার অন্যতম আয়ের উৎস ও হতে পারে। ডাউনলোডযোগ্য নির্দেশনামূলক প্যাকেজ এবং ভিডিও তৈরি করুন, অথবা ক্লায়েন্টদের সাথে রিয়েল-টাইম স্কাইপে বা জুম ক্লাসের সময়সূচী প্লান করুন। ভার্চুয়াল বা হোম ভিত্তিক টিউটরিং সার্ভিস ও চালু করা যায়। এই ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে অল্প বিনিয়োগেও কাজ করা সম্ভব।
ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা
আপনার যদি বিপণন বা সেলসের অর্থাৎ মার্কেটিং এর অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে একটি একক ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি হল একটি কম খরচের ব্যবসায়িক ধারণা যা আপনি মোটামুটি দ্রুততম সময়ে শুরু করতে এবং চালাতে পারেন। আপনার যদি সেলস বা মার্কেটিং ব্যাকগ্রাউন্ড না ও থাকে এবং আপনি এই ক্ষেত্রে আগ্রহী হন, তাহলে আপনার দক্ষতা বিকাশের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের অনলাইন কোর্সগুলি নিতে পারেন।
মার্কেটিং সম্পর্কে সেরা কিন্তু সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং জিনিসগুলির মধ্যে একটি হল এটি সর্বদা চেঞ্জ হতে থাকে। অতএব, যদি আপনার কাছে গল্প বলার এবং শেখার দক্ষতা থাকে, তাহলে একটি ডিজিটাল মার্কেটিং ফার্ম হল এমন একটি ব্যবসা যা আপনি দ্রুত এবং কম বিনিয়োগে শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসার আইডিয়া আমার খুবই পছন্দের একটি আইডিয়া।
ব্লগিং
আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা ক্ষেত্র সম্পর্কে উৎসাহী হন এবং লিখতে বা ক্যামেরার সামনে কাজ করতে পছন্দ করেন তবে একটি পেশাদার ব্লগ বা ভ্লগ শুরু করার কথা বিবেচনা করতে পারেন। একটি ব্লগ শুরু করার জন্য আপনার যা দরকার তা হল একটি কম্পিউটার এবং একটি ওয়েবসাইট৷ যদি উন্নতমানের কন্টেন্ট দিয়ে আপনার ব্লগে উল্লেখযোগ্য ভিজিটর আনতে পারেন, তাহলে এটি হতে পারে অন্যতম আয়ের উৎস।
অন্যদিকে, Vlog শুরু করার জন্য একটি উচ্চ-মানের ক্যামেরা, ভিডিও-সম্পাদনা সফ্টওয়্যার এবং বিভিন্ন AV সরঞ্জামে প্রয়োজন অনুযায়ী বিনিয়োগ করা উচিত। অর্থোপার্জনের জন্য, আপনি আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের স্থান অফার করতে পারেন, ভিডিও স্পনসর খুঁজে পেতে পারেন, Youtube বা ফেসবুক এর মনিটাইজেশন করতে পারেন। সাম্প্রতিক কালে জনপ্রিয় একটি আয়ের উৎস এটি যেটা মোটামুটি অল্প বিনিয়োগে ব্যবসার আইডিয়া এর মধ্যে অন্যতম।
সম্পর্কিত পোস্ট- ইউনিক বিজনেস আইডিয়া।
অল্প বিনিয়োগে ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ করা উচিত কিনা?
অল্প বিনিয়োগে ব্যবসা করলে আপনার জন্যই সুবিধা। আজকাল যেসব বড় বড় কোম্পানি দেখা যায়,তারা খুব ছোট থেকেই শুরু করেছিলো। ব্যবসার সব থেকে ভাল ব্যাপার হলো,পুরো ব্যাপারগুলি আপনার আয়ত্ত্বে থাকছে। ছাত্র বা চাকুরীজীবি হলেও সমস্যা নেই। কারণ প্রতিটা মানুষের কিছু সময় থাকে যেগুলোতে তারা সময় দিতে পারে। দিন শেষে এমন একটি অল্প বিনিয়োগে ব্যবসার আইডিয়া আপনাকে চূড়ান্ত সাফল্য দেখাতে পারে।
আপনই যদি একটি জবের পাশাপাশি কিছু করতে চান অথবা আপনি যদি ছাত্র অবস্থায় কিছু করতে চান, তাহলে উপরোক্ত ব্যবসা গুলি করতে পারেন। তবে কিছু ব্যবসায় শ্রম একটু বেশি যদি শুরু দিকে গিয়ে থাকে, তবুও দিনশেষে আপনি একটি ভাল ইনকাম করতে পারবেন ব্যবসাগুলো থেকে।
অল্প বিনিয়োগে পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া কেমন?
সাধারণ ধারনা হচ্ছে, অল্প বিনিয়োগে পাইকারি ব্যবসা সম্ভব নয়। অথচ, একটু ভেবে দেখলে বুঝা যাবে, অল্প বিনিয়োগেও পাইকারি ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। ষ্টেশনারী, গার্মেন্টস আইটেম, মুদিমাল, এগ্রো ব্যবসা সহ বেশ কিছু ব্যবসা আপনি অল্প বিনিয়োগে দিয়েই পাইকারি শুরু করতে পারেন, প্রথম পর্যায়ে। আপনার ব্যবসা চালু হলে, লেনদেন বাড়তে থাকলে এবং আপনার ব্যক্তিগত লেনদেন ভালো হলে একসময় বড় পার্টিরা নিজ থেকেই আপনাকে ইনভয়েস টু ইনভয়েস বাকিতে পন্য দিবে।
উপরে উল্লিখিত ব্যবসা গুলো ছাড়া ও কিছু কম টাকায় লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া পেতে পারেন এখানে।
১০ হাজার টাকায় ২৫টি ব্যবসার আইডিয়া
ব্যবসার আইডিয়া ২০২৩
২০২৩ এ বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে, এমন পাঁচটি ব্যবসা হতে পারে নিম্নরূপ।
- স্টুডিও এপার্টমেন্ট ব্যবসা
- বেবি কেয়ার সেন্টার
- ইনডোর গেম স্পেস ব্যবসা
- ভার্চুয়াল ফ্যাশন মল
- ভার্চুয়াল ডেটিং এপ
- ড্রপশিপিং ব্যবসা
FAQ
গ্রামে অল্প টাকায় ব্যবসা করার সুযোগ বেশী। নিচের ব্যবসা গুলো গ্রামে অল্প টাকা বিনিয়োগে শুরু করতে পারেন।
১। মোবাইল রিপেয়ারিং।
২। টেইলারিং শপ।
৩। সাইকেল পার্টস এর ব্যবসা।
৪। মোবাইল রিচারজ, কম্পিউটার প্রিন্টিং ও ফটোকপি এর দোকান।
৫। বিউটি পার্লার।
অনেকে ভাবেন অল্প টাকায় পাইকারি ব্যবসা কিভাবে সম্ভব? পাইকারি ব্যবসায় অনেক বিনিয়োগ লাগে, বিষয়টি আংশিক সত্য। নিচের পাইকারি ব্যবসাগুলো অল্প টাকা বিনিয়োগে করা সম্ভব।
১। পাইকারি মসলার ব্যবসা।
২। পাইকারি চাউলের ব্যবসা।
৩। পাইকারি মাছের খাদ্যের ব্যবসা।
৪। পাইকারি বেকারি আইটেম এর ব্যবসা।
৫। পাইকারি কাপড়ের ব্যবসা।
১০ হাজার টাকায় নিচের ব্যবসাগুলো করা যায়।
১। ফুচকার ব্যবসা।
২। মোবাইল রিচারজ এর ব্যবসা।
৩। লাঞ্চ সাপ্লাই।
৪। পোষা প্রাণীর খাবার এর ব্যবসা।
৫। টিউশন সার্ভিস।
৬। টি স্টল এর ব্যবসা।
৭। ফুটপাথে জুতার ব্যবসা।
৮। ফুটপাথে কাপড়ের ব্যবসা।
৯। সবজির ব্যবসা।
১০। মাছের ব্যবসা।
মুলত কম পুঁজি অথবা শুরুতেই ঝুঁকি না নিয়ে ব্যবসাটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে তার পর বিনিয়োগ করার মানসিকতার কারনেই মানুষ ছোট ব্যবসার প্রতি উৎসাহিত হয়।