রাইট শেয়ার কি? কোম্পানি কেন রাইট শেয়ার ইস্যু করে?

শেয়ার বাজারে আমরা নানারকম শেয়ারের নাম শুনি। প্রকৃতিগত দিক থেকে একটি অপরটি থেকে ভিন্ন হয় তাই এদের ক্রয়, বিক্রয়, সুবিধা, অসুবিধা সবকিছুতেই ভিন্নতা রয়েছে। আজ আমরা রাইট শেয়ার কি এ বিষয়ে আলোচনা করবো। 

রাইট শেয়ার কি?

রাইট শেয়ার কি? এটি শেয়ার মার্কেট এর অন্যতম পরিচিত শব্দ। রাইট শেয়ারকে বলা হয় এক ধরনের অধিকারমূলক শেয়ার।  কোম্পানি গঠন হবার পরবর্তী সময়ে শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে বা প্রয়োজন পড়লে সেই ক্ষেত্রে যখন পুরনো শেয়ার মালিকগণ ওই শেয়ার কেনার জন্য অগ্রাধিকারলাভ করে তাকে রাইট শেয়ার বলে। 

আরো নির্দিষ্ট করে বললে কোম্পানি যখন মূলধন বৃদ্ধি করতে চায় তখন সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে বাজারে শেয়ার ছাড়ে, যার নাম রাইট শেয়ার। তবে এই শেয়ার শুধুমাত্র অর্থের বিনিময়ে সবাই কিনে ফেলবে এমন না। কোম্পানি গঠিত হবার পরবর্তী সময়ে শেয়ার বিক্রি করা হলে সেই ক্ষেত্রে পুরনো শেয়ার মালিকগণ ওই শেয়ার কেনার অগ্রাধিকার পান।

সুতরাং যেসব শেয়ারহোল্ডার আগেই ওই কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন তারাই শুধু রাইট শেয়ার কিনতে পারেন। শেয়ারহোল্ডার মালিকদের নিকট এই শেয়ার অনেক চাহিদাসম্পন্ন। কারণ বাজারের প্রকৃত মূল্যের তুলনায় এই শেয়ারের দাম কম থাকে। 

রাইট শেয়ার, বোনাস শেয়ার এবং নগদ লভ্যাংশ এর মধ্যে পার্থক্য

রাইট শেয়ার কি এ বিষয়ে বুঝার জন্য কিছু সম্পর্কিত বিষয়ও জানা দরকার। যেমন- বোনাস শেয়ার ও নগদ লভ্যাংশ এবং এর সাথে রাইট শেয়ার এর পার্থক্য কি?

রাইট শেয়ার

পূর্বের আলোচনা থেকেই নিশ্চয়ই বুঝা গিয়েছে যে, রাইট শেয়ার এর প্রকৃতির দিক থেকে কেনো এক ধরনের অধিকারমূলক শেয়ার। কোম্পানি গঠন হবার পর, পরবর্তী কোনো সময়ে যদি কোম্পানী তার মূলধন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, তবে BSEC এর অনুমতি নিয়ে বিশেষ শেয়ার বাজারে ছাড়তে পারে, শেয়ারকেই বলা হয় রাইট শেয়ার। এই শেয়ার কিন্তু সবাই কিনতে পারে না বরং কোম্পানি গঠনের পরবর্তী সময়ে শেয়ার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পুরাতন শেয়ার মালিক যারা আছেন, তারাই ওই শেয়ার ক্রয়ে অগ্রাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হোন। আশা করি রাইট শেয়ার কি এবিষয়ে একটি সম্যক ধারনা দেয়া গেছে।

বোনাস শেয়ার বা অধিবৃত্তি

কোম্পানির শেয়ার মালিকদের মধ্যে নানাভাবে লভ্যাংশ বন্টন করা সম্ভব। এর মধ্যে একটি হলো নগদে লভ্যাংশ বন্টন না করে একটি ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা। আর তা হলো লভ্যাংশের বিপক্ষে সাধারণ শেয়ার বণ্টন করা। শেয়ার বাজারে এই বণ্টনকৃত শেয়ার ‘বোনাস শেয়ার’ নামে পরিচিত। সেই হিসেবে বোনাস শেয়ার কোনো নতুন ধরনের শেয়ার নয়। এই ধরণের শেয়ার ক্রয়ে মালিকগন কোনো  নগদ অর্থ প্রদান করেন না। তাই এর বোনাস শেয়ার নামটি খুবই যুক্তিসঙ্গত! ‍

নগদ লভ্যাংশ

নগদ লভ্যাংশ, নামেই যার পরিচয়। একদম সহজভাবে বলা যায়, ব্যবসায়ের মুনাফা, শেয়ারের পরিমাণ অনুসারে যেভাবে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে নগদ অর্থে বন্টন করা হয় তাকে নগদ লভ্যাংশ বলে। এই লভ্যাংশ বন্টনকে বলা চলে বোনাস শেয়ারের ঠিক বিপরীত। কারণ, এর মূল বিষয়ই হলো নগদ অর্থে বন্টন। 

সাধারণত কোম্পানিগুলো কখন এবং কেন রাইট শেয়ার ইস্যু করে?

রাইট শেয়ার কি শুধু ইস্যু করা হয়? উত্তরটি হল না। বরং সুনির্দিষ্ট কারণ বা প্রয়োজনেই এর উদ্ভব হয়। সাধারনত যেই কারগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, সেগুলো নিয়েই নিম্মে আলোচনা করা হল। 

ব্যবসায়িক বৃদ্ধি এবং প্রসার

সময়ের সাথে একটি কোম্পানির ব্যবসায়িক বৃদ্ধি এবং প্রসার সকল মালিকগণেরই কাম্য। কারণ একটি ব্যবসায়ের বৃদ্ধি  তখনই সম্ভব, যখন তা আসলে যথেষ্ট লাভের মুখ দেখছে। একটি লাভজনক ব্যবসাকেই বড় করা  এবং সার্বিকভাবে প্রসারিত করার পরিকল্পনা করা হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে, রাইট শেয়ার ইস্যু করার চল রয়েছে। তাতে করে পূর্ব শেয়ারহোল্ডারগনই, নতুনভাবে আরো বিনিয়োগ করে, একদিকে নিজেদের হোল্ড করা শেয়ারের পরিমাণ বৃদ্ধি করেন, অন্যদিকে সার্বিকভাবে ব্যবসায়ের বৃদ্ধি ও প্রসার নিশ্চিত করেন। 

নতুন প্রোডাক্ট বাজারজাত করার জন্য

অনেক সময় একটি ব্যবসায়ে নতুন প্রোডাক্ট বাজারজাত করা হয়। তা হতে পারে পূর্ববর্তী যেই প্রোডাক্ট দিয়ে  ব্যবসা করা হতো তারই নতুন কোন ভার্সন অথবা একই মালিকগণের ব্যবসায়ে একদম নতুন কোন প্রোডাক্টের সংযোজন। এসব ক্ষেত্রে যেহেতু নতুন কিছু বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, তাই রাইট শেয়ার ইস্যু করা একটি অর্থ সংগ্রহের মাধ্যম হয়ে ওঠে। 

ঋণ পরিশোধ করার জন্য

অনেক সময় কোম্পানি কোন কোন স্টেকহোল্ডারের কাছে ঋণী হয়ে পড়ে। সেই ঋণের অর্থ পরিশোধ করার জন্য রাইট শেয়ার ইস্যু করা হয়। 

অন্য কোনো কোম্পানিকে ক্রয় (অধিগ্রহণ) করার তাগিদে অর্থ একত্রীকরণ

একটি ব্যবসায় যেকোনো প্রয়োজন অথবা মালিকগণের ইচ্ছার পরিপ্রেক্ষিতে অন্য একটি কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সকল মালিকগণের মাঝে রাইট শেয়ার ইস্যু করে দিলে, সুষ্ঠুভাবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। 

রাইট শেয়ার কি এবং এটি ইস্যুর অসুবিধা

  • শেয়ারহোল্ডার রাইট  ইস্যুতে সাবস্ক্রাইব করার ক্ষেত্রে আগ্রহী না হলে,  সংস্থাটি যেই লক্ষ্য নিয়ে রাইট শেয়ার ইস্যু করলো, তা অর্জনে ব্যর্থ হতে পারে।
  • অনেক সময় কোম্পানির প্রোমোটারগণ FPO র মাধ্যমেও অধিক অর্থ সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিতে  পারেন , সেক্ষেত্রে বিদ্যমান ইক্যুইটি মানের অনুপাতে অধিকার বাড়ে।
  • ধরা যাক, একটি সংস্থার  ব্যালেন্স শিট বেশ ভালো অবস্থানে আছে এবং তারা শেয়ারের রাইট ইস্যু করলো, এই  বিষয়টি কিন্তু  নির্দিষ্ট সংস্থার বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে অনেকেই ধারণা করেন যে, সংস্থাটি ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় অপারগ তাই এই রাইট শেয়ার ইস্যু করেছে। 
  • রাইট ইস্যুতে ইক্যুইটির পরিমাণ হ্রাস পায় আর তাই  অনেক শেয়ার হোল্ডার রাইটগুলিতে সাবস্ক্রাইব করেন না। ওইদিকে নতুন করে শেয়ারের বরাদ্দের কারণে সেই সকল সাবস্ক্রাইব না করা শেয়ারহোল্ডারদের হোল্ডিংয়ের শতাংশ হ্রাস পায় |

যারা রাইট শেয়ার সাবস্ক্রাইব করেন তারা রাইট শেয়ার কি, এর সমস্যাগুলো কি এবং শেয়ার বাজারের বর্তমান অবস্থা সবকিছু মাথায় রেখে, সবদিক বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেন। 

কিভাবে রাইট শেয়ারের জন্য আবেদন করবেন

কয়েকটি ধাপেই সহজভাবে রাইট শেয়ারের জন্য আবেদন করা সম্ভব। 

  •  যেসকল শেয়ারহোল্ডারদের রেকর্ড ডেটের আগ পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের  মালিক থাকবেন, তারা এই রাইট শেয়ার ইস্যু হবার পর সাবস্ক্রাইব করার যোগ্যতা রাখবেন। থাসেই নির্দিষ্ট কোম্পানির ওয়েবসাইটে রাইট শেয়ারের আবেদন ফর্ম আপলোড করা হবে। 
  • আবার, কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারগনের ঠিকানায় অনেক সময় রাইট শেয়ার আবেদন ফর্ম পাঠানো হয়। 
  • ফর্মটি ডাউনলোড করে/ অথবা ঠিকানায় পৌঁছালে, গ্রহণ করে ফিলাপ করতে হবে। 
  • একজন শেয়ারহোল্ডার যতগুলি রাইটের জন্য আবেদন করতে আগ্রহী সেই পরিমাণ টাকা ক্যাশ,চেক বা পে অর্ডার হিসেবে নির্দিষ্ট ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখায় জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে।
  • ​ একজন শেয়ারহোল্ডার যিনি রাইট শেয়ার আবেদন করার যোগ্য, তিনি নিজস্ব ইচ্ছামাফিক তার প্রাপ্য রাইট আংশিক কিংবা চাইলে পুরোপুরি রিনানসিয়েশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য কাউকে ট্র্যান্সফার করতে পারবেন।  

পরিশেষ

বছরের পর বছর ধরে শেয়ার বাজারে রাইট শেয়ার ইস্যু হওয়া এবং কোম্পানীর স্বার্থে তা উপযুক্তভাবে ব্যবহার করার নজির রয়েছে। সুবিধা- অসুবিধা সবমিলিয়েই এই রাইট শেয়ারের একটি গ্রহনযোগ্যতা আছে এবং এটি শেয়ার বাজারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।