২০২৪ এর সম্ভাবনাময় ৫টি নতুন ব্যবসার আইডিয়া

নতুন ব্যবসার আইডিয়া

২০২৪ এর মত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বছরে নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ করার বিকল্প নেই। কারণ কঠিন প্রতিযোগিতার কারণে গতানুগতিক ব্যবসার আইডিয়া লাভজনক নাও হতে পারে। গতানুগতিক ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ করলে চ্যালেঞ্জ বেশী থাকবে। এছাড়া ব্যবসার লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা ও কমে আসবে। কারণ যত বেশী প্রতিযোগিতা তত বেশী ঝুঁকি এবং ব্যবসা লাভজনক করে তোলা কঠিন। তাই এরকম সময়ে ব্যবসায়ে সফল হতে গেলে নতুন নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে।

Advertisement

নতুন আইডিয়া এর প্রতি সবার আগ্রহ রয়েছে। তাই আজকের আর্টিকেল এ এমন কিছু সম্ভাবনাময় ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলো কিছুটা অপ্রচলিত এবং প্রতিযোগিতা কম। অন্যদিকে আপনি যদি একেবারেই নতুন ব্যবসায়ী হন, তাহলে অবশ্যই জেনে নিবেন কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন

৫টি সম্ভাবনাময় নতুন ব্যবসার আইডিয়া

মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যই হলো নতুন ব্যবসার আইডিয়া বা চ্যালেঞ্জিং আইডিয়া বাদ দিয়ে গতানুগতিক এবং সহজ ব্যবসা করা। আপনি দেখে থাকবেন, একই জাতীয় ব্যবসা একই জায়গায় বা কাছাকাছি জায়গায় বেশ কয়েকজন করছে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়ে যায় এবং কেউই ভালো লাভ করতে পারেনা। ফলে অনেকেরই একসময় ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়। তাছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশী হওয়ার কারনে গতানুগতিক ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে বেশি বিনিয়োগ করার দরকার হয়।

কিন্তু নতুন ব্যবসার আইডিয়া এর ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এর চাইতে আইডিয়া গুরুত্বপুর্ণ। এই আইডিয়া এর উপর ব্যবসার সফলতা নির্ভর করে। পাঠাও, ফুডপান্ডা, বিকাশ, এয়ার বিএনবি, আলীবাবা এরকম শত ব্যবসার আইডিয়া সফল হয়েছিল কারণ সময়ের প্রেক্ষাপটে এগুলো নতুন ব্যবসার আইডিয়া ছিলো। একই সাথে এসব ব্যবসার আইডিয়া গুলো ছিল তখনকার প্রেক্ষাপটে ইউনিক যা সম্ভাব্য ক্রেতাদের জীবনটা সহজ করে দেয়। ফলে ক্রেতা বা ভোক্তারা এসব উদ্যেগ এর প্রতি সাড়া দেয় এবং ব্যবসাগুলো সফল হয়ে উঠে।

Advertisement

২০২৩ সালে করা যেতে পারে এরকম ৫টি লাভজনক নতুন ব্যবসার আইডিয়া এখানে দেয়া হলো। যেগুলো সময়ের প্রেক্ষাপটে নতুন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম এবং ধীরে ধীরে বড় ব্যবসা হয়ে উঠার পূর্ণ সম্ভাবনা আছে।

পেট কেয়ার ব্যবসা হতে পারে সম্ভাবনাময় নতুন ব্যবসা

এটি উন্নত দেশগুলোতে জনপ্রিয় এবং পুরনো ব্যবসা হলে ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি নতুন ব্যবসার আইডিয়া। মুলত বাংলাদেশে অভিজাত এলাকাগুলোতে অধিকাংশ পরিবারে পেট বা পোষা কুকুর, বিড়াল বা অন্য প্রাণী থাকে। এসব পরিবারগুলো তাদের পোষা প্রাণীর যত্নআত্তিতে বেশ ভালো অংকের টাকা খরচ করে।

মূলত ব্যবসা টা এই জায়গায়। আপনাকে প্রশিক্ষিত লোক নিয়ে এসব ক্লায়েন্টকে টার্গেট করে পেট কেয়ার সার্ভিস শুরু করতে হবে। এটি একটি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া। নতুন ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে শুরুতে এটি পরিচিত হতে একটু সময় লাগতে পারে। তবে একসময় এটি একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে যে দাঁড়িয়ে যাবে, এতে সন্দেহ নেই।

মাত্র ৫০ হাজায় টাকায় এ ব্যবসাটি শুরু করা যায় বিধায় একে ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া হিসেবেও বিবেচনা করা হতে পারে।

সিনিয়র সিটিজেন বা ওল্ড কেয়ার সেন্টার- নতুন ব্যবসার আইডিয়া

নতুন ব্যবসার আইডিয়া এর মধ্যে এটি অন্যতম। ওল্ড কেয়ার সেন্টার বলতে এখানে বৃদ্ধাশ্রম কে বোঝানো হচ্ছেনা। বৃদ্ধাশ্রম একটি গতানুগতিক ধারণা যেটি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চালানো হয়।

Advertisement

ওল্ড কেয়ার সেন্টার বলতে এখানে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রবীণ ব্যক্তিদের দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেবা সংক্রান্ত ব্যবসাকে বোঝানো হচ্ছে। অনেক পরিবারে স্বামী স্ত্রী দুইজনই চাকরিজীবী থাকেন। এসব পরিবারে বয়স্ক অভিভাবক থেকে থাকলে তাদের দেখাশোনা করা, সময়মত ঔষধ এবং খাবার দেয়া, ফিজিওথেরাপি (যদি দরকার হয়) সহ তাদের বিভিন্ন সেবা শুশ্রূষার কাজে অভিজ্ঞ লোকের দরকার হয়। বাসার সাধারণ কাজের লোকের উপর এসব ব্যাপারে নির্ভর করা যায়না। তাই অনেকে পরিবার তাদের ডিউটি চলাকালীন সময় বাসার বয়স্ক অভিভাবকের দেখভাল করার জন্য পেশাদার লোক বা প্রতিস্ঠানের সহায়তা পেতে চান।

মূলত এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ওল্ড কেয়ার সেন্টার এর মত নতুন ব্যবসার আইডিয়া সফল ও লাভজনক হতে পারে। কর্মব্যস্ত মানুষ তাদের অনুপস্থিতিতে বাসায় থাকা বয়স্ক অভিভাবকদের দেখভাল সংক্রান্ত দুঃশ্চিন্তা থেকে দুরে থাকতে পারে। কাজে পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষের ব্যস্ততা বাড়ছে, তাই এরকম ইউনিক ব্যবসার আইডিয়া বড় হওয়ার সম্ভাবনা ও বাড়ছে।

মোবাইল এপস ডেভেলপমেন্ট এর ব্যবসা

আপনার যদি প্রযুক্তি বিষয়ে ধারণা এবং আগ্রহ থাকে, তাহলে এপস ডেভেলপমেন্ট হতে পারে একটি সময়োপযোগী নতুন ব্যবসার আইডিয়া । বর্তমানে দেশে এপস ডেভেলপমেন্ট এ অনেকেই জড়িত আছেন। তারপরও এটিকে নতুন ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে ধরা হচ্ছে, কারণ এটি এখনো প্রচলিত ব্যবসা হয়ে উঠেনি। অর্থাৎ এখনো এই ব্যবসায়ে সংশ্লিষ্ট কিছু লোক ছাড়া তেমন কেউ জড়ায়নি। অথচ বাংলাদেশে এই এপস ডেভেলপমেন্ট এর ব্যবসা বড় ব্যবসা হয়ে উঠার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা আছে।

বর্তমানে এপস নির্ভর নতুন নতুন ব্যবসা তৈরি হচ্ছে, ফলে এই খাতে লাভজনক অনলাইন ব্যবসা এর সম্ভাবনা ও বাড়ছে। যেহেতু এখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম, তাই এই ব্যবসায়ে লাভবান ও সফল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশী। এটি একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় ও লাভজনক নতুন ব্যবসার আইডিয়া।

ড্রাই ফ্রুটস এর ব্যবসা- সম্ভাবনাময় নতুন ব্যবসা

নতুন ব্যবসার আইডিয়া গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি লাভজনক ব্যবসা। দেশের বিভিন্ন বড় বড় সুপারস্টোর এ যে ড্রাই ফ্রুটস দেখা যায়, যা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমদানিনির্ভর। আমদানি নির্ভর অপ্রচলিত পন্য এবং দাম বেশী বিধায় এই ব্যবসাটি স্থানীয় বাজারে জনপ্রিয়তা পায়নি এখনো। এছাড়া এই ব্যবসায় স্থানীয় কোন পরিচিত কোম্পানি বা ব্র্যান্ড ও নেই। তাই স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে কম দামে বা সুলভ মূল্যে সরবরাহ করতে পারলে এটি জনপ্রিয় ব্যবসা হয়ে উঠতে পারে। তবে এক্ষেত্রে প্রচার প্রচারনায় এবং ব্রান্ডিং এ আপনার বড় অংকের খরচ করতে হতে পারে।

স্থানীয় ফলগুলোকে যথাযথ প্রসেসিং এর মাধ্যমে সুলভ দামে সুন্দর প্যাকেজিং করে খুচরা দোকানে সহজলভ্য করতে হবে। এটি করতে পারলে ড্রাই ফ্রুটস এর ব্যবসা অন্যতম লাভজনক নতুন ব্যবসা্র আইডিয়া হয়ে উঠতে পারে।

মোবাইল ব্যাককভার তৈরির ব্যবসা

এটা একেবারেই নতুন ব্যবসার আইডিয়া বলা যাবেনা। কিন্তু এই ব্যবসাটি সহজে স্থাপন করা যায়, সেই বিবেচনায় খুব বেশী লোক এই ব্যবসাটিতে জড়িত না। ফলে এখনো চায়না থেকে ইমপোর্টেড বাহারী ডিজাইনের মোবাইল ব্যাককভারই বাজারের অধিকাংশ চাহিদা পূরণ করে।

বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ কোটি এর উপরে স্মার্টফোন বিক্রি হয়। সেই হিসেবে মোবাইল এর ব্যাককভার এর বাজার কত বড় একবার ভেবে দেখুন। কিন্তু দেশের বাজারে এটা নিয়ে কাজ করে এমন কোন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি নেই। তাই এই ব্যবসায়ে এখানে একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে। মুলত এই কারনেই এ ব্যবসাটিকে নতুন ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

বাজার চাহিদার কথা মাথায় রেখে আপনিও বিভিন্ন ডিজাইনের মোবাইল ব্যাককভার তৈরি করে বাজারে সরবরাহ করতে পারেন। ডিজাইন এবং কোয়ালিটি ভালোা, দামে কম হলে মার্কেট ধরতে খুব বেশী সময় লাগবেনা।

একবার ব্যাক কভার এর মার্কেট ধরতে পারলে এরপর মোবাইল সংশ্লিষ্ট অন্যান্য এক্সেসরিস এর ব্যবসা ও শুরু করতে পারবেন। এক্ষেত্রে যে বিশাল একটি বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আছে, তা বলাই যায়। ছোট সেটআপ দিয়েই শুরু করা যায় বলে এ ব্যবসাতে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ করা যায়।

সেটআপ ও প্রোডাকশন কস্ট এর সাথে মার্কেট এ বিক্রি হওয়া গড় মূল্য বিবেচনায় এই ব্যবসাতে অনায়াসে ২০% লাভ করা সম্ভব। নতুন ব্যবসা হিসেবে ঝুঁকি ও বিনিয়োগ কম কিন্তু লাভ বেশী এরকম একটি নতুন উৎপাদনমুখী ব্যবসার আইডিয়া এটি। এটি বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা এর একটি ও বটে।

নতুন ব্যবসার আইডিয়া
মোবাইল ব্যাক কভার তৈরির ব্যবসা

আরও পড়ুন

৫টি লাভজনক নতুন ব্যবসার আইডিয়া

১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া

গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া

বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা

FAQ

নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ করার মধ্যে কি কোনো ঝুঁকি আছে?

প্রতিটি ব্যবসায় কিছু ঝুঁকির বিষয় থাকে। ব্যবসার ধরণভেদে সেটা কমবেশী হতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা, বিকল্প সমাধান এবং সমস্যা সমাধানে পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে ঝুঁকির পরিমাণ কমিয়ে ব্যবসা লাভজনক করা যায়।

নতুন ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি লাভজনক ব্যবসা কি কি হতে পারে?

উপরে যেসব নতুন ব্যবসার কথা বলা হয়েছে, এর বাইরেও কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যবসা নিম্নে দেয়া হলো।
১। অফিস স্পেস শেয়ারিং ব্যবসা।
২। প্লে গ্রাউন্ড এর ব্যবসা।
৩। ই-বুক সেলিং এর ব্যবসা
৪। স্কুল ট্রান্সপোর্টেশন সার্ভিস
৫। বেবি কেয়ার সেন্টার এর ব্যবসা
৬। স্যান্ডেল এর ব্যবসা

গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া কি কি?

গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া এর মধ্যে নিচের আইডিয়া গুলো লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
১। বিউটি কেয়ার
২। জেনারেটর কানেকশন এর ব্যবসা
৩। মিনি থিয়েটার বা সিনেমা হল
৪। জিম ব্যবসা
৫। মুভিং ফুড কার্ট

নতুন ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে উৎপাদনমুখী ব্যবসার আইডিয়া কেমন?

উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ে লাভের মার্জিন যেমন বেশী, তেমনি ঝুঁকি ও বেশী। উৎপাদনমুখী কোন ব্যবসা শুরু করতে গেলে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে নামলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।

Advertisement

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।