৫টি লাভজনক নতুন ব্যবসার আইডিয়া

নতুন ব্যবসার আইডিয়া

নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করাটা বর্তমান সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত কারণ কিছুটা ইউনিক আইডিয়াসম্পন্ন নতুন ব্যবসা সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। ব্যবসার আইডিয়া যদি একইসাথে ইউনিক এবং নতুন হয়, তাহলে ব্যবসায়ের শুরুতে কম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয় এবং লাভবান হওয়ার সুযোগ ও বেশী থাকে। তবে এক্ষেত্রে আপনার আইডিয়াটি ক্রেতা আকর্ষণ করতে হবে এবং আপনার সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে।

অস্থিতিশীল অর্থনীতি, কাজ করার স্বাধীনতা,স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজের স্বিদ্ধান্তগুলোর পূর্ণ স্বাধীনতা প্রকাশের একটি অন্যতম ক্ষেত্র হল ব্যবসা। আর এ কারণেই তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে অনেকেই ৯টা-৫টার বন্দি জীবনকে দূরে ঠেলে এগিয়ে আসছে ব্যবসার ক্ষেত্রে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি মুনাফা অর্জনের জন্য বর্তমানে নতুন ব্যবসার আইডিয়া দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। 

নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কিছু পরামর্শ ও কিছু নতুন ব্যবসার তালিকা

ধরুন আপনার একটি ব্যবসা আছে। কিন্তু আপনি আশানুরূপ বিক্রয় করতে পারছেন না। এর পেছনে সঠিক কারণ কি জানেন? তা হল সঠিক ও পরিকল্পিত মার্কেট এন্যালাইসিস। যেকোন ব্যবসা সফল না হওয়ার অন্যতম কারন হল সেই ব্যবসাটি নিয়ে পর্যাপ্ত এনালাইসিস ছাড়া ব্যবসায় নামা।

কারণ আপনি যে দেশেই ব্যবসা করুন না কেন সেই দেশের মার্কেট অ্যানালাইসিস না করার কারণে আপনি কখনো বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারবেন না। কারণ আপনি যে ব্যবসাটি করবেন সেটার সম্ভাবনা, ঝুঁকি, প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর অবস্থা, এসমস্ত এনালাইসিস অবশ্যই আপনাকে করতে হবে। এছাড়া এই কম্পিটিটিভ ফিল্ডে আপনাকে একটি ভাল জায়গায় যেতে হলে নতুন ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে।

তাই চলুন এ ধরনের কিছু ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ফ্যাশন হাঊজ এর ব্যবসা

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পোশাক আভিজাত্যের অংশস্বরূপ। আর আমরা বরাবরই ফ্যাশন সচেতন। আর তাই আপনার যদি নিজের বিজনেস শুরু করতে চান সেক্ষেত্রে ফ্যাশন হাউজ হতে পারে আপনার জন্য একটি পারফেক্ট অপশন।  ফ্যাশন হাউস হল এমন এক ধরনের কোম্পানি যা হাই-ফ্যাশনের পোশাক এবং আনুষঙ্গিক ডিজাইন এবং সেল জেনারেশনে এক্সপার্ট।

যেহেতু বাংলাদেশ একটি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ যেখানে তৈরি পোশাকে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই নতুন ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে ফ্যাশন হাউস শুরু করা আপনার জন্য হতে পারে বেস্ট একটি অপশন। সাম্প্রতিক সময়ে রিসার্চে দেখা যাচ্ছে যে,  ফ্যাশন হাউসগুলো বাংলাদেশে বেশ ভালো করছে। তরুণদের মধ্যে অপ্রচলিত পোশাক পরার টেন্ডেন্সি তৈরি হয়েছে। তাই ফ্যাশন সচেতন মানুষের কথা মাথায় রাখতে হবে।

আপনি যদি পাঞ্জাবি, শার্ট, একটি সালোয়ার কামিজ বা থ্রি-পিসের মতো সুন্দর পোশাক ডিজাইন করতে পারেন তবে আপনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। এটি শুরু করার জন্য আপনার বিপুল পরিমাণ ইনভেস্টমেন্ট এর প্রয়োজন নেই। এমনকি আপনাকে প্রাইমারিলি শপ ওপেন এর জন্য কোন প্রপার্টিও খুঁজতে হবে না। জাস্ট  একটি ফেসবুক পেজ ক্রিয়েট করুন, আপনার ডিজাইন আপনার ফ্রেন্ড এবং ফলোয়ারদের সাথে শেয়ার করুন এবং সেল জেনারেট করুন।

আরও কাস্টমার পেতে আপনি চাইলে  Facebook-এ বুস্ট করতে পারেন। এই নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ করার জন্য যে যে স্কিল প্রয়োজন তা নিম্নে দেয়া হল।

স্কিল

-ডিজাইন স্কিল

-কমিউনিটি গ্রোয়িং স্কিল।

ইনভেস্টমেন্ট– 

একটি ভাল শুরুর জন্য  1 লক্ষ টাকা এক্ষেত্রে যথেষ্ট।

সম্পর্কিত পোস্ট- ইউনিক বিজনেস আইডিয়া

কফি শপ এর ব্যবসা

সকল বয়সী মানুষের কাছেই কফি বেশ মুখরোচক একটি পানীয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় আমাদের দেশে ভালো কফি শপ এর সংখ্যা খুবই কম। কফি এখন শুধুমাত্র সিটি এরিয়াতে নয় বরং সিটি এরিয়ার পাশাপাশি  রুরাল  উভয় ক্ষেত্রেই জনপ্রিয়। তাই আপনি যদি নতুন ব্যবসার আইডিয়া শুরু করতে চান সেক্ষেত্রে কফি শপ ওপেন করা হতে পারে পারফেক্ট একটি অপশন।

ব্ল্যাক, ল্যাটে, ক্যাপুচিনো, আমেরিকানো, এসপ্রেসো, ডপপিও, রেড-আই, কর্টাডো, লুঙ্গো ইত্যাদির মতো অনেক ধরনের কফি রয়েছে৷ আপনি কি কফি বানাতে এক্সপার্ট? আপনার পারফেক্ট কোন লোকেশনে একটি দোকান আছে? তবে নতুন ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে কফি শপ হতে পারে ব্যবসার জন্য পারফেক্ট অপশন।

কফি শপের জন্য একটি ভাল লোকেশন সিলেক্ট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কুলের কাছাকাছি, পার্ক বা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এরিয়া এবং আবাসিক এলাকা যেখানে ভালো কফি শপ নেই এমন  লোকেশান বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

একটি জিনিস আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে এবং তা হল ইনভাইরননেন্ট। মনে রাখবেন আপনার কাস্টমারদের জন্য শান্ত এবং নিরিবিলি পরিবেশে কফি খেতে পছন্দ করে। তাই তাদের পছন্দে্র কথা মাথায় রেখে লোকেশন সিলেক্ট করতে হবে।

স্কিল: 

কফি তৈরির স্কিল (আপনি কোন একটি ভালোমানের কফি শপ থেকে শিখতে পারেন)।

ইনভেস্টমেন্ট:

একটি ছোট শপের জন্য 1.5-2 লাখ টাকা যথেষ্ট।

প্রফিট:

 প্রতি মাসে 40-50 হাজার টাকা।

রেস্টুরেন্ট এর ব্যবসা

বর্তমানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা হোক, প্রিয়জনদের নিয়ে সময় কাটানো হক কিংবা ফ্রি টাইম নিয়ে ডিসকাশন হোক সেক্ষেত্রে বেশ পারফেক্ট একটি প্লেস হল রেস্টুরেন্ট। আর এ কারণে আড্ডাপ্রেমী মানুষেরা সবসময় খাবারের জন্য একটি ভাল রেস্তোরাঁর সার্চ করে। অনেক সময় ঢাকাকে রেস্টুরেন্টের শহর বলা হয়, তবুও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বেশ প্রফিটেবল। ভালো রেস্তোরাঁ মানে শুধু ভালো খাবারই নয়, মনোরম পরিবেশও এক্ষেত্রে মেটার করে।

সুস্বাদু খাবার সরবরাহ করলেও উপযুক্ত পরিবেশ না থাকলে আপনি কখনো তা সাকসেসফুলি চালাতে পারবেননা। ভালো রেস্টুরেন্ট মানে ভালো মান এবং মনোরম পরিবেশ। আপনার রেস্টুরেন্টকে যদি একটি চমৎকার উপায়ে সাজাতে পারেন তা আপনাকে কাস্টমার গ্রাহক পেতে হেল্প করবে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ে কমবেশি ৫০% গ্রস প্রফিট করা সম্ভব। পুরনো ব্যবসার আইডিয়া হলেও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ে আপনি যদি নতুন কিছু আইডিয়া এড করে শুরু করতে পারেন তাহলে এটি নতুন ব্যবসার আইডিয়া এর মত আপনাকে ভালো লাভ এনে দিবে।

কাস্টমার নিড:

ফুড কোয়ালিটি।

মনোরম পরিবেশ।

চমৎকার লোকেশন।

ইনভেস্টমেন্ট:

 2-3 লক্ষ টাকা।

প্রফিট

 50-1 লক্ষ টাকা।

সম্পর্কিত পোস্ট-

চা পাতার ব্যবসা

শেয়ার ব্যবসা

কসমেটিক শপ এর ব্যবসা

দেশে হোক কিংবা বিদেশে বর্তমানে যদি কোন হাইপ বিজনেস বা নতুন ব্যবসার আইডিয়া এর কথা বলি সেক্ষেত্রে সবার আগে যে নামটি আসবে তা হল কসমেটিক বিজনেস। সোশ্যাল মিডিয়ার তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে অনলাইনে প্রাত্যহিক প্রসাধনী সেল করা হয়ে উঠেছে বেশ সহজ। 

এটি একটি ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া, অর্থাৎ ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ এর মধ্যে আপনি একটি কসমেটিক শপ খুলতে পারেন। কি করতে হবে? কমন, ইউনিক এবং ভালো কোয়ালিটি এর কসমেটিকস আইটেম কালেকশনে রাখুন, একটি ফেসবুক পেইজ খুলুন, অর্ডিয়েন্সের সাথে কানেক্টেড হন এবং সেল জেনারেট করুন। সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হল লাইভ করা এবং অর্ডিয়েন্সের কাছে প্রোডাক্ট তুলে ধরা। আপনি দেখতে পাবেন যে কারা কারা লাইভ কমেন্ট করছে এবং আইটেম অর্ডার করছে বা করতে পারে। 

এই ব্যবসা এখন বাংলাদেশে ট্রেন্ডিং। কারণ এটি শুরু করা সহজ এবং গড়ে 50% লাভ করা যায়।এর অর্থ হল যদি একটি পণ্যের মূল্য 100 টাকা হয়, আপনি এটি 150 টাকায় বিক্রি করতে পারেন।

কাস্টমাইজড গিফট শপ এর ব্যবসা

উপহার দিতে কে না চায়। কোন অকেশানে, উৎসবকে কেন্দ্র করে মানুষ তার প্রিয়জনদের গিফট দিতে চায়। আর তাই কাস্টমারদের ডিমান্ড এবং ইন্টারেস্টের উপর ডিপেন্ড করে আপনি শুরু করতে পারেন গিফট শপ। নতুন ব্যবসার আইডিয়া গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

কারণ এই ব্যস্ত শহরে প্রিয়জনকে স্পেশালভাবে গিফট দেওয়ার সময় এবং সুযোগ সকলের হয়ে উঠেনা। সেক্ষেত্রে আপনি যদি এমন কোন গিফট শপ এর বিজনেস ওপেন করেন। যেখানে একই সাথে বিভিন্ন ধরনের গিফট কাস্টোমাইজেশনের সুযোগ থাকবে সেক্ষেত্রে ক্রেতারা  খুব সহজে আপনাকে রিচ করতে পারবে। আর এই কারণে এই বিজনেসে মুনাফার পরিমাণ ও তুলনামূলক একটু বেশি এ হবে।

তাই আর দেরি কেন! আপনার যদি থাকে ব্যবসাতে আগ্রহ থাকে তাহলে এখুনি উপরের নতুন ব্যবসার আইডিয়া গুলোর মধ্যে আপনার সুবিধা মত যেকোন একটি বেছে নিয়ে শুরু করুন আপনার স্বপ্নের ব্যবসা।

আরও পড়ুন

ছোট ব্যবসার আইডিয়া

১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া 

ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা

ডিলারশিপ ব্যবসা

নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কিছু পরামর্শ

একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, ব্যবসা লাভজনক তখনি করা সম্ভব যখন আপনার পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়নের মধ্যে মিল থাকে। অর্থাৎ নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা যাই হোক না কেন, যদি আপনি সেটা বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ কাজ এবং পরিশ্রম না করেন তাহলে আপনি সফল হতে পারবেননা। কারণ নতুন ব্যবসাতে সম্ভাবনা যেমন বেশী রয়েছে, তেমনি চ্যালেঞ্জ ও বেশি।

তাই যে ব্যবসাই করুন না কেন, পরিকল্পনার পাশাপাশি ব্যবসা সফল করার অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে পারলেই আপনার ব্যবসা সফল হবে।

FAQ

জনপ্রিয় ছোট ব্যবসার আইডিয়া কি কি?

জনপ্রিয় কয়েকটি ছোট ব্যবসা হল মোবাইল রিচারজ শপ, বিকাশ/রকেট/নগদ এর দোকান, টি স্টল, ফুড কার্ট, জুস শপ ইত্যাদি।

জনপ্রিয় গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া কি কি?

জনপ্রিয় কয়েকটি গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া হল কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার, ফাস্ট ফুড শপ, বিউটি পার্লার, রোগ নিরীক্ষণ কেন্দ্র, ফার্মেসি ইত্যাদি।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।