২০২৩ সালে কম পুঁজিতে নিরাপদ ও লাভজনক ব্যবসা
কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা কোনগুলি, বর্তমানে এটি নিয়ে অনেকের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী দেশে দেশে শুরু হওয়া ধারাবাহিক অর্থনৈতিক মন্দা একদিকে যেমন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে, তেমনি মানুষের মধ্যে বাড়তি অর্থ উপার্জনের একটা মানসিকতা ও তৈরি করেছে। বিশ্ব জুড়ে শুরু হওয়া ধারাবাহিক অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়া অনেক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ও একটি। ২০২৩ এ এরকম একটা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জিং সময়ে ব্যবসা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন ব্যবসা করতে হবে যেটি কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা।
মুলত ডলারের বিশ্বব্যাপী সঙ্কট এবং টাকার বিপরীতে ডলার এর মূল্য বাড়ায় পন্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে এর ক্ষতিকর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়েছে। পন্যের ক্রয়মূল্য বেড়ে গেলে সেটা মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, আয়ের চেয়ে ব্যয় বাড়িয়ে জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মূলত আর্থিক নিরাপত্তার কথা ভেবেই ব্যবসা বা অন্য কোন উপায়ে মানুষের মধ্যে বাড়তি অর্থ উপার্জনের চিন্তা বাড়ছে।
যেকোনো নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ এর জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। তবে ব্যবসা শুরু করতে অনেক বিনিয়োগ এর প্রয়োজন, এটা একটা ভুল ধারণা মাত্র। শুধু এ ধারনার কারনেই অনেকে নতুন কিছু শুরু করতে ভয় পান। আপনার যদি কিছু করার শক্ত মানসিকতা থাকে তাহলে কম পুঁজিতে ও আপনি নতুন ব্যবসা শুরু করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এই আর্টিকেল এ ২০২৩ সালে কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা সমূহের একটা ধারনা দেয়া হল যা আপনার উপকারে লাগতে পারে।
কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা সমুহ-২০২৩
কম পুঁজিতে শুরু করা যায়, এমন অনেক ব্যবসা রয়েছে, কিন্তু সবগুলি লাভজনক নয় এবং ঝুঁকি ও রয়েছে। কম পুঁজি দিয়ে শুরু করা ব্যবসায় একবার বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ে গেলে পুনরায় ব্যবসায় টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে যায়। তাই, কম পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করতে গেলে অনেক বিচার বিশ্লেষণ করে নামা উচিত। নিচে নিরাপদ এবং কম পুঁজিতে শুরু করা যায় এমন কিছু লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া দেয়া হল।
১. এলাকাভিত্তিক চাউলের ব্যবসা
একদম ছোট পরিসরে কম পুঁজিতে আপনি আপনার এলাকায় চাউল সরবরাহের ব্যবসাটা শুরু করতে পারেন। আপনি যে এলাকায় থাকেন সে এলাকার আবাসিক এলাকাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্ডার নিতে পারেন। আড়ত থেকে পাইকারি রেট এ কিনে আপনি বাসাবাড়িতে খুচরা মুল্যে হোম ডেলিভারি দিতে পারেন। ৫০ কেজি এর একটা চাউলের বস্তায় আপনি কমপক্ষে ২০০ টাকা লাভ করে বিক্রি করতে পারবেন। যদি আপনার প্রদত্ত খুচরা মূল্য এলাকার মুদি দোকান এর চাইতে কিছুটা কম হয় এবং চাউলের মান ভালো হয়, তাহলে শুরুতেই আপনি ১৫-২০ টা বাসাবাড়ির মাসিক চাউল সরবরাহের অর্ডার পেয়ে যেতে পারেন।
২০ টা অর্ডার দিয়ে শুরু করলে মোটামুটি ৫০০০০ টাকা বিনিয়োগ দিয়ে বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা লাভে আপনি ৪০০০ টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এভাবে একসময় আপনার এলাকা থেকে যদি ১২০-১৩০ টা মাসিক ভিত্তিক কাস্টমার তৈরি হয়ে যায়, তাহলে বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা লাভে আপনার সম্ভাব্য মোট লাভ দাঁড়াবে ২৪০০০-২৬০০০ টাকা। কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা এর তালিকায় এটি প্রথম সারিতেই থাকবে।
২. এলাকাভিত্তিক সবজির ব্যবসা
বিনিয়োগ এর পরিমান টা এক্ষেত্রে আপনার ব্যবসা পরিচালনার দক্ষতার উপর নির্ভর করবে। যদি আপনার নগদে কেনার কাস্টমার বেশি হয়, তাহলে আপনার বিনিয়োগ কম লাগবে। স্বল্প পরিসরে নিরাপদ বিনিয়োগ এর জন্য কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে এই ব্যবসা টা নিয়ে ভাবতে পারেন।
কাঁচামাল হওয়ায় ব্যবসাটি কিছুটা ঝুকিযুক্ত হলেও এই ব্যবসায়ে লাভের পরিমান কমপক্ষে ১০%। ক্ষেত্রবিশেষে ৩০% এর বেশি ও হতে পারে। আপনার এলাকার আশেপাশের থানা মার্কেট গুলোতে খবর নিয়ে দেখবেন, সাপ্তাহিক বাজার কখন বসে। এসব বাজার এ গ্রামে উৎপাদিত সবজি গুলো পাইকারদের কাছে বিক্রয় এর জন্য নিয়ে আসা হয়।
পন্যভেদে এসমস্ত বাজার এর পাইকারি মূল্য থেকে আপনার এলাকার স্থানীয় সবজি বিক্রেতাদের মুল্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৩০%-৪০% বেশী হয়। এই যে দামের একটা পার্থক্য, এই জায়গাটা তে আপনি কাজ করতে পারেন।
যদি আপনি আপনার স্থানীয় সবজি বিক্রতাদের নিকট বিক্রি করেন, তাহলে আপনার লাভের পরিমান কম হলেও বিক্রয় বেশী হবে। সবজি সংরক্ষণ এর খরচ ও ঝামেলা থেকেও বাঁচতে পারবেন। আবার যদি আপনি বাসা বাড়িতে সরাসরি অর্ডার নিয়ে সবজি সরবরাহ করেন, তাহলে আপনার লাভ অনেক বেশী থাকবে। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনাকে সবজি সংরক্ষনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বাসা বাড়িতে সরাসরি সবজি হোম ডেলিভারি দেয়ার জন্য আপনি প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়া তে একটি পেজ খুলে স্বল্প পরিসরে শুরু করতে পারেন। পরে ব্যবসা বাড়লে নিজস্ব ওয়েবসাইট এর মাধ্যমেও করতে পারেন। কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা এর মধ্যে এটি অন্যতম।
৩. এলাকাভিত্তিক দুধের ব্যবসা
কম পুঁজিতে শুরু করার জন্য এটি অন্যতম লাভজনক একটি ব্যবসা, কিন্তু অনেকেই এই ব্যবসাটি নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামান না। অথচ বর্তমান সময় এ অধিকাংশ বাসাবাড়িতে প্রতিদিন ই গরুর দুধ লাগে। অনেক ক্ষেত্রেই ক্রেতা ভালো দাম ঠিকই দেন কিন্তু খাঁটি গরুর দুধ পান না। মূলত এই বিশ্বাস টা তৈরি করতে পারলে এবং প্রতিদিন নির্ধারিত সময় এ দুধ সরবরাহ করতে পারলে ক্রেতারাই আপনাকে খুঁজে নিবে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপশহর বা গ্রামের এলাকা থেকে সংগ্রহ করা গরুর দুধের দাম থেকে শহরে বা সদর এলাকাগুলোতে লিটার প্রতি কমপক্ষে ৮-১০ টাকা দাম বেশী থাকে। দুধের মান নিয়ে ও ক্রেতাদের মধ্যে একটা সন্দেহ থেকে যায়। আপনি যদি এই জায়গাটাতে ভালোভাবে পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে পারেন, তাহলে মাসিক ভালো লাভ করতে পারবেন। কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা এর মধ্যে এটি অন্যতম।
৪. এলাকাভিত্তিক মাছের ব্যবসা
বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে অনেক তরুন উদ্যোক্তা কে মাছের ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে দেখা যাচ্ছে। এই ব্যবসায় দুর্বল পরিকল্পনা, ভাল স্বাদের মাছ সংগ্রহ না করতে পারা, পর্যাপ্ত মাছ সময়মত না পাওয়া, মাছের গুনাগুন বজায় রেখে সংরক্ষন না করতে পারা, পরিবহন জটিলতা বড় সমস্যা।
এসমস্ত কারণে অনেকেই এই ব্যবসাতে তেমন একটা সফল হতে পারেন না। দেশীয় নানা জাতের মাছ সহ সামুদ্রিক মাছের ভালো সোর্স বের করতে পারলে, সংরক্ষন এর ভালো ব্যবস্থা করতে পারলে আপনি নিজ এলাকায় এই ব্যবসা টি শুরু করতে পারেন।
কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া সমূহের মধ্যে এটি অন্যতম । যেখানে আপনি আপনার এলাকায় ৫০ টি বাসাবাড়িতে মাসিক মাছের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারলে মাসিক আনুমানিক ৪০০০০ টাকা মোট লাভ করতে পারবেন। শুধু খেয়াল রাখতে হবে আপনার সরবরাহ করা মাছ যাতে তাজা হয় এবং স্বাদ ভালো হয়।
একবার ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পারলে আপনি সরবরাহ করে কুলিয়ে উঠতে পারবেন না। পরিচিতি বাড়লে আপনি বিভিন্ন জায়গায় মাছ সরবরাহ করে আপনার ব্যবসার আকার বাড়াতে পারবেন, লাভের পরিমান ও বাড়বে তখন। ব্যবসার আকার এবং বিনিয়োগ বড় হলে এই ব্যবসাটি আপনি পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে ও বিবেচনায় রাখতে পারেন।
৫. এলাকাভিত্তিক খাবারের ব্যবসা
সময়ের জনপ্রিয় ব্যবসার মধ্যে অন্যতম কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা এটি। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন পেশার ও বয়সের মানুষ অনলাইন ও অফলাইন ভিত্তিক নিজেদের তৈরি করা খাবারের ব্যবসায় জড়াচ্ছেন। এটি একটি ঘরোয়া ব্যবসা ও বটে এবং অনেকে এতে ভালো লাভ ও করছেন। বিভিন্ন কোম্পানি (ফুড পাণ্ডা, পাঠাও, সহজ ফুড, হাংরিনাকি ইত্যাদি) নির্দিষ্ট কমিশন এর বিনিময়ে ফুড ডেলিভারি এর কাজ সহজ করে দেয়ায় অনেকেই এই ব্যবসায় নামতে পারছেন সহজেই।
কম পুঁজিতে এটি অন্যতম লাভজনক এবং ঝুঁকিমুক্ত ব্যবসা বিধায় আপনি ও এই ব্যবসাটি স্থানীয়ভাবে শুরু করতে পারেন। যদি আপনি খাবারের স্বাদ ও খাবার আইটেম এ বিচিত্রতা আনতে পারেন, খাবারের মান ভালো রাখতে পারেন এবং দ্রুততম সময়ে ডেলিভারি নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে এই ব্যবসায়ে আপনি অবশ্যই সফল হতে পারবেন। এতে করে কম পুঁজিতে মাসিক একটা ভালো অংকের লাভ ও করতে পারবেন।
বিনা পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার কিছু ধারনা
উপরে উল্লিখিত কম পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা এর বাইরে এমন কিছু ব্যবসা রয়েছে যা আপনি কোন বিনিয়োগ ছাড়াই শুরু করতে পারেন। বিস্তারিত নিয়ে আরেকটি আর্টিকেল দেয়া হবে, তবে আপনার জানার সুবিধার্থে একটা ধারণা দেয়া হল।
- কমিশন ভিত্তিক পন্য বিক্রয়।
- কমিশন এজেন্ট, ট্রেনিং সেন্টার (নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের উপর আপনার ভালো দক্ষতা থাকলে)।
- ইউটিউব চ্যানেল।
- ড্রপ শিপিং।
- ডাটা এন্ট্রি।
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং।
- ম্যারেজ ব্যুরো।
- প্যারেন্টাল কেয়ার।
- বেবি সিটিং সার্ভিস।
- কন্টেন্ট রাইটিং সার্ভিস।
- হোম টিউটর সার্ভিস।
- ইনস্যুরেন্স এজেন্ট।
- ট্রাভেল এজেন্ট।
- টুরিস্ট গাইড।
- ট্যুর অপারেটর ইত্যাদি।
যদি আপনার পুঁজি কম থাকে, তাহলে ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করা যায় এমন কিছু নিরাপদ ব্যবসা ও রয়েছে।
আরও পড়ুন-
১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া।
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা।
FAQs
অল্প পুঁজি দিয়ে অনেক ধরনের ব্যবসা করা যায়, তবে প্রধানত সেবামুলক ব্যবসা, স্থানীয় ক্রেতাদের টার্গেট করে ব্যবসা, পেশাগত দক্ষতা সম্পর্কিত ব্যবসা এবং অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা গুলো অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করা সম্ভব।
সাম্প্রতিক কালে বেশ কিছু ব্যবসা লাভজনক বলে প্রতীয়মান, তবে বিনিয়োগ এর পরিমাণ এবং ঝুঁকি সহ সবদিক থেকে বিবেচনা করলে হোম বেজড খাবার ব্যবসা বেশী লাভজনক এবং নিরাপদ।
যে ব্যবসায় লাভ যত বেশী সে ব্যবসায় ঝুঁকি তত বেশি, এটা অনেক পুরনো এবং বহুল প্রচলিত কথা। ২০২৩ সাল এমনিতেই যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং, অর্থনীতিতে মন্দার পদধ্বনি, বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা সবকিছু মিলিয়ে এখন বিনিয়োগ এ অধিক লাভ করার চাইতে লাভ কম করে হলেও বিনিয়োগ নিরাপদ রাখাটাই বেশী জরুরি। সবদিক বিবেচনায় নিলে ওষুধ, কাঁচামাল, মুদিপন্য, মাছ, খাবার ব্যবসা এবং অপ্রচলিত পন্যের ব্যবসা লাভজনক ও নিরাপদ।
এটা নির্ভর করে আপনি কি পাইকারি ব্যবসা করতে চান নাকি খুচরা বিক্রি করতে চান। দোকান এর অগ্রিম সেলামি এর টাকা বাদে শুধু কাপড়ের জন্য বিনিয়োগ হলে ৩-৪ লাখ টাকায় শুরু করা সম্ভব।
একটি ব্যবসায়ে বিভিন্ন উপায়ে বিনিয়োগ করে আয় করা যায়। নিম্নে দেয়া হল।
১। অংশীদারী পার্টনার হিসেবে।
২। এঞ্জেল বিনিয়োগকারী হিসেবে।
৩। লিমিটেড কোম্পানি এর ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডার হয়ে।
৪। নিজের সরাসরি পরিচালনায় ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করে।