লাভজনক স্যান্ডেল ব্যবসার আইডিয়া, নিশ্চিত সফলতা

লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া

লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে স্যান্ডেল ব্যবসা আপনাকে নিশ্চিত সফলতা এনে দিতে পারে যদিও সম্ভাবনা সত্বেও এই ব্যবসাটিতে খুব বেশী লোক যুক্ত নন। এই ব্যবসাটি কিভাবে শুরু করা যায়, ব্যবসাটিতে লাভ কেমন এটা অনেকেই জানেন না। অথচ লাভের মার্জিন এবং চাহিদা বিবেচনায় স্যান্ডেল ব্যবসাটি একটি অন্যতম লাভজনক ব্যবসা। ব্যবসাটি পুরনো কিন্তু ব্যবসাটি সম্পর্কে ভালোভাবে না জানার দরুন হয়তো এই ব্যবসাটিতে তেমন বেশী লোক যুক্ত হননি।

অনেকের কাছে কিছুটা অবিশ্বাস্য লাগতে পারে কিন্তু স্যান্ডেল ব্যবসায়ে খুচরা বিক্রেতারা ৫০% থেকে ১০০% পর্যন্ত ও লাভ করে থাকে। আজকের আর্টিকেল এ আমরা স্যান্ডেল ব্যবসার বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি এই লেখাটি যারা নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করতে চাচ্ছেন তাদের কাজে লাগবে।

কেন এটি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া?

আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারেন, এত ব্যবসা থাকা সত্ত্বেও স্যান্ডেল এর ব্যবসা কেন লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি হচ্ছে, বেশ কিছু লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া রয়েছে। কিন্তু লাভের মার্জিন, চাহিদা ও নিরাপদ বিবেচনায় স্যান্ডেল এর ব্যবসাটির একটা সম্ভাবনা রয়েছে, তাই এই লাভজনক ব্যবসাটি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।

আপনি কি রাস্তার পাশে চলাফেরা করার সময় রাস্তার ধারে ভ্যানগাড়ীতে বা বিভিন্ন জুতার দোকানে জুতা বিক্রি করতে দেখেছেন? বাসায় নিয়মিত ব্যবহার বা বাথরুমে ব্যবহার এর জন্য রাবার এর স্যান্ডেল বিক্রি করতে মাঝে মাঝে দেখে থাকবেন। এসব ব্যবসায়ে বিক্রি যথেষ্ট ভালো এবং এদের লাভের পরিমাণ শুনলে আপনি চমকে যাবেন। ১০০ পিস স্যান্ডেল তৈরি করতে আপনার ৩০ টাকা প্রতি পিস এ খরচ পড়তে পারে। উৎপাদন বাড়ালে প্রতি পিস উৎপাদনে খরচ আরও কমে আসতে পারে।

পাইকারি পর্যায়ে বা দোকানদারদের কাছে এটি ৩৫-৩৭ টাকা পিস হিসেবে বিক্রয় করলে আপনার মোট লাভ থাকে ২০% থেকে ২৫% । সাধারণত পাইকাররা দোকানদার কাছে এটি ৪০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করে থাকে । দোকানদাররা কাস্টমার এর কাছে প্রতি পিস ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ও বিক্রি করে থাকে। এতে পাইকার পর্যায়ে প্রায় ১৫%-২০% এবং খুচরা দোকানদাররা প্রায় ১০০% লাভ করে থাকে। উৎপাদক পর্যায়ে মোট লাভ থাকে ২০% থেকে ২৫% পর্যন্ত।

উপরের প্রতিটি পর্যায়ে লাভের মার্জিন লক্ষ্য করুন। আশা করি বুঝতেই পারছেন, কেন এটি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া। নিম্নে স্যান্ডেল বিনিয়োগ, উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরন পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

স্যান্ডেল উৎপাদন এ বিনিয়োগ কেমন লাগতে পারে?

জায়গা ভাড়া নিয়ে ছোটখাটো একটি কারখানা স্থাপনের জন্য যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল সহ আ্রপনার ৩০০০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ লাগতে পারে। যদি স্থায়ী যন্ত্রপাতি নিয়ে মোটামুটি বড় বিনিয়োগ করতে চান তাহলে ৭০০০০০ টাকা থেকে ১০০০০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ লাগতে পারে।

তবে যতই লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া হোক না কেন, স্যান্ডেল এর ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে ছোটখাটো আকারেই শুরু করা ভালো। পরবর্তীতে বাজার এর চাহিদা বুঝে, বিক্রয়ের অবস্থা দেখে বড় বিনিয়োগ এ যাওয়া যেতে পারে। এটা যে কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে আবশ্যদিয়াব

স্যান্ডেল এর ব্যবসায়ে বিবেচ্য বিষয়

পাইকারি স্যান্ডেল এর ব্যবসা ও বেশ লাভজনক ব্যবসা। পাইকারি ব্যবসা করতে চাইলে মোটামুটি বেশী পরিমাণে উৎপাদন করে এমন কোন উৎপাদক এর সাথে কণ্টাক্ট করতে পারেন। প্রয়োজনে অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখতে পারেন। এবং অর্ডার বেশী পরিমাণে দিবেন। এতে আপনি ভালো রেট পাবেন এবং বিক্রির আগে অন্যদের চাইতে এগিয়ে থাকবেন।

পাইকারি ব্যবসায়ে এটা একটা বড় ফ্যাক্টর। ভালো রেট এ কিনতে পারলে আপনি অন্য পাইকারদের চেয়ে কম দামে একই মানের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। এতে আপনার বিক্রি এবং লাভ দুটোই বাড়বে। পাইকারি শুরু করতে গেলে প্রাথমিকভাবে আপনি ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ এর মধ্যে শুরু করতে পারেন।

খুচরা বিক্রি করতে চাইলে ভালো পজিশন এ দোকান লাগবে। ভালো পজিশন বলতে লোকজনের আনাগোনা বেশী এমন স্থান। অবশ্যই দোকানটি মানুষের চোখে পড়ার মত জায়গায় হতে হবে। এক্ষেত্রে দোকান ভাড়া, অগ্রিম এবং চলতি বিনিয়োগ মিলিয়ে আপনার ১ লাখ থেকে ১.৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ লাগতে পারে। পাইকারি হলে ও পুঁজি কম লাগে বিধায় এটি ছোট ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে ও বিবেচনা করা যায়।

যদি আপনার ৬-৭ লাখ টাকা পূঁজি থাকে তাহলে উৎপাদনমূখী চিন্তা ভাবনা করতে পারেন। অন্যতম একটি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া হলেও এটির উৎপাদন প্রক্রিয়া তেমন জটিল নয়। তাই উৎপাদনমূখী চিন্তা ভাবনা করা যেতে পারে।

স্যান্ডেল এর উৎপাদন এ যাওয়ার পূর্বে কি করণীয়?

স্যান্ডেল এর ব্যবসা এর মত লাভজনক উৎপাদনমুখী ব্যবসার আইডিয়া এর ক্ষেত্রে উৎপাদন এর পরিকল্পনায় প্রথমেই আসবে কারখানা স্থাপন এর বিষয়টি। কারখানা স্থাপনের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে।

  1. সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা।
  2. বিদ্যুৎ সংযোগ।
  3. পরিবেশ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
  4. পরিবেশ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
  5. পরিবেশ অধিদপ্তরর এর ছাড়পত্র সহ প্রয়োজনীয় সরকারী দপ্তর এর অনুমতি।
  6. প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ জনবল।
  7. প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
  8. প্রয়োজনীয় কাঁচামাল।

স্যান্ডেল কারখানা স্থাপনে কি কি যন্ত্রপাতি প্রয়োজন?

  1. রোলার।
  2. হান্টার।
  3. কাটার মেশিন।
  4. সেলাই মেশিন।
  5. হাইড্রোলিক প্রেস।
  6. হাতুড়ি। ডাইস অথবা ডিজাইন মেশিন।
  7. ফ্রেম মেশিন।
  8. অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি।

স্যান্ডেল উৎপাদনে কি কি কাঁচামাল প্রয়োজন?

  1. রাবার।
  2. চায়না কে।
  3. বেলি।
  4. মবিল।
  5. ফোম।
  6. পেস্টিং।
  7. রাবার শীট।
  8. অন্যান্য কাঁচামাল।

স্যান্ডেল বাজারজাত কিভাবে করবেন?

স্যান্ডেল উৎপাদন এর মত লাভজনক ব্যবসা ও ব্যর্থ হতে পারে যদি আপনি সঠিকভাবে এটি বাজারজাত করতে না পারেন। আপনি সরাসরি পাইকারদের নিকট বিক্রি করতে পারেন। অথবা নিজস্ব  বিক্রয় কর্মী রেখে খুচরা এবং পাইকারি বিক্রেতাদের নিকট বিক্রি করতে পারেন।

নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠিত করা এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা থাকলে নিজস্ব বিক্রয় কর্মী রেখে বাজারজাতকরণ করাই উত্তম। যেটাই করেন না কেন, বাজারজাতকরনের জন্য আপনার শক্তিশালী একটা নেটওয়ার্ক অবশ্যই থাকতে হবে। শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আপনার বিক্রয় বাড়াতে সাহায্য করবে। বিক্রয় বাড়লে ব্যবসা বাড়বে এবং লাভ ও বাড়বে। তবেই আপনার ব্যবসাটি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে পরিগণিত হবে। সাধারনত শহরাঞ্চলে এই ব্যবসাটি ভালো করা যায় বিধায় এই ব্যবসাটিকে শহরে ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে ও বিবেচনা করা যায়।

স্যান্ডেল এর ব্যবসা বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর একটি, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অন্য যেকোন ব্যবসার মতই এ ব্যবসাতে ও সফল হতে গেলে সঠিক পরিকল্পনা এবং লেগে থাকার ব্যাপারটি বেশী জরুরি।

আরও পড়ুন-

চা পাতার ব্যবসা

গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া

FAQ

সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কি?

প্রচলিত আইন মেনে যেসব ব্যবসা করা হয় সেগুলোর মধ্যে খাবারের ব্যবসা সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

5 লাখ টাকা দিয়ে কি ব্যবসা করা যায়?

৫ লাখ টাকা দিয়ে নিচের ব্যবসা গুলো করা যেতে পারে।
১। স্যান্ডেল এর ব্যবসা।
২। ষ্টেশনারী আইটেম এর ব্যবসা।
৩। খাবার এর ব্যবসা।
৪। ফার্মেসি।
৫। পাইকারি চাউল এর ব্যবসা।

এক লক্ষ টাকা দিয়ে কি ব্যবসা করা যায়?

এক লক্ষ টাকা দিয়ে নিচের ব্যবসা গুলো করা যেতে পারে।
১। মোবাইল টপ আপ এবং বিকাশ/নগদ/রকেট এর দোকান।
২। ফুডকার্ট।
৩। মোবাইল টি স্টল।
৪। মোবাইল জুসবার।
৫। ফল এর দোকান।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।