চাকরির পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায়? কিছু অসাধারন ব্যবসার আইডিয়া
দিন দিন মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। তাই সেই জীবনধারণের খরচ যাচ্ছে বেড়ে। একই সাথে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি তো আছেই। সবমিলিয়ে একটু বাড়তি আয়ের চিন্তা আজকাল সবার মনে উঁকি দেয়। আবার অনেকে আছেন প্রয়োজন থেকে নয় বরং নিজের শখের থেকেই নানা ধরনের কাজে ব্যস্ত হতে পছন্দ করেন। তাই দেখা যায় চাকরির পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায় বা চাকরির পাশাপাশি কোন ব্যবসা করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে অনেকেই ভাবেন।
যেহেতু চাকরির পিছনে সবাই কম বেশি লম্বা একটি সময় ব্যয় করে তাই আজ আমরা চেষ্টা করব এমন কিছু ব্যবসা নিয়ে কথা বলতে যা আপনার চাকরিজনিত কাজের কোন ক্ষতি করবে না। অফিস শেষে ফ্রি টাইমে অথবা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই ব্যবসাগুলো আপনাকে কিছু বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিবে। তাহলে চাকরির পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায়, জেনে নিন সেই ব্যবসাগুলো।
অনলাইন কোর্স করানো (Online Course)
চাকরির পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায়, এটা নিয়ে ভাবছেন? তাহলে অনলাইন কোর্স করানো হতে পারে আপনার জন্য ভালো একটি ব্যবসার আইডিয়া।
চাকরির কাজের পাশাপাশি আর কোন কিছু কি আপনি খুব ভালো পারেন? তা হতে পারে কুরআন তেলাওয়াত, রান্না, ব্যায়াম, গান গাওয়া বা নাচ! কিংবা ধরুন প্রযুক্তি নির্ভর কিছু; যেমন প্রেজেন্টেশন বানানো, কম্পিউটারের নানান সফটওয়্যার ব্যবহার, ওয়েবসাইট তৈরি ইত্যাদি। তাহলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে অন্য কেউ শেখাতে পারেন। এতে করে একদিকে আপনার গুনটি আরো শানিত হবে, অপরদিকে কিছু বাড়তি আয় করতে পারবেন। বলা চলে এটা অনেকটা শূন্য বিনিয়োগে ব্যবসা।
আরও পড়ুন- সহজ ১০টি ব্যবসা।
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing)
ফ্রিল্যান্সিংকে বিশ্বজুড়ে অনেকে রীতিমতো ফুলটাইম জব হিসেবে নিয়েছে। তবে চাকরির পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায়, এ প্রশ্নের উত্তরে ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে নিঃসন্দেহে একটি ভালো আইদিয়ায়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে অথবা অফিসের পরে করা যায় এমন কিছু কাজ আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে শুরু করতে পারেন। কন্টেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, মিউজিক তৈরি, লিরিক্স লেখা, মিডিয়া বাইং ইত্যাদি কাজ করার জন্য একটি অনলাইন পেজ খুলে বা বিভিন্ন মার্কেট প্লেস এ আপনার সার্ভিসের কথা সবাইকে জানান। এতে করে চাইলে নিজের ফ্রী টাইম অনুযায়ী কিংবা সাপ্তাহিক ছুটির দিন অনুযায়ী কাজ নিতে পারবেন। আর তৈরি হবে কিছু বাড়তি আয়ের উৎস।
আপনার সুবিধার্থে জনপ্রিয় কিছু অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এর নাম দেয়া হল।
১) Upwork
৩) Fiverr
৫) 99designs
ডিক্লাটারিং (Decluttering)
চাকরির পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায়, এই প্রশ্নের একটি বড় সমাধান হতে পারে Decluttering।
ডিক্লাটারিং আধুনিক দেশগুলোতে একটি বেশ লাভজনক ব্যবসা হিসেবে চালু আছে। আপনার বাসার অপ্রয়োজনীয় কোন জামাকাপড়, থালা-বাসন, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি স্বল্প মূল্যে অনলাইন বা অফলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রতিবছর কিছু ভাল অংকের টাকা পকেটে ভরা সম্ভব। এতে করে আপনার বসতবাড়ি যেমন অপ্রয়োজনীয় জিনিসের হাত থেকে রক্ষা পাবে, একই সাথে অপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে আপনারও বিনা বিনিয়োগে আয় হবে।
আরও পড়ুন- ১০ হাজার টাকায় ২৫টি ব্যবসার আইডিয়া
অনলাইন ফুড বিজনেস (Online Food Business)
আপনার কি রান্না করতে ভালো লাগে? অনেকেই আছেন রান্না করতে খুব পছন্দ করেন। হয়তোবা অফিসের কাজের চাপে সবসময় করা হয়ে ওঠেনা কিন্তু মনের কোণে রান্নার জন্য ভালোবাসা ঠিকই রয়েছে। আপনারা কিন্তু চাইলেই ছুটির দিনে হোমমেড ফুডের ব্যবসার কথা ভাবতে পারেন। সপ্তাহে প্রতিদিন না হলেও শুধুমাত্র ছুটির দিনগুলোতে খাবারের অর্ডার নিয়ে বাড়তি আয়ের পথ হতে পারে। তাছাড়া ছুটির দিনগুলোতে সাধারণত মানুষের বাসায় দাওয়াত বা অনুষ্ঠান বেশি থাকে। ব্যস্ত নগর জীবনে অনেকেই আজকাল আপ্যায়ন করার জন্য অতিরিক্ত রান্নার ঝামেলা নিতে চান না। তাদের হোমমেড খাবারের সাপ্লাই দিতে পারলে তা নিশ্চিন্তে একটি লাভজনক ব্যবসায় হিসেবে স্বল্প সময়েই দাঁড়িয়ে যাবে।
তাহলে চাকরির পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায় এই প্রশ্নের আরেকটি অসাধারন আইডিয়া পেয়ে গেলেন। তো আর দেরি কেন, আজই নেমে পড়ুন।
বাসার ছাদ বা বারান্দায় নার্সারি (Nursery)
আজকাল ফরমালিন ও কেমিক্যালমুক্ত খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ভেবে দেখেন তো, বাড়ির ছাদে অথবা বারান্দায় যদি যথেষ্ট জায়গা থাকে আর সেখানে খুব বেশি কিছু না হলেও টমেটো, নানা রকমের শাক, লেটুস পাতা ইত্যাদির চাষ সম্ভব কিনা। স্বল্পপরিসরে চাষ করে, সম্পূর্ণ ফরমালিন ও কেমিক্যালমুক্ত হিসেবে লোকের কাছে এর প্রচারণা চালানো গেলে তা আপনার জন্য লাভ নিয়ে আসার সুযোগ অনেক বেশি। চাকরির পাশাপাশি ছাদ নার্সারি ও হতে পারে অসাধারণ একটি ব্যবসার আইডিয়া।
রাইড শেয়ারিং (Ride Sharing)
আজকাল কিন্তু রাইড শেয়ারিং এর মাধ্যমে অনেকেই আয় করছেন। এটি পরীক্ষিত একটি আইডিয়া। তাহলে চাকরির পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায়, এটা নিয়ে আর ভাবনা কি?
তবে রাইড শেয়ারিং এর ক্ষেত্রে যে শুধুমাত্র এটিকে ফুল টাইম চাকরি হিসেবে চিন্তা করতে হবে তা কিন্তু নয়। ধরুন আপনি মোটরসাইকেল চালিয়ে অফিসে যান আবার একইভাবে বাসায় ফেরেন। শুধুমাত্র যাওয়া এবং আসার পথে দুজন যাত্রীকে নিলে আপনার কিন্তু প্রতিদিন কিছু বাড়তি আয় করার সুযোগ তৈরি হয়।
এর বাইরে যদি ছুটির দিনে মনে করেন আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে এবং বিশ্রাম নেবার পর কিছুটা সময় এই বাড়তি আয়ের জন্য আলাদা রাখতে চান, সেক্ষেত্রে ছুটির দিনগুলোতে আরো বেশি সময় রাইড শেয়ারিং এর মাধ্যমে আয় করা সম্ভব। এই ব্যবসার জন্য কিন্তু আলাদা করে কোন বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ছে না কিংবা প্রয়োজন পড়ছে না কোন অতিরিক্ত সেট আপের। Uber, Pathao সহ আরো নানান রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে আপনি এই কাজটি সহজেই করতে পারেন।
পশুপাখি পালন
পশুপাখি পালন ও হতে পারে চাকরির পাশাপাশি একটি অন্যতম সাইড ব্যবসা।
অনেকে আছে পশু পাখি পুষতে খুব ভালবাসেন। শখ থেকে বিড়াল, কুকুর, পাখি, মাছ, খরগোশ, কত কিছুই তো লোকে পুষে। এখন এই শখ থেকে যদি বাড়তি আয়ের সুযোগ হয় তাহলে তো মন্দ নয়। নিজের ঘরেই ছোট করে পশুপালনের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। কোন বিশেষ পশু পাখির প্রতি আগ্রহ থাকলে শুধুমাত্র তাই নিয়ে অথবা বেশ কিছু টাইপের পশুপাখি একসাথেও পালন সম্ভব। এক্ষেত্রে তাদের নিয়মিত যত্ন নেওয়া ও খাবারের পিছনে কিছু বিনিয়োগ রয়েছে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার পশুপাখি যেন অসুস্থ না হয়, প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দেয়া থাকে এবং কখনো অসুস্থ হলে ভেটেরিনারিয়ান ডাক্তারের কাছে নেবার ব্যবস্থা থাকে। প্রতিটি প্রাণীর জন্যই বাজারে এখন প্যাকেটজাত খাবার এভেলেবেল আছে।
আবার চাইলে আপনার ঘরের দৈনন্দিন খাবার থেকেও এদের উপযোগী কিছু খাবার আইটেম খুঁজে বের করতে পারেন। এতে করে খরচ কমে আসে এবং পশুপাখি পালনের পুরো প্রক্রিয়াটি আরো সহজ হয়। বর্তমানে বাজারে দেশি-বিদেশি নানান রকম পশু পাখির অনেক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা বুঝুন, অনলাইনে পশুপাখি ক্রয় বিক্রয়ের অনেক গ্রুপ রয়েছে, সেগুলোতে জয়েন করুন এবং সহজেই পশু পাখি বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় করুন।
ডায়েট ফুডের ব্যবসা (Diet Food)
মানুষের বর্তমান লাইফস্টাইল এর কারনে অনেকেই স্থুলকায় হয়ে যাচ্ছেন। ডায়েটের প্রয়োজন থাকলেও অনেকেই জীবনযাপনের সাথে মিলিয়ে তা করতে পারছেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা নিজের ডায়েটবান্ধব খাবার তৈরি করা। বিশেষ করে যারা অফিস করেন তাদের জন্য খাবার তৈরির পিছনে বেশি সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। তো এই সমস্যাকে কাজে লাগিয়ে আপনি চাকরির পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায়, এর সমাধান বের করতে পারেন।
আপনি যদি এটিকে ব্যবসায় হিসেবে নেন তাহলে একজন সাহায্যকারী রেখে, সপ্তাহ হিসেবে এই খাবারগুলোর প্ল্যান করে ফেলতে পারেন। এরপর শুধু প্ল্যান মোতাবেক খাবার তৈরী এবং প্যাকেজিং হবে। ডায়েট ফুড এর আন্ডারে সাধারণত ফল, বাদাম, সবজি, মুরগীর মাংস, মাছ- এসবের আধিক্য থাকে। এই অনুযায়ী প্ল্যান করে আগের থেকে বাজার করে রাখলে, আপনি অফিসে থাকাকালীন সময়েও আপনার সাহায্যকারী বাকি কাজটুকু সেরে নানান জায়গায় ডেলিভারি দিতে পারবেন।
বিভিন্ন সার্ভিসের লোক সাপ্লাই দেয়া
বর্তমান ব্যস্ত জীবনে নানানরকম কাজের জন্য মানুষকে অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়। ঘরের হেলপিং হ্যান্ড হোক অথবা বাগানের মালী, ড্রাইভার হোক কিংবা রাধুনী, নানারকম সার্ভিসের লোক আজকাল আমাদের জীবনে অপরিহার্য। এমনকি বাসায় বয়স্ক অথবা শিশুদের দেখাশোনার জন্য অনেকে লোক খুঁজেন। তো এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে আপনি চাকরির পাশাপাশি কি ব্যবসা করা যায়, এর সমাধান বের করতে পারেন।
আপনার নেটওয়ার্ক যদি ভালো হয় এবং বিশেষ করে আপনার গ্রামের বাড়ি যেখানে, সেখানকার লোকজনের সাথে যদি আপনার ভালো যোগাযোগ থাকে, তাহলে সেখান থেকেই আপনি নানান ধরনের সার্ভিসের মানুষ শহুরে পরিবারে নিয়োগ দিতে পারবেন। এবং তা থেকে পাওয়া কমিশনের মাধ্যমে আপনার একটি বাড়তি আয় হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যে ব্যক্তিকে দিচ্ছেন ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আপনি জানেন কিনা, এনআইডি কার্ড হয়েছে কিনা, এবং ওই কাজটির জন্য সে যোগ্য কিনা।