শেয়ার বাজারে আইপিও কি এবং কিভাবে আবেদন করবেন?
শেয়ার বাজারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি শব্দ আইপিও। দশকের পর দশক ধরে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আইপিও নিয়ে আগ্রহ চোখে পড়ার মত। অনেকে হয়ত জানেন না সর্বপ্রথম আধুনিক আইপিও’র শুরুটা হয়েছিলো ডাচদের হাত ধরে। আইপিও’র মাধ্যমে তারা সাধারণ জনগনকে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শেয়ার অফার করে।
মূলত, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ এর মাধ্যমে কম সময়ে মুনাফা অর্জন করার জনপ্রিয় একটি মাধ্যম এই আইপিও। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার ইচ্ছা থাকলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতেই হবে যার মধ্যে আইপিও একটি অন্যতম বিষয় ।
আইপিও (IPO) কি?
আইপিও (IPO) এর সম্পূর্ণ রুপ হলো Initial Public Offering। যার অর্থ দাঁড়ায় প্রাথমিক গণ প্রস্তাব। কোম্পানিগুলো শেয়ার মার্কেট এ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেয়ার ইস্যু করে থাকে।
লিমিটেড কোম্পানিগুলো তাদের মূলধন সংগ্রহের উদ্দ্যেশ্যে প্রাইমারি মার্কেটে শেয়ার অফার করে। সর্বসাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী- দুই ধরণের বিনিয়োগকারীরাই সেই শেয়ার ক্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াকে আইপিও বলা হয়।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ এ আগ্রহী আবেদনকারীদের মধ্যে শেয়ার আনুপাতিক হারে বণ্টন হয় এবং একজন সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা দিয়ে আইপিও আবেদন করতে পারেন। প্রত্যেক আবেদনকারীর প্রাপ্ত শেয়ার তিনি চাইলে সেকেন্ডারি মার্কেট এ আসার প্রথমদিনেই ১০% লাভে বিক্রয় করা সম্ভব যদি সেরকম বাজার দর পাওয়া যায়। তাই আইপিওকে সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ পদ্ধতি বলা হয়।
সংক্ষেপে আইপিওকে বলা যায় কোম্পানি আইনে রেজিস্ট্রার্ড একটি প্রাইভেট কোম্পানি যেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রুপান্তরিত হয় সেই প্রক্রিয়া।
আইপিও সংক্রান্ত কিছু উল্ল্যেখযোগ্য বিষয়
আইপিও সংক্রান্ত কিছু উল্ল্যেখযোগ্য বিষয় হলঃ
- কোম্পানিগুলোকে আইপিও’র জন্য সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) শর্ত মোতাবেক চলতে হয়।
- এটি একটি কোম্পানিকে প্রাইমারী মার্কেটের মাধ্যমে মূলধন ধরে রাখার উপায় করে দেয়।
- আইপিও শেয়ার বিক্রি করে মূলধন বাড়ানোর অথবা জরুরী প্রয়োজন মেটাবার সহজ ব্যবসায়িক কৌশল।
- বিনিয়োগ ব্যাংকের মাধ্যমে আইপিও’র প্রচার, চাহিদা নির্ধারণ, মূল্য নির্ধারণ, দিনক্ষণ ঠিক করা ইত্যাদি হয়ে থাকে।
আইপিও (IPO) এর ধরন
আপনি যদি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন এবং আইপিও সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তাহলে আপনাকে নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
শেয়ার বাজারে দুই ধরনের আইপিও চালু আছে। অর্থাৎ আইপিওতে দুই উপায়ে শেয়ারের মুল্য নির্ধারণ করা যায়। এগুলো হল-
- ফিক্সড প্রাইস:
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে শেয়ারগুলির একটি নির্দিষ্ট মূল্য থাকে। শেয়ার মূল্যের সাথে কোনো প্রিমিয়াম যোগ হয় না এবং শেয়ারের মূল্যের কোনো পরিবর্তনও হয় না। একজন ক্রেতা বা বিনিয়োগকারী যে পরিমাণ শেয়ার ক্রয় করতে আগ্রহী সেই পরিমাণ স্টক সংখ্যা পেতে পারেন।
- বুক বিল্ডিং:
আরেকটি পদ্ধতি হল বুক বিল্ডিং যে পদ্ধতিতে কোম্পানি শেয়ারের মূল্যের সাথেই একটা অংশ অতিরিক্ত মূল্য প্রিমিয়াম হিসেবে হিসাব করা হয়। কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা বিডিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেয়ারের মূল্য ঠিক করে থাকেন। সাধারন বিনিয়োগকারীদের জন্য বিডিং প্রাইসের চেয়ে ১০% কমে শেয়ারের মূল্য নির্ধারিত হয়।
কিভাবে আইপিও এর জন্য আবেদন করবেন?
আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের জন্য বহুল প্রচলিত পদ্ধতি ছিলো লটারি পদ্ধতি। তবে ২০২১ সাল থেকে শেয়ারবাজারে এই পদ্ধতির বিলুপ্তি ঘটে।
বর্তমানে আনুপাতিক হারে শেয়ার বণ্টনের নীতিমালা চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ আবেদন করা মাত্রই আপনি শেয়ারের মালিক হবেন। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে নিমোক্ত উপায়ে মূলত আইপিওর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- BSEC (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) অনুমোদিত যেকোন ব্রোকারেজ হাউজ এ একটি বিও একাউন্ট করা আইপিও আবেদনের প্রথম ধাপ।
- বিও একাউন্টের মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউজ আপনার আবেদন সাপেক্ষে আপনার পছন্দের শেয়ার ক্রয়ের আবেদন করে দেয়। সেইক্ষেত্রে অবশ্যই নির্ধারিত সময়ে একাউন্টে টাকা জমা দিতে হবে।
- আইপিও তে শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে লট অনুযায়ী আবেদন করা হয়। এক একটি লটে ৫০টি বা ১০০টি স্টক থাকতে পারে। এখানে কিন্তু নিজের পছন্দমতো স্টক কেনার সুযোগ নেই।
- বর্তমান নিয়ম মোতাবেক আইপিও আবেদন করার ক্ষেত্রে একজন বিনিয়োগকারীর বিও অ্যাকাউন্ট নাম্বারে কমপক্ষে ম্যাচিউরড ৫০ হাজার টাকার শেয়ার থাকতে হবে। আনুপাতিক হারে, আইপিও লটারির পরিবর্তে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হবে। একজন বিনিয়োগকারী ১০ হাজার টাকার শেয়ারের জন্য টাকা জমা করতে পারবেন।
- একজন প্রবাসীর ক্ষেত্রে এই বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ১ লাখ টাকা।
- একজন বিনিয়োগকারী তার জমা দেয়া পুরো টাকার শেয়ার বরাদ্দ না পেয়ে থাকলে বাকি টাকা তার বিও অ্যাকাউন্ট নাম্বারে রিফান্ড হয়ে যাবে।
- বিনিয়োগকারী সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ এর যেকোন ব্রাঞ্চ অফিস থেকে আইপিও আবেদন করতে পারেন।
- বর্তমান ডিজিটাল যুগে রয়েছে অনলাইনেও আবেদনের সুযোগ।
আরও পড়ুন- শেয়ার ব্যবসা কি এবং শেয়ার ব্যবসায় লাভবান হওয়ার টিপস
শেষকথা
প্রায় শূন্য ঝুঁকির আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে বহু তরুণ ও অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে। কারন এখানে সেকেন্ডারি মার্কেট এর মত দাম কমে যাওয়ার ঝুকি নেই। বাজার মোটামুটি ভালো থাকলে শেয়ার এর ফেস ভ্যালু এর চেয়ে বেশ বেশি দামেই বিক্রি করা যায়।
তবে বাজার খুব বেশি খারাপ থাকলে, ভালো কোম্পানি না হলে আপনার শেয়ার ফেস ভ্যালু এর চাইতে কমে ও বিক্রি ও শুরু হতে পারে, তবে বাজারে নতুন লেনদেনে আসা শেয়ার এর ক্ষেত্রে এটা খুবই কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এক্ষেত্রে আপনি ভালো দামে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর শেয়ার বিক্রি করতে পারেন। এজন্য শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে আইপিও তুলনামুলক অনেক বেশি নিরাপদ। সঠিক সময় ও সুযোগ বুঝে বিনিয়োগে এই ক্ষেত্র থেকে ভালো লাভবান হওয়া সম্ভব।