ফার্মেসী ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন এবং লাভবান হওয়ার টিপস

ফার্মেসী ব্যবসা

ফার্মেসী ব্যবসা বর্তমান সময়ে একটি লাভজনক ব্যবসা। স্বল্পশিক্ষিতরাই শুধু নয়, অনেক উচ্চশিক্ষিত যুবকেরাও আজকাল এই ব্যবসায়ের দিকে ঝুঁকছে। চাকরির বাজারের সোনার হরিণ খুঁজতে গিয়ে হয়রান হবার চেয়ে এমন একটি ব্যবসায় শুরু করে নিজেকে স্বাবলম্বী করা ভালো। তবে এই ব্যবসায় শুরু করার আগে যেমন কিছু বিষয় জানতে হবে, তেমনই এই ব্যবসায়ে লাভ করতে চাইলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। 

কিভাবে শুরু করবেন ফার্মেসী ব্যবসা?

ফার্মেসী ব্যবসা আর দশটা সাধারণ ব্যবসার মতো না কারন এই ব্যবসা করা হয় জীবন বাঁচানোর উপাদান ওষুধ নিয়ে। তাই এই ব্যবসা শুরু করার প্রস্তুতিতে আছে কিছু ভিন্নতা, কিছু প্রয়োজনীয় কাজ। নিম্নে ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করার কিছু ধাপ দেয়া হল।

৩ মাসের স্বল্পমেয়াদী ফার্মেসী কোর্স

ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করার জন্য একটি তিন মাসের সি ক্যাটাগরির ফার্মেসী কোর্স করতে হয়। এই কোর্সের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল। দেশের নানা কেমিস্ট এবং ড্রাগিস্টস সমিতির সদস্যরা মিলে এই কোর্সগুলো পরিচালনা করে থাকেন।

ফার্মেসী কোর্সটি করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা প্রয়োজন। প্রথমেই এসএসসি বা সমমানের একটি সার্টিফিকেট অর্জন করতে হবে। আর বয়স হতে হবে ১৭ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। ফার্মেসী কোর্স যে খুব ব্যয়বহুল তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশে মোটামুটি সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যেই এই কোর্স সম্পন্ন করা সম্ভব।

তথ্যসুত্র- বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল

ট্রেড লাইসেন্স এবং ড্রাগ লাইসেন্স সংগ্রহ

ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স এবং ড্রাগ লাইসেন্স সংগ্রহ করার কোনো বিকল্প নেই। যে কোন ব্যবসা শুরু করতেই ট্রেড লাইসেন্স  সংগ্রহ করতে হয়। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদথেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়া যায়। মূলত ব্যবসায়ের জায়গা এবং ধরণের উপর নির্ভর করে কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার টাকার মধ্যে লাইসেন্স করা সম্ভব।

অপরদিকে, ড্রাগ লাইসেন্স ব্যতিত ঔষধের ব্যবসা শুরু করা সম্ভব না। বর্তমান সময়ে খুব সহজেই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে ফরম ডাউনলোড করে ড্রাগ লাইসেন্স করানো সম্ভব। ড্রাগ লাইসেন্স করতে খরচ হতে পারে ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকার মত। ড্রাগ লাইসেন্স সাধারণত, ৯০ কার্যদিবসের মধ্যেই সংগ্রহ করা যায়। ড্রাগ লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। 

  • দোকান মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
  • ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি
  • ট্রেজারি চালানের মূল কপি
  • ফার্মেসী ফাউন্ডেশন কোর্স সার্টিফিকেটের ফটোকপি
  • ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট
  • দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্র
  • অঙ্গীকারনামা
  • মডেল ফার্মেসী হলে নিয়োজিত গ্রাজুয়েট, এ, বি, সি-গ্রেড ফার্মাসিস্টের রেজিস্ট্রেশনের সত্যায়িত কপি।

মনে রাখা জরুরি যে, দুই বছর পর পর ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। দোকান যদি পৌর এলাকায় হয় তাহলে নবায়ন ফি ১৮০০ টাকা আর পৌর এলাকার বাইরে হলে ৭০০ টাকা। এসব ফি’র সাথে ভ্যাট যোগ হয়। এই দুই লাইসেন্স পাওয়ার পর একজন উদ্যোক্তা ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করতে, কাগজপত্রের দিক থেকে প্রস্তুত। 

অন্যান্য প্রস্তুতিঃ এতক্ষন তো কাগজ সম্পর্কিত কাজগুলো আলাপ করা হলো তবে র বাইরে আরো নানা পদক্ষেপ নিয়ে ধীরে ধীরে একটি ফার্মেসী ব্যবসা দাঁড় করাতে হয়। 

সম্পর্কিত পোস্ট- পার্টনারশিপ ব্যবসা।

দোকান ভাড়া করা

ঔষধের ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমেই  একটি দোকান ভাড়া নিতে হবে। মালিকের নিজের জায়গায় দোকান থাকলে বিশাল এক খরচ বেঁচে যাবে।  তবে দোকান দেবার আগে অবশ্যই সঠিক স্থান নির্বাচন করতে হবে। লোক সমাগম বেশি হয়, বাজারের ভিতর, মেডিকেলের পাশে কিংবা জনবহুল আবাসিক এলাকার মাঝামাঝি স্থানে ফার্মেসী ব্যবসা বেশি চলে। 

ফার্মেসী ব্যবসার জন্য ঔষধ সংগ্রহ করা

ফার্মেসী ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে অবশ্যই ঔষধ কোথায় থেকে সংগ্রহ করতে হয় তা ভালোমতো জানতে হবে। যদিও বর্তমানে ঔষধ কোম্পানিগুলো তাদের লোকের মাধ্যমে এমনভাবে পোঁছে যায় যে, ঔষধ সংগ্রহ করা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরাই ফার্মেসী ব্যবসায়ের ঔষধ  পৌঁছে দিয়ে যায় । এবং ঔষধ বিক্রি করে টাকা পরিশোধের সুযগ আছে। তবে কিছু নামকরা কোম্পানির ঔষধ অগ্রিম টাকা কিনতে হয়। 

বাংলাদেশে  ঔষধের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হচ্ছে ঢাকার মিটফোর্ডে। এখানে বিভিন্ন ধরণের ঔষধ পাইকারি দামে পাওয়া যায়। ফার্মেসী ব্যবসায়ে এলে নকল ঔষধ চিনতে পারতে হবে। 

ফার্মেসী ব্যবসা কেমন লাভজনক?

ফার্মেসী ব্যবসা একটি অন্যতম লাভজনক ব্যবসা। ঔষধ এমন জিনিস যা অতি প্রয়োজনীয় এবং এই প্র্যোজন ফুরানোর উপায় নেই। জন্ম থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নানা কারণে নানা সময়ে মানুষ ছোট বড় নানান  ঔষধ সেবন করে।  ফার্মেসী ব্যবসায় ঔষধ প্রতি ১০-১২ শতাংশ লাভ করা সম্ভব। আবার কিছু ঔষধ আছে যেগুলোতে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্তও লাভ করা যায়। 

সম্পর্কিত পোস্ট- ৩ লাখ টাকার ব্যবসা

ফার্মেসী ব্যবসায়ে লাভ করতে কি কি কৌশল অনুসরণ করবেন? 

পাড়া মহল্লায় বর্তমানে প্রচুর ফার্মেসীর দোকান হচ্ছে। তাই  প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিছু কৌশল অনুসরণ করে এর মাঝেও লাভজনক ফার্মেসী ব্যবসায় করা সম্ভব। 

  • কাষ্টমারের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। প্রেসক্রিপশনটি নিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো দিয়ে খাওয়ার নিয়ম ও সময় সম্পর্কে একবার নিজ থেকে বলা ভালো। যাবার সময় ধন্যবাদ দেবার অভ্যাস করা উচিৎ। 
  • বয়স্ক কাষ্টমারদের বসার ব্যবস্থা রাখা ভালো।
  • দোকানে কখনো কোনো বিতর্কিত বিষয় বা ধর্ম ও রাজনীতির মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আলোচনা করা ঠিক না। 
  • এলাকার বয়স্ক এবং অসচ্ছল রোগীদের বিনামূল্যে ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেয়া যায়। এই যত্নের বিনিময়ে তাদের কাছে নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করা সহজ হয়। 
  • বাজেটে সম্ভব হলে প্রতি মাসে একদিন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে তা দোকানে জন্য সুনাম বয়ে আনে।
  • প্রতি ২ মাসে একবার বিনা মূল্যে ২০/২৫ জনের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে দিতে পারেন। তাতে দোকানের প্রতি লোকের আগ্রহ বাড়ে। দোকানে আনাগোনা বাড়লে, তাদের কাছেই ব্যবসায়ও করা যায়। 
  • কোনো অবস্থাতেই মেয়াদবিহীন ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। একবার এই বদনাম দোকানের নামে লাগলে তা বিপদজনক। 
  • কোনো ওষুধ দিতে না পারলে তা লিখে রাখতে হবে ও পরবর্তীতে এনে রাখতে হবে। তাতে করে কাস্টমার অন্য দোকানে যাবে না। 
  • ওষুধের নাম জলদি মনে রাখা ও তাকগুলো সঠিকভাবে সাজিয়ে রাখার কারণে অল্প সময়ে বেশি বিক্রি করা সম্ভব হয়। 

এই ব্যবসা শুরু করার জন্য কেমন পুঁজি লাগবে?

ফার্মেসী ব্যবসার জন্য ভাল পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হয়। যদিও দোকান ভাড়া না নিয়ে নিজের মালিকানাধীন যায়গায় ব্যবসা শুরু করলে  খরচ কম হয়।  ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পুঁজি দরকার হয়। দোকান ডেকোরেশন,  বিভিন্ন ধরণের ঔষধ কেনা, লোক রাখাসহ অনেক খরচই রয়েছে। প্রথম দিকে কিনে বিক্রি করতে হলেও পরবর্তীতে কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বাকিতে ঔষধ নিয়ে, বিক্রি করে পরিশোধ করা যায়। 

সম্পর্কিত পোস্ট- বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা

পরিশেষ

ফার্মেসী ব্যবসায়ে স্বল্প বিনিয়োগে লাভবান হওয়া কঠিন। এছাড়া এই ব্যবসায়ে সফল হতে চাইলে ফার্মেসী কোর্স করে ভালোভাবে জেনে বুঝে নামা উচিত। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক জায়গা নির্বাচন করে ব্যবসাটি করতে পারলে ফার্মেসী ব্যবসা একটি নিরাপদ ও লাভজনক ব্যবসা।

আরও পড়ুন- ১০ লাখ টাকার ব্যবসা

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।