শেয়ার মার্কেট এ ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড সম্পর্কে জানা কেন জরুরী?

শেয়ার মার্কেট

শেয়ার মার্কেট এর খুবই পরিচিত একটি শব্দ ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড যা সম্পর্কে একজন বিনিয়োগকারীর পরিষ্কার ধারণা রাখা জরুরি। কারণ শেয়ার ব্যবসাতে লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে হলে এই জ্ঞান থাকা জরুরি।

Advertisement

সংক্ষেপে বলা যায়, ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড বলতে বুঝানো হয় লভ্যাংশের উৎপাদন বা ফলন, অথবা বলা যায় লভ্যাংশ প্রকাশ করা। আর এই ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড এর রেশিও হলো কোনো শেয়ারের বর্তমান যে দাম তার তুলনায় কোম্পানি বাৎসরিক লভ্যাংশ কেমন পরিমাণে বন্টন করবে বা কেমন অনু্পাতে (ratio) বন্টিত হবে।

একজন বিনিয়োগকারী একটি শেয়ারটি যে দামে কিনছেন বা কিনবেন সে শেয়ারে সেই নির্দিষ্ট দাম অনুসারে কেমন ডিভিডেন্ড আসে বা কোম্পানি দেয় বা দেবার সম্ভাবনা আছে, তা আনুমানিক হিসাব করে বের করার সূত্র বা রেশিও হলো ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড।

তাহলে, আরো নির্দিষ্ট করে বললে, কোম্পানি তার শেয়ারের বর্তমান মার্কেট দামে কেমন পরিমাণ ডিভিডেন্ড দিচ্ছে ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড রেশিও দ্বারাই মূলত  এটিই বের করা ও বুঝানো হয়।

ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড বা লভ্যাংশের ফলনের সূত্র

ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড = শেয়ার প্রতি বাৎসরিক লভ্যাংশ/ শেয়ার প্রতি দাম

শেয়ার মার্কেট এ অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি কোম্পানি তার মুনাফার কিছু অংশ বা ডিভিডেন্ড শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বন্টন করে। এই বন্টন তার ব্যবসায়ের প্রয়োজনে যেমন দিতেও পারে, তেমনি না দেয়াও স্বাভাবিক, এটা কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের ব্যবসা পরিচালনা সংক্রান্ত সিদ্বান্তের উপর নির্ভর করে।

তাই, অনেক সময় দেখা যায় কোনো কোম্পানি হয়তো প্রতি বছর টানা ডিভিডেন্ড দিচ্ছে আবার মাঝে হয়তো দিচ্ছে না। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরুপে  শুধুমাত্র বোর্ডের ডিরেক্টরদের উপর নির্ভর করে।

আরেকটি জিনিস এই আলোচনার অন্তর্ভুক্ত আর তা হলো বর্তমান শেয়ার বাজারে শেয়ারের ফেইস ভ্যালু ধরা হয় ১০ টাকা। এবং এই ফেইস ভ্যালুর উপর কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা করে। যেমন যে কোম্পানির মার্কেট প্রাইস ৪৬৬৳, আর ফেইস ভ্যালু ১০৳, সে ৩০% লভ্যাংশ (dividend)দিয়ে থাকলে, ১০ টাকা ফেইস ভ্যালু উপর লভ্যাংশ হবে ৩০(লভ্যাংশ)÷১০০( শতকরা%) ×১০(ফেইস ভ্যালু)=৩৳।

তাহলে, কোম্পানি ১০ টাকায় ৩ টাকা দিয়েছে বা একটি শেয়ারে ৩ টাকা দিয়েছে।

Advertisement

শেয়ার মার্কেট এ ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড গুরুত্ব

শেয়ার বাজার বাংলাদেশ এর প্রেক্ষাপটে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়া কোম্পানির গুরুত্ব বেশি। কারন বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেট এ অন্তর্ভুক্ত প্রথম সারির কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ার বাড়াতে আগ্রহী থাকে না। তাই  তারা সাধারণত  ক্যাশ দেয়াতেই বেশি আগ্রহী থাকে। এই সব কোম্পানির শেয়ারের দাম খুব বেশি পরিবর্তিত হতে দেখা যায় না। ফলে এসমস্ত কোম্পানির বিনিয়োগের জন্য তুলনামুলক নিরাপদ এবং এরা ধারাবাহিক লভ্যাংশ ও দিয়ে থাকে।

তাই দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের কাছে বেশিরভাগ সময়ই ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়া কোম্পানিগুলোর চাহিদা বরাবরই বেশি। যেসব কোম্পানির ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড বেশি এবং প্রায় সব সময় ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়, সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কিছুটা কমের দিকে চলে এলে, এই শেয়ারগুলো কিনে তাদের পোর্টফলিওতে যুক্ত করাটা স্মার্ট বিনিয়োগ বলা যায় । কারন শেয়ার মার্কেট এ কম দামে কিনতে পারলেই ইল্ড পাওয়া যাবে বেশি।

অন্যদিকে দেখা যায় বাংলাদেশের বাজারে অপেক্ষাকৃত খারাপ পারফর্ম করা কোম্পানিগুলো স্টক ডিভিডেন্ড দিয়ে থাকে। তারা লাভের সম্পুর্ন বা বেশিরভাগ অংশ কোম্পানির হাতে রেখে দেয় যাতে তা পুনরায় বিনিয়োগ করা যায়। যেখানে কোম্পানির শেয়ার ভ্যালু বৃদ্ধি হওয়ার কথা, সেখানে উল্টো মার্কেটে ভ্যালু কমে যায়। কারন বেশিভাগ ক্ষেত্রেই কোম্পানিগুলো ভালো পরিচালনার অভাবে এই টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে না।

তবে বাজারে কিছু ব্যতিক্রম শেয়ারের অস্তিত্ব আছে, যাদের পারফরম্যান্স বেশ ভালো,  এবং বাজারে লাভ অর্জন করে। তারা কোম্পানির গ্রোথ পরিকল্পনা করে শেয়ারহোল্ডারদের লাভের কিছু অংশ নগদ হিসাবে বন্টন করে দেয় এবং বেশির ভাগ অংশ আবার বিনিয়োগ করে। দূরদর্শিতা ও সঠিক বিনিয়োগ এর কারণে এসব কোম্পানির গ্রোথ রেট ভাল। তাই তাদের নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহটাও বেশি।

শেয়ার মার্কেট এ ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য সামগ্রিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ, কারন একজন বিনিয়োগকারীর চাহিদা হলো একটি ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানির শেয়ার কেনা, প্রতি বছর যার eps বাড়বে এবং এর সাথে ভালো ডিভিডেন্ডও বন্টন করবে। সাথে বেড়ে যাবে শেয়ারের দাম। তাই, ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড এর সাথে কোম্পানির ইপিএস বাড়ছে কিনা তা খেয়াল করাও জরুরি।

অনেক কোম্পানি ইপিএস ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে থাকলেও ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড যা হওয়া স্বাভাবিক তা হয়না। দেখা যায় ডিভিডেন্ড কম দিচ্ছে। তাহলে বুঝতে হবে কোম্পানি হয়তো তার ঋন রিকভার করার জন্যে বা নতুন কোনো প্রজেক্ট দাঁড় করানোর জন্য ডিভিডেন্ড কম দিচ্ছে। সেইক্ষেত্রে কিন্তু পরবর্তীতে বেশ ভালো একটা ডিভিডেন্ড পাবার সুযোগ তৈরী হয়। আবার বাজার খারাপ থাকাকালীন অনেক মৌলভিত্তিক বা ফান্ডামেন্টাল এর শেয়ারের দাম কমে যায় আর বেড়ে যায় ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড যা খুবই স্বাভাবিক, এবং তখনই শেয়ার মার্কেট এ  বিনিয়োগ করার উপযুক্ত একটি সময়।

শেষ কথা

এটা মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, শেয়ার মার্কেট এ একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে লাভের সম্ভাবনা বাড়াতে হলে অবশ্যই ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড সম্পর্কে ভালভাবে জানতে হবে, বুঝতে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।

Advertisement

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।