ব্যবসায় অর্থায়ন কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

business finance

ধরুন আপনি একটি নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান। অথবা আপনি ইতিমধ্যেই একটা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। বলুন তো এই পরিচালনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা কি? 

ঠিক ধরেছেন। “অর্থায়ন!” ব্যবসায় অর্থায়ন এর ব্যাপারটা সঠিকভাবে ম্যানেজ না করতে পারলে আপনার ব্যবসাকে ব্যর্থ হতে বাধ্য। অন্যদিকে ব্যবসার অর্থায়ন এর ব্যাপারটা সঠিকভাবে ম্যানেজ করতে পারলে এটি আপনার ব্যবসাকে সাফল্যের শিখরে ও পোঁছাতে পারে।

ব্যবসায় অর্থায়ন কি? 

একটি ব্যবসার মূলধন, সম্পদ, ঝুঁকি সামলানো, লাভ, কাঁচামাল ক্রয়, কর্মচারীদের বেতন এই সমস্ত ক্ষেত্রকে একসাথে  নিয়ে ব্যবসায় অর্থায়ন কাজ করে। ছোটবড় যেকোনো ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে ব্যবসা অর্থায়ন প্রধান জীবনশক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখে।

ব্যবসায় অর্থায়ন এর ধরন

ব্যবসায় অর্থায়ন কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে প্রধান দুই প্রকার হচ্ছে- ঋণ ব্যবস্থাপনা ও ইকুইটি ফাইন্যান্স।

  • ঋণ ব্যবস্থাপনা: এখানে বিষয়গুলো হচ্ছে কারো কাছ থেকে ব্যবসার কাজে টাকা ধার নেওয়া এবং নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট সুদ সহকারে সেই টাকা আবার তাকে ফেরত দেয়া। ব্যবসার জন্য মূলধন জোগাড় করতে ঋণ নেওয়া খুব পরিচিত একটি পদ্ধতি।  বিশেষ করে নতুন শুরু হওয়া ব্যবসার ক্ষেত্রে। 
  • ইকুইটি ফাইন্যান্স: শুনতে বেশ খানিকটা খটোমটো শুনালেও, আমরা সকলেই কমবেশি এর সাথে পরিচিত। সহজ কথায়, ইনভেস্টরদের কাছে ব্যবসার শেয়ার বিক্রি করা। ইনভেস্টররা এর মাধ্যমে ব্যবসার একটি অংশের মালিকানা এবং মুনাফা লাভ করে থাকেন। এই পদ্ধতিটি তুলনামূলক কম পরিচিত ব্যবসায় অর্থায়ন এ । কিন্তু যে সমস্ত ব্যবসা খুব দ্রুত বাড়ছে তাই বেশ বড় অংকের মূলধনের  জন্য তাদের কাছে ইকুইটি ফাইন্যান্স একটি জনপ্রিয় উপায়।

ব্যবসায় অর্থায়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বেশ কয়েকটি কারণের জন্য ব্যবসায় অর্থায়ন কে ব্যবসার জীবনীশক্তি বা প্রাণভোমরা ডাকা হয়। যেমন- 

. সঠিক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে: একটি কোম্পানীর অর্থনৈতিক অবস্থা বোঝার মাধ্যমে, তাদের ভবিষ্যৎ পারফরম্যান্স অনুমান করতে পারার মাধ্যমে,  কোম্পানীর পক্ষে সঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়। তারা বুঝতে পারে কীভাবে তাদের সম্পদগুলোকে ঠিক জায়গায় ব্যবহার করা যায়,  কোন জায়গায় ইনভেস্ট করলে বেশি লাভ পাওয়া যাবে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে থাকা যায়। 

২. তহবিল সুরক্ষা : যেকোনো ব্যবসা মাত্রই, তহবিল প্রয়োজন, সেটা হোক তাদের টিকে থাকার জন্য অথবা গ্রো করার জন্য।  ব্যবসায় অর্থায়নের মাধ্যমে তারা তাদের সম্ভাব্য ইনভেস্টরদের দেখাতে পারে যে, তাদের একটি সঠিক সুন্দর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আছে এবং নিজেদের অর্থায়ন ম্যানেজ করতে তারা সক্ষম। 

. আইন এবং নীতিমালা : তৃতীয়ত, ব্যবসায় অর্থায়ন একটা কোম্পানিকে সাহায্য করে নিয়মিত আইন এবং সকল নীতিনির্ধারণীর সাথে আপডেটেড থাকার জন্য।  একটা ব্যবসা নানানরকম অর্থনৈতিক আইনের মধ্যে পড়ে, যেমন ট্যাক্স আইন,  অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড।  নিয়মিত সকল আইন মানার মাধ্যমে,  কোম্পানি বিভিন্ন ব্যায়বহুল জরিমানা এড়াতে পারে।

.মূল উদ্দেশ্য অর্জন: সমস্ত কঠিন কঠিন কথা বাদ, আপনার একটা ব্যবসা শুরুর পেছনে মূল উদ্দেশ্যটা কি বলুন তো? সফলতা অর্জন করা, পর্যাপ্ত প্রফিট পাওয়া তাইতো? ‘ব্যবসায় অর্থায়ন’ এই ছোট্ট দুটি শব্দ এক বিশাল ভূমিকা পালন করে আপনাকে সেই লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে। আপনার অর্থ সংগ্রহের উৎস কি হওয়া উচিত, সেই অর্থ কোন কাজে ইনভেস্ট করা উচিত, যদি এই পরিকল্পনা সফল না না হয়, ভবিষ্যৎে আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা কী হবে,  আপনার যেই মুনাফা আসছে সেই মুনাফা সঠিক জায়গায় ঠিকঠাক ভাবে বন্টনের তদারকি, এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কারবার সাধন করবে ব্যবসায় অর্থায়ন।  

. আর্থিক ব্যবস্থাপনা জ্ঞান লাভ: একটা ব্যবসা যত বড় হবে, যত দিন যাবে,  শুনতে অপ্রীতিকর হলেও সত্যি,  সেই সাথে জটিলতাও সমানুপাতিক হারে বাড়বে।  এবং দেখা যাবে এমন এমন সব অর্থনৈতিক প্যাঁচ দেখা দিয়েছে যা আপনি কল্পনাও করতে পারেননি। কিন্তু স্বস্তির কথা কি জানেন, ব্যবসায় অর্থায়ন নিয়ে কাজ করতে করতে সেই জটিলতাগুলোর জট টা আসলে কোথায় সেটাও আপনি শিখে ফেলবেন এবং এই সমস্ত অভিজ্ঞতা জ্ঞান আপনাকে ভবিষ্যৎে আরো বড় বড় অর্থনৈতিক ঝড় সামাল দিতে সাহায্য করবে।

৬. ব্যবসায়ে সফলতা অর্জন : একটা ব্যবসা কে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য,  প্রতিটি পদে পদে অর্থের প্রয়োজন হয়। অর্থকে কোনোভাবে ম্যানেজ করার পরেও,  সেই অর্থের ব্যবহারকে দক্ষ করে তোলার জন্য ব্যবসায় অর্থায়ন অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

সর্বোপরি, একটা ব্যবসা কে সফল ব্যবসায় পরিণত কর‍তে ব্যবসায় অর্থায়ন প্রয়োজন। দক্ষভাবে অর্থায়নের মাধ্যমে ব্যবসার লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে। 

কীভাবে ব্যবসায় অর্থায়ন ম্যানেজ করবেন?

তাহলে এত কাজের এই ব্যবসায় অর্থায়ন কীভাবে ম্যানেজ করা উপায়গুলো দেখা যাক। 

. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাজেট তৈরি করা: যেটা ব্যবসাকে সাহায্য করতে তাদের ইনকাম এবং খরচ আসলে কোথায় কোথায় যাচ্ছে। নিয়মিত আপডেটেড রাখবে যাতে করে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে অর্থনৈতিক লক্ষ্য আদৌ পূরণ হচ্ছে কিনা সেইটা খেয়াল রাখা যায়।

. ক্যাশ ফ্লো নজরদারি: ক্যাশফ্লো ব্যাপারটা আসলে হচ্ছে বিজনেসে টাকা কত আসছে এবং কত যাচ্ছে। বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ কারণ এর মাধ্যমেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার সামনের কাজটি করার জন্য হাতে আসলে পর্যাপ্ত টাকা আছে কিনা।

.ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনা : ইনভেন্টরি বলতে বোঝায় আপনার স্টকে বর্তমানে যে পরিমাণ মালামাল মজুদ আছে বিক্রি করার মত। যেটার নিয়মিত খোজখবর রাখা জরুরি কারণ কখনো কখনো আপনার প্রয়োজনের অতিরিক্ত মালামাল হাতে থাকতে পারে অথবা দেখা গেলো, বিক্রি করার মত পর্যাপ্ত মালামালই নেই আপনার গোডাউনে। যেটা একটা ব্যবসার জন্য কখনোই সুখকর অবস্থা না।

.অর্থনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ করা: একটা সফল ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য নিয়মিত আপনার পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত কয়েকটি ব্যপার।  যেমন কোন দিকটিতে আপনি ভালো করছেন, ভালো মুনাফা আসছে, অথবা কোন জায়গায় আপনি লস এ আছে, কোথায় কোথায় আপনার ইমপ্রুভমেন্ট আনা উচিত। কোন জায়গায় আপনার অপ্রয়োজনীয় খরচ হয়ে যাচ্ছে যেটা কমিয়ে আনা উচিত। এই সমস্ত ব্যাপার পর্যবেক্ষণ যেকোনো ব্যবসায়ের জন্য একটা  মডেল টেস্ট হিসেবে কাজ করে।

৫. অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া :  সারাবছরের অর্থনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ করে তবেই পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে। যেখানে আপনি ঠিক করবেন কোন জায়গায় আপনার ইনভেস্টমেন্ট কমিয়ে আনতে হবে অথবা কোন জায়গা থেকে বেচাকেনা করা আপনার জন্য কম খরচ হবে।  এই ছোট ছোট ব্যপারগুলোই একসাথে সফল ব্যবসায় অর্থায়ন  তৈরি করবে।  

ব্যবসায় অর্থায়ন এর ব্যাপারে জানার উৎস

এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায় অর্থায়ন যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে চান, প্রয়োজন পর্যাপ্ত জ্ঞানের।  শিখতে হবে সবার আগে। যার জন্য বেশ কয়েকটি উপায় আছে: 

  • বই এবং আর্টিকেল:  ব্যবসায় অর্থায়নের উপর বেশ ভালো সংখ্যক বই এবং আর্টিকেল আছে। যেগুলো পড়ে অর্থায়ন নিয়ে বেশ ভালো ধারণা আপনি পাবেন
  • অনলাইন কোর্স: বর্তমানে যুগে জ্ঞান এখন হাতের মুঠোয়। প্রযুক্তির আশির্বাদে  ব্যবসায় অর্থায়নের উপর প্রচুর অনলাইন কোর্সে পাওয়া যায়। যেগুলো আপনাকে ব্যবসায় অর্থায়ন নিয়ে বেশ গভীর এবং ডিটেইল জ্ঞান দেবে।
  • অর্থনৈতিক উপদেষ্টা : সবাই সব ব্যাপারে পারদর্শী হবেন এমনটা ভাবাটাই ভুল। আপনি নিজে আপনার অর্থায়ন সামাতে হিমশিম খেতেই পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার জন্য সবচেয়ে বুদ্ধিমান পদক্ষেপ হবে প্রফেশনাল ব্যাক্তিদের সাহায্য নেয়া। যারা সম্মানীর বিনিময়ে আপনার ব্যবসায় অর্থায়ন দেখভাল করে দেবে। 

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।