নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান? জেনে নিন কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন?
শুধুমাত্র ব্যবসা করার আগ্রহ নিয়েই নতুন একটি ব্যবসা শুরু করে দেয়া উচিত না। কারণ অর্থ ও আগ্রহ নিয়ে ব্যবসায় শুরু তো করা যায় কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদী হয় না। একটি নতুন ব্যবসা নিয়ে যদি সফলতার মুখ দেখতে চান তাহলে কিছু জিনিস আগেই ঠিক করতে হবে৷ আজকের ব্লগ এ আলোচনা করা হবে কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন, এ সম্পর্কিত কিছু অসাধারন টিপস।
যদি আপনি একই সাথে কিছু নতুন ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে অবশ্যই নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে এই লেখাটি দেখে নিতে ভুল করবেন না।
বাজার বোঝা ও স্থান নির্বাচন
কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন, এ বিষয়টি যেকোন নতুন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে একজন নতুন ব্যবসায়ির মাথায় ঘুরবে, এটাই স্বাভাবিক।
প্রতিটি পণ্যের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা বাজার অর্থাৎ ক্রেতা। প্রথমে এসে বাজারটি বুঝতে হবে। উদাহরণস্বরূপ আপনি নারীকেন্দ্রিক পণ্য বিক্রি করলে তা সরাসরি কী পরিমান নারী ক্রয় করে অথবা তার হয়ে কী পরিমাণ পুরুষ ক্রয় করে, শিশুদের পণ্য বিক্রি করলে তার ক্ষেত্রে বড়দের কী ভূমিকা, ব্যবসার পণ্য বা সেবাটি শহর না গ্রামাঞ্চলের জন্য বেশি উপযুক্ত, এই ধরনের বিভিন্ন বিষয় দিয়ে বাজার বুঝতে হয়।
এবং শুধু বাজার বোঝা নয় একই সাথে নিশ্চিত করতে হয় স্থান নির্বাচন। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে যদিও এই কাজটি নেই। কিন্তু অফলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে স্থান খুবই জরুরী বিষয়। ধরা যাক মুদির দোকান, এই ধরনের দোকান কিন্তু প্রতি গলিতে গলিতে অথবা বাজারের ভিতর দিলেই লাভের মুখ দেখা যাবে। এমন কোন রাস্তা যেখানে মানুষ গাড়িতে চলমান অবস্থায় থাকে, তার পাশে মুদির দোকান দিয়ে লাভ নেই। আবার ধরা যাক একটি বিউটি পার্লার, যেখানে সেবা নেয়ার চার্জ অনেক বেশি, সেই বিউটি পার্লারটি খুব সাধারন অথবা নিম্ন আয়ের মানুষের এলাকাতে দিলে লাভের মুখ দেখা যাবে না৷ এ কারণেই একটি ব্যবসা শুরু করার শুরুতেই স্থান নির্বাচনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে। আশা করি উপরের আলোচনা থেকে আপনি কিছুটা ধারনা পেয়েছেন যে কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন।
জীবনকে সহজ করে এমন পণ্য তৈরী ও তা সহজলভ্য করা
কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন, এ সম্পর্কিত আরেকটি মুল্যবান পরামর্শ এটি।
বাজারে এখন হাজারো পণ্য, এবং তাতে হাজারো রকম চ্যালেঞ্জ। এই বাজারে নতুন একটি ব্যবসায় দিয়ে সফল হতে হলে, ব্যবসায়টি হতে হবে এমন যেন তা জীবনকে সহজ করে। একটি ছোট্ট উদাহরণ দেই। বর্তমান যুগে আগের চেয়ে অনেক বেশি নারী ঘরের বাহিরে কাজ করেন। কিন্তু তাদেরকে ঘরে ফিরে ঘরের কাজ বিশেষত রান্নার বিষয়টি দেখতে হয়। বেশিরভাগ পরিবারেই নারীরা অন্যান্য কাজ হেল্পিং হ্যান্ড এর হাতে দিলেও রান্না নিজের হাতে করতে চান। কিন্তু সেক্ষেত্রে মশলা বাটা অথবা সবজি কাটার মতো সময় অনেক ক্ষেত্রে তারা পান না। এই ধরনের সমস্যা ভোগা নারীদের জীবন সহজ করতে, অনেক অনলাইন ব্যবসায়ী এখন বাটা মসলা এবং টুকরো করার সবজি হোম ডেলিভারি দিয়ে থাকেন। আরেকটা উদাহরণ দেই যেসব অফিসে লম্বা সময় বসে কাজ করতে হয়, সেসব অফিসে প্রায়ই লোকেরা ব্যাকপেইনে ভুগেন। গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ ধরনের বেল্ট যা ব্যাক পেইন কমাতে সাহায্য করে তার বিক্রি অনেক বেড়েছে। সুতরাং বলা চলে এ যুগে সেই সব পণ্যই মানুষের জীবনে স্থান করে নিবে যে সকল পণ্য তাদের জীবনকে সহজ করে৷
এখন এমন জীবন সহজ করা পণ্য শুধু তৈরি করলেই হবে না, বরং তা ক্রেতার হাত পর্যন্ত জন্য একে সহজলভ্য করতে হবে। তা এখন ক্রেতার বাড়ির কাছে পৌঁছে হোক অথবা অনলাইনের মাধ্যমে ঠিকঠাক ডেলিভারি দিয়ে হোক। মনে রাখতে হবে ব্যবসায়ের পণ্য তৈরি করে ব্যবসায়ীর কাছে রেখে দেওয়ার জন্য তৈরি হয়নি, এর আসল জায়গা ক্রেতার কাছে৷ তাই তার কাছে যেভাবেই হোক ব্যবসায়িক পণ্যকে সহজলভ্য করে তুলতেই হবে।
বিশেষজ্ঞের (Specialist) সহায়তা ও Online Research
পর্যাপ্ত রিসার্চ ছাড়া কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন? সংশ্লিষ্ট ব্যবসা সম্পর্কে অভিজ্ঞদের পরামর্শ কি নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য জরুরী? আসুন জেনে নিই।
বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ। এই সময়ে হুটহাট কোন চিন্তা থেকে ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলে অথবা সঠিক পরিমাণ তথ্য না থাকার কারণে কোন ব্যবসায় শুরু করে বিপদে পড়ার কোন মানেই হয় না। কারণ আপনার আশেপাশেই আপনি যে কোন ব্যবসার বিশেষজ্ঞের দেখা পাবেন। তাদের অনেকে হয়তো বা ফি নেবার পরিবর্তে আপনাকে সাহায্য করবে। শুধু তাই নয় এই ডিজিটাল যুগে যথেষ্ট পরিমাণ রিসার্চ করার সুযোগ আছে।
যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে চাইলে ব্যবসায় নিয়ে অনলাইনে যথেষ্ট পরিমাণ রিসার্চ করুন। কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন, কোথা থেকে কাঁচামাল পাবেন, কী ধরনের জনবল ব্যবসার জন্য পছন্দ করবেন, তার জন্য কিভাবে বিজ্ঞাপন দিবেন ইত্যাদি সহ আরো হাজারো রকমের বুদ্ধি পাবেন শুধুমাত্র মন দিয়ে রিসার্চের কাজটুকু করলে।
বিজ্ঞাপনে (Advertisement) নতুনত্ব আনা ও এই খাতে ভালো বাজেট রাখা
কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন, এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস এর অন্যতম একটি হল আপনার ব্যবসায়ের প্রচারে নতুনত্ব আনা ও এই খাতে ভালো বাজেট রাখা । একটু বিস্তারিত জেনে নিই।
আমাদের চারপাশে আজ বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। কোথাও টিভি বিজ্ঞাপন তো কোথাও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন। আছে বিল বোর্ড আছে লিফলেট। তার ওপর ডিজিটাল দুনিয়াতে তো প্রতি মুহূর্তে বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি৷ তাই বিজ্ঞাপনকে সম্পূর্ণরূপে জীবন থেকে সরিয়ে ফেলার উপায় নেই। কারণ কথায় আছে প্রচারেই প্রসার। তাই বরং ভিন্ন রূপে বিজ্ঞাপন দেয়ার ক্ষেত্রে মনোনিবেশ করুন৷ বিজ্ঞাপনের গল্প কিংবা জিংগেলে আনুন ভিন্নতা। প্রয়োজনে সরাসরি বিজ্ঞাপনের প্র্যাকটিস থেকে বের হয়ে, ইনফ্লুয়েন্সারদের কন্টেন্ট বা অন্যদের বিনোদনমূলক কনটেন্টের ভিতরে বিজ্ঞাপন এমন ভাবে দিন যেন তা আনমনে ক্রেতার মাথায় ঢুকে যায়।
কিন্তু সমস্যা হল অনেক ব্যবসায়ী সঠিকভাবে বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে না। তারা ভাবে পণ্য তৈরি করলে বিক্রি তো হবেই৷ এই কথাটি হয়তো বা কোন এক সময় সঠিক ছিল৷ কারণ এক সময়ে এত ধরনের পণ্য বাজারে পাওয়া যেত না। কিন্তু বর্তমান বাজার খুবই চ্যালেঞ্জিং। তাই নতুন ব্যবসা শুরু করে টিকে থাকতে হলে চাই সঠিক পণ্যের সঠিক বিজ্ঞাপন।
ব্যবসায়ের সঠিক কাগজপত্র বা Documentation নিশ্চিত করা
নতুন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে এটি একটি অন্যতম কাজ। কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন এই প্রশ্নের উত্তরে অভিজ্ঞরা একবাক্যে প্রথমেই বলবে ব্যবসা শুরু করার প্রয়োজনীয় Document প্রস্তুত করতে।
এই সঠিক কাগজপত্র নিশ্চিত করার কাজ থেকে হেলাফেলা রেখে অনেকেই ব্যবসার গোড়াতেই ভুল করেন। নতুন ব্যবসা শুরু করলে অবশ্যই আগে সঠিক কাগজপত্র নিশ্চিত করার কাজটি করে নিবেন৷ যেমন ট্রেড লাইসেন্স।
এরপর ব্যবসা করার জন্য যদি কোন বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয় তাহলে সেই ভাড়া নেয়ার চুক্তিপত্রটি তৈরি করতে হবে। এছাড়া অনেকে অংশীদারি ভিত্তিতে ব্যবসা করেন, সেই ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের চুক্তিও লিখিত হয়ে যাওয়া জরুরী। আর আপনার ব্যবসাটি ছোট হোক বড় হোক তা অবশ্যই নিবন্ধিত করতে হবে। তাছাড়া কিছু বিশেষ ব্যাপার আছে। যেমন আমদানি রপ্তানির ব্যবসা হলে এই ক্ষেত্রে আমদানি রপ্তানিজনিত দলিল তৈরি করতে হবে। সাথে আয়কর ও ট্যাক্স প্রদানের জন্য টিন সার্টিফিকেট নেয়ার বিষয়টি তো আছেই। এভাবেই ব্যবসায়ের প্রকার ভিত্তিতে কি কি ধরনের কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে তার লিস্ট করে সেই অনুযায়ী সব প্রস্তুত রাখা জরুরী।
শেষ কথা
আশা করি উপরের আলোচনাগুলো থেকে আপনি মোটামুটি একটা ধারনা পেয়েছেন যে কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন। মোটাদাগে এতক্ষণ যে আলোচনাগুলো হল নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য এগুলো খুবই বেসিক পয়েন্ট। আপনি যদি নতুন ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবেন তাহলে অবশ্যই এগুলো মেনে চলুন এবং সহজ ও সফলভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করুন।