শেয়ার ব্যবসা কি এবং শেয়ার ব্যবসায় লাভবান হওয়ার টিপস

শেয়ার ব্যবসা

শেয়ার ব্যবসা গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশ তথা পুরো বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কম মূলধন নিয়ে নামীদামী প্রতিষ্ঠানের মালিকানার তালিকায় নিজের নাম রাখার এই ব্যবসা অনেকের চোখেই বেশ আকর্ষণীয়। এছাড়া পুরোপুরি সময় না দিয়েই এমনকি অনলাইনে শেয়ার ব্যবসা করা যায়। অতিরিক্ত ঝুঁকি না নিয়ে একটু পরিকল্পনামাফিক সঠিক শেয়ার এ বিনিয়োগ করে ব্যবসা করলে এ ব্যবসায়ে অন্য ব্যবসার চাইতে অধিক লাভ করা সম্ভব। তাই একসময় অল্প কিছু মানুষ আগ্রহ দেখালেও ধীরে ধীরে সর্বস্তরের মানুষের কাছে এই ব্যবসায়ের একটি চাহিদা তৈরী হচ্ছে।

শেয়ার ব্যবসা কি?

সাধারণভাবে শেয়ার মানে অংশ আর ব্যবসায়ীক ভাষায় এর অর্থ হলো ব্যবসার অংশ৷ শেয়ার ব্যবসা বলতে সাধারণত বুঝায় কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ের একটি অংশ শেয়ার আকারে জনসাধারণের ক্র্য় বিক্রয় এর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া। সাধারণ জনগণ অর্থের বিনিময়ে অংশগুলো কিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ মালিকানা নেন।

শেয়ারবাজার কি?

এক কথায় শেয়ার কেনাবেচা বা শেয়ার ব্যবসা পরিচালিত হয় যে বাজারে তাকে শেয়ার বাজার বলে। বিও অ্যাকাউন্টধারী যেকোনো ব্যাক্তি এখান থেকে শেয়ার কেনাবেচার মাধ্যমে শেয়ার ব্যবসায়ের সাথে জড়িত হতে পারেন। এই শেয়ার ব্যবসা পরিচালনা করতে বাংলাদেশে দুইটি শেয়ার বাজার রয়েছে। যার একটি রাজধানীতে অবস্থিত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ শেয়ার বাজার। আরেকটি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ শেয়ার বাজার।

আর এই দুইটি বাজারের সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে আছে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা এসইসি। এসইসির মূল কাজগুলো শেয়ার ব্যবসাকে সহজ ও নিরাপদ করা। তাই এসইসি শেয়ার বাজার পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনমাফিক আইন প্রণয়ন, সংশোধন ওপরিমার্জন,  বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সহ অনিয়ম প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

শেয়ার ব্যবসা করার নিয়ম

শেয়ার ব্যবসায় প্রধানত দুই ধরনের শেয়ার নিয়ে্ ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। এগুলো হল-

  • প্রাইমারি শেয়ার (আইপিও)
  • সেকেন্ডারি শেয়ার।

প্রাইমারি শেয়ার

শেয়ার ব্যবসায়ের ভাষায় একে বলা হয় ইনিশিয়াল পাবলিক অফার বা আইপিও। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে এই শেয়ার ক্রয় করতে আগ্রহীদের নিকট দরখাস্ত আহ্বান করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। সাধারণত,  প্রয়োজনীয় শেয়ার লটের তুলনায় ৫০-৬০ গুণ, কখনোবা ১০০ গুণ পর্যন্ত বেশি দরখাস্তও জমা পড়ে। যে কারনে  প্রয়োজনীয় শেয়ার লট সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান  লটারি করে থাকে। লটারির মাধ্যমে প্রাইমারি শেয়ার জয়ীদের শেয়ারগুলো সেকেন্ডারি শেয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রাইমারি শেয়ার বাজারে বিও অ্যাকাউন্টধারী যেকোনো ব্যক্তি এই শেয়ার কেনাবেচা করতে পারে।   

এখন প্রশ্ন হতে পারে বিও অ্যাকাউন্ট কি? বিও অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অনেকটা একইরকম। স্টক এক্সচেঞ্জের  অনুমোদনপ্রাপ্ত কিছু  এজেন্ট থাকে যেগুলো ব্রোকারেজ হাউস নামে পরিচিত, সেখানে ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী যে কেউ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট বা সংক্ষেপে বিও অ্যাকাউন্ট  খুলতে পারে।

এখন আপনি চাইলে বিভিন্ন কোম্পানির প্রাইমারী শেয়ার এ আবেদন করতে পারেন যদিও এটি পুরোপুরি লটারি নির্ভর। তবে লটারিতে প্রাইমারী শেয়ার না পেলেও আপনার আবেদনের সাথে জমা দেয়া টাকা আপনি রিটার্ন পাবেন। সেই হিসেবে এটি একটি লস ছাড়া ব্যবসা। অনেকেই শুধু প্রাইমারী শেয়ারে আবেদন করে থাকেন। লটারিতে প্রাপ্ত প্রাইমারী শেয়ার আপনার বিও কোড এ জমা হবে এবং আপনি সেটা বাজারদরে বিক্রি করতে পারবেন। বাজার ভালো থাকলে অনেকসময় প্রাইমারী শেয়ারে প্রাপ্ত শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেট এ পাঁচ ছ্য় গুন বেশী দামে ও বিক্রি করা যায়।

সেকেন্ডারি শেয়ার

আপনি চাইলে আপনার বিও কোড এর মাধ্যমে অল্প কিছু টাকা বিনিয়োগ করে সরাসরি সেকেন্ডারি মার্কেট এ ও বিনিয়োগ করতে পারেন এবং শেয়ার কেনাবেচা করতে পারেন।

আরও পড়ুন- শেয়ার বাজারে আইপিও কি এবং কিভাবে আবেদন করবেন?

শেয়ার ব্যবসা কতটা লাভজনক

লাভের পরিমাণ বিবেচনায় শেয়ার ব্যবসা মোটামুটি লাভজনক। সাধারণত সঠিক পরিকল্পনামাফিক এবং একটু সময় নিয়ে বিনিয়োগ করলে এই ব্যবসায়ে গড় বার্ষিক রিটার্ন অফ প্রফিট এভারেজ ১৫% বা তার ও বেশী হতে পারে। যেটা লাভ, লস, বিনিয়োগ এবং ব্যবসাতে আপনার প্রদত্ত সময় ও শ্রম বিবেচনা করলে অন্য অনেক ব্যবসার তুলনায় লাভজনক। তবে এটা ও মাথায় রাখতে হবে, পরিকল্পনাহীন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে আপনার ব্যবসা অস্বাভাবিক ক্ষতির মুখোমুখি ও হতে পারে।

সম্পর্কিত পোস্ট- নতুন ব্যবসার আইডিয়া

শেয়ার ব্যবসা করতে কত টাকা লাগে

শেয়ার ব্যবসা করতে মিনিমাম কত টাকা লাগে এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আপনার বিও কোড এ এমনকি ৫০০০ টাকা দিয়ে ও আপনি শেয়ার ব্যবসা শুরু করতে পারেন আবার ২০ লাখ টাকা দিয়ে ও ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে শুরুর দিকে মোটামুটি লাভজনকভাবে, নিরাপদ এবং পরিকল্পনামাফিক পোর্টফলিও সাজিয়ে শেয়ার ব্যবসা করতে গেলে ২ লাখ টাকার কমবেশি বিনিয়োগ করা উত্তম। এই পরিমাণ বিনিয়োগ দিয়ে আপনি আপনার পোর্টফলিওকে ৩-৪ টি শেয়ার স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ পরিকল্পনা করে সাজাতে পারেন।

শেয়ার কেনার কতদিন পর বিক্রি করা যায়

এটা নির্ভর করে আপনি যে শেয়ারটি কিনেছেন সেটা কোন ক্যাটাগরি এর। যদি আপনার শেয়ারটি A, B অথবা N ক্যাটাগরির শেয়ার হয় তাহলে কেনার দিন এবং তার পরের দিন, এই ২ কর্মদিবস পরেই শেয়ারটি বিক্রি করতে পারবেন। আর যদি Z ক্যাটাগরির শেয়ার হয় তাহলে কেনার দিন থেকে ৯ কর্মদিবস পরে শেয়ারটি বিক্রি করতে পারবেন।

শেয়ার ব্যবসাতে কিভাবে লাভবান হবেন

শেয়ার ব্যবসা রাতারাতি আপনি অনেক লাভ করে ফেলতে পারেন যদি আপনার কেনা শেয়ারটির দাম অনেক বেড়ে যায়। এরকম অনেক শেয়ার আছে যেগুলো বিভিন্ন প্রাইস সেনসিটিভ ইনফরমেশন এর কারণে দাম হু হু করে বেড়ে যায়। কিন্তু এগুলো অনেকটাই ভাগ্য নির্ভর এবং শতভাগ সঠিক অনুমান করে এমনকি টপ ট্রেডাররাও শেয়ার কিনতে পারেননা। অতি লাভের আশায় রিস্কি এবং অতিমুল্যায়িত শেয়ার কিনে বড় অংকের লস দেয়ার ঘটনা ও অনেক আছে। তাই শেয়ার ব্যবসায়ে লাভ করতে গেলে আপনাকে সঠিক পরিকল্পনামাফিক এবং সঠিক এনালাইসিস করেই শেয়ার কেনাবেচা করতে হবে।

নিম্নে, বিশেষ করে নতুনদের জন্য শেয়ার বাজার এ বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে পুঁজি নিরাপদ রেখে লাভবান হওয়ার কিছু টিপস দেয়া হল। অনেকদিন ধরে বাংলাদেশের শেয়ার বাজার এ ব্যবসা করছেন কিন্তু লাভবান হতে পারছেন না, তাদের জন্য ও নিম্নোক্ত টিপসগুলো আশা করি কাজে লাগবে।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে ফ্লোর প্রাইস কেন আরোপ হয়েছিল?

তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান  থেকে সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান  বেছে নেওয়া

সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান বেছে নেয়ার সহজতম উপায় হল স্ক্রিনিং এবং স্ক্যানিং  করা। অর্থাৎ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে মূল্যায়ন করা এরপর প্রতিষ্ঠানের মার্কেট ক্যাপ এবং বিগত দিনের ব্যবসার রেকর্ড ইত্যাদি ফিল্টার করে একটি তালিকা তৈরি করতে হবে এবং সেখান থেকে শেয়ার কেনার সিদ্ধান্তটি  নিতে হবে।

স্টক গবেষণার জন্য সময় বরাদ্দ রাখা

গবেষণার জন্য সময় বরাদ্দ রাখার ক্ষেত্রে প্রথমেই ভাবতে হবে আপনার বিনিয়োগ কি স্বল্পমেয়াদী না দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। স্বল্পমেয়াদী হলে ব্যবসায় শুরু করার সময় থেকে বিগত এক মাসের শেয়ার বাজার এনালাইসিস করলে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগকারীর এক বছরের বাজার  ভালোমতো গবেষণা তবেই শেয়ার ব্যবসায়ে নামা উচিৎ। বর্তমানে অনেকে এই বিষয়ক কিছু এপ্স ব্যবহার করেও গবেষণার কাজ করে থাকেন।

প্রতিষ্ঠানের  আর্থিক প্রতিবেদন এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ

শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত সকল প্রতিষ্ঠান বিষয়ক তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জ DSE/CSE তে থাকে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ  তথ্য পাওয়া যায় যা একজন বিনিয়োগকারীকে নানাভাবে সাহায্য করে। বিনিয়োগের পূর্বে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সকল উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা উচিত।

বড় ক্যাপের প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ছোট ক্যাপের প্রতিষ্ঠান গুলোতে বিনিয়োগ করা

কোম্পানির মার্কেট ক্যাপাসিটি অর্থাৎ কোম্পানির বাজার মূলধন কত থেকে কত টাকার মধ্যে আছে তা নির্ধারণ করে কোম্পানির ক্যাপ বড়, মাঝারী নাকি ছোট।

বড় প্রতিষ্ঠানগুলো একটি ভালো অবস্থানে পৌঁছে যাবার কারণে নিজেদের আর নতুন করে প্রমাণ করার প্রয়োজন অনুভব করে না। এদের রিটার্ন ও রিস্ক দুই-ই কম থাকে।  কিন্তু ছোট ক্যাপ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশের অনেক সুযোগ বেশি এবং  উচ্চ রিটার্ন সম্পন্ন হয়ে থাকে। যদিও তার সাথে সাথে রিস্ক অনেকটা বেশি। এইজন্যই ইংরেজীতে বলে, ‘নো রিস্ক, নো গেইন’।

অতিরিক্ত বড় পোর্টফোলিও  তৈরি না করা

বিভিন্ন ধরনের এবং অনেক বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগ করে ফেললে বিনিয়োগকারী বিক্ষিপ্ত থাকেন এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। কোন স্টকের দিকেই তিনি পরিপূর্ণ যোগ দিতে পারেন না।

আবার মাত্র একটি বা দুইটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনে পোর্টফলিও অতিরিক্ত ছোট করটফোলিও্ব উচিত নয়। এর ফলে মূলহ্রাসের প্রভাব প্রকট রুপে দেখা দেয়৷ এই দুটি ভুলের কারণে অনেক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্কেট নিয়ে বিরূপভাব দেখা যায় বা তাদের মার্কেট বিমুখ হয়ে যায়।

স্বল্প তারল্যের বা স্বল্প লেনদেনের শেয়ার এড়িয়ে চলা

স্বল্পতারল্য বা স্বল্প লেনদেন শেয়ার ব্যবসাকে কঠিন করে। যে সকল প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনার পর বিক্রি করে শেয়ার বাজার থেকে টাকা তোলা  কঠিন সেই সব প্রতিষ্ঠানকে এড়িয়ে চলা উচি্ত।

স্টক মার্কেট এ কয়েক ক্যাটাগরির শেয়ার রয়েছে যার মধ্যে এ ক্যাটাগরি শেয়ার থেকে জেড ক্যাটাগরির শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের তারল্য স্বল্পতা বেশি, লেনদেন ও কম এবং শেয়ার কেনার পর ম্যচিউরড হতে ও সময় লাগে, তাই জেড ক্যাটাগরির শেয়ার এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

আরও পড়ুন- শেয়ার মার্কেট এ নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগের ৫টি কার্যকর টিপস

শেয়ার ব্যবসায় কি ঝুঁকি আছে?

ব্যবসা মাত্রই ঝুঁকি আছে। শেয়ার ব্যবসাও এর থেকে ভিন্ন নয়। তাই সাবধান থেকে এই ঝুঁকিকে কতোটা কমানো যায় তার উপর নজর দেয়াই একজন বুদ্ধিমান ব্যবসায়ীর লক্ষণ।

শেয়ার ব্যবসায় ঝুঁকি এড়ানোর টিপস

প্রথমত, মনকে স্থির রাখতে হবে। হুজুগে পড়ে শেয়ার কেনা বা বেচা যাবে না বরং ধৈর্য ধরতে জানতে হবে। সর্বদা তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ে জানার আগ্রহ ধরে রাখতে হবে। কারণ, প্রতিনিয়ত মার্কেট নিয়ে রিসার্চ ও ভাবার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে শেয়ার ব্যবসায়ের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। লাভের মুখ দেখলেই অতি বিনিয়োগ বা বিনিয়োগ করেই লাভের জন্য অস্থির হওয়া; এর কোনোটিই করা যাবে না। এছাড়া শেয়ার ব্যবসায়ে লাভ করার জন্য যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো তা মনে রাখতে হবে।

শেয়ার ব্যবসায়ে বার্ষিক কত পারসেন্ট লাভ করা সন্তোষজনক?

শেয়ার ব্যবসায়ে দর উঠা নামার কারনে বার্ষিক মুনাফার হার ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কখনো দেখা যায় একটি শেয়ারের দাম যা আশা করা হয়েছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি পাওয়া গিয়েছে। আবার কখনো কখনো আশানুরূপ না থাকায় কম মূল্য এমনকি লসেও বিক্রি করতে হতে পারে। তবে শেয়ার ব্যবসায়ে বার্ষিক মুনাফার হার ১৫%- ২৫% হলে তা সন্তোষজনক হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

শেয়ার ট্রেডার হওয়া ভালো নাকি বিনিয়োগকারী হওয়া ভালো

যদি আপনার শেয়ারবাজার সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা থাকে, পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং শেয়ার এর গতিপ্রকৃতি বোঝার মত এনালাইসিস করার দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি ট্রেডার হিসেবে ব্যবসা করতে পারেন। অন্যথায় একটি শেয়ার এর বাৎসরিক লো প্রাইস এর কাছাকাছি রেট এ কিনে বিনিয়োগ হিসেবে শেয়ারটি আপনার কোড এ রেখে দিতে পারেন। যখন আপনার এক্সপেক্টটেড লাভ এ বিক্রি করার মত প্রাইস পাবেন, তখন বিক্রি করে দিতে পারেন।

বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদী এই তিনভাবে বিনিয়োগ করা যায়। সাধারণত ট্রেডিং এর চাইতে বিনিয়োগকারি হওয়া ভালো কারণ এতে আপনার বিনিয়োগ তুলনামূলক নিরাপদ থাকে এবং লাভের সম্ভাবনা বেশী থাকে। ট্রেডিং এ এমনকি ক্রয় বিক্রয় এর ভুল সিলেকশন এবং ভুল টাইমিং এর জন্যও আপনার বড় লস হয়ে যেতে পারে।

শেয়ার ব্যবসা কি হালাল?

পবিত্র কুরআনুল কারিমে এসেছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭৫)।

আরবিতে কোম্পানির শেয়ারকে সাহম বলে। সাহম অর্থ অংশ। একটি প্রতিষ্ঠানের অংশ ক্রয়-বিক্রয় বহুল প্রচলিত আয়ের মাধ্যম এবং এই শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়কে  বর্তমানে পার্টনারশিপ ব্যবসা বলা যেতে পারে।

ক্রেতার শেয়ার সার্টিফিকেট কোম্পানিতে তার একটি অংশের মালিকানার প্রমাণ। যেসব প্রতিষ্ঠান নানান হালাল পণ্য ক্রয় বিক্রয় বা উৎপাদনের সাথে জড়িত এবং কোনো রকম সুদের লেনদেন করে না, সেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেচা-কেনা করা হালাল কিন্তু, যেসব কোম্পানি সুদ দেয় ও সুদ গ্রহণ করে, তাদের শেয়ার বেচা-কেনা করা বৈধ নয়। আবার কিছুক্ষেত্রে দেখা যায়, কোম্পানি সুদের সঙ্গে জড়িত হয়ে আয়ের সঙ্গে সুদের মিশ্রণ ঘটিয়ে ফেলেছে, এই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সুদ ও আয় আলাদা করার ব্যবস্থা থাকলে সেই কোম্পানির শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করা যেতে পারে।

পরিশেষ

আধুনিক যুগে অনেকে বেশ কম বয়স থেকে শেয়ার ব্যবসায়ের সাথে জড়িত হয় কারণ এই ব্যবসা তুলনামূলক কম মূলধন নিয়ে শুরু করা যায়, নিজের কোনো অফিস বা জনবল প্রয়োজন হয় না এবং সঠিকভাবে এগোতে পারলে লাভবান হবার বিস্তর সুযোগ। তাই যথেষ্ট রিসার্চ করার মানসিকতা, পরিকল্পনা করে কাজ করা, বিনিয়োগের মানসিকতা এবং শেয়ার ব্যবসায়ের খুঁটিনাটি জানার প্রতি আগ্রহ থাকলে যে কেউ এই ব্যবসায় আসতে পারে।

আরও পড়ুন- লস ছাড়া ব্যবসা

FAQ

শেয়ার বাজারে সর্বনিম্ন কত টাকা বিনিয়োগ করা যায়?

শেয়ার বাজারে সর্বনিম্ন বিনিয়োগের নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। তবে প্রাইমারী শেয়ার বা আইপিও আবেদন এর ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০০০ টাকা বা তার বেশী বিনিয়োগ লাগে। অন্যদিকে সেকেন্ডারি শেয়ার এ লেনদেন করার ক্ষেত্রে ও আপনি ৫০০০ টাকার কমবেশী যেকোন বিনিয়োগ দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। একটা সময় ছিল যখন সেকেন্ডারি মার্কেট এ লেনদেন এর জন্য একটা মিনিমাম লট কিনতে হত। এখন এমনকি একজন ক্রেতা চাইলে ১টা শেয়ার ও কিনতে পারে। তবে সেকেন্ডারি মার্কেট এ বিনিয়োগে মোটামুটি লাভ পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ৫০০০০ টাকা বা তার বেশী বিনিয়োগ করা উচিত।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।