চা পাতার ব্যবসা বর্তমানে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া

চা পাতার ব্যবসা

চা পাতার ব্যবসা যে বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর একটি , এটা অনেকই জানেন না। বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের অধিকাংশ দেশেই চা খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। তাই এখানে চায়ের চাহিদা ও অনেক বেশী। চাহিদা বেশী থাকার কারনে এদেশে চা পাতা কে কেন্দ্র করে বিশাল একটি সেক্টর গড়ে উঠেছে এবং এই সেক্টরে অনেকেই ব্যবসা করতে এগিয়ে আসছেন।

আজকের পোস্ট এ চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশে চা পাতা ব্যবসার ইতিবৃত্তান্ত, লাভ, ব্যবসাটি করতে কি লাগবে, বিনিয়োগ, এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়।

বাংলাদেশে চা পাতার ইতিবৃত্তান্ত

বাংলাদেশে চা বাগানে প্রায় ৩ লাখ লোক কাজ করে যার ৭৫ শতাংশ নারী কর্মী। বাংলাদেশের সিলেট, চিটাগাং, পঞ্চগড়, ব্রাম্মনবাড়িয়া, মোলভিবাজার এবং হবিগঞ্জ এই ৬টি জেলায় মোট ১৬৭টি বানিজ্যিক চা বাগান রয়েছে।

প্রায় ২৮৩ বছর আগে ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশে চা পাতার বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় এবং তখন বাংলাদেশ থেকে চা পাতা রপ্তানি ও হত। একসময় বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড এর অন্যতম চা রপ্তানিকারক দেশ ছিল। যদি ও এখন অত রপ্তানি হয়না তারপর ও চা পাতার ব্যবসা আমাদের দেশীয় জিডিপিতে ১% অবদান রাখে।

বাংলাদেশে চায়ের মোট ৩টি নিলামকেন্দ্র রয়েছে এবং বাজারের চায়ের মূল্য কত হবে তা সরকারি নিলাম এর মাধ্যমে ফিক্সড হয়ে থাকে। চা বোর্ড থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্রোকারগন এই নিলাম পরিচালনা করে থাকেন। চা উৎপাদন, রপ্তানি ,সত্যায়ন এবং কোয়ালিটি উন্নয়ন সহ সংশ্লিষ্ট বিষয় দেখভালের জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ড এবং বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট নামে দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

Source- বাংলাদেশে চা উৎপাদন

চা পাতার ব্যবসা করতে চান?

আপনি যদি চা পাতার ব্যবসা করতে চান তাহলে অবশ্যই এই ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্য আপনার জানা থাকা উচিত। এটি আপনাকে এই ব্যবসায়ে সফল হতে সাহায্য করবে। চা পাতা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যাবলি নিম্নে আলোচনা করা হল।

চা পাতার সাইজ, গ্রেড এবং অন্যান্য তথ্য

চা পাতার ব্যবসা করতে গেলে আপনাকে চা পাতা এর খুঁটিনাটি তথ্য জেনে তারপর ব্যবসায় নামতে হবে। বর্তমানে দেশে ব্ল্যাক টি, হোয়াইট, গ্রীন টি ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কোনটির চাহিদা কেমন এসব তথ্য ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। চা পাতা বিভিন্ন সাইজ বা গ্রেড এর হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন গ্রেড এর চাহিদা থাকে। নিম্নে চা পাতার সাইজ বা গ্রেড গুলো দেয়া হল।

  • ডাস্ট।
  • সিডি
  • জিবিওপি।
  • বিওপি।
  • পিডি।
  • ওএফ।
  • আরডি।

চা পাতার এই সাইজগুলোর মধ্যে জিবিওপির চাহিদা বাজারে সবচেয়ে বেশি। রহস্য কি? এর কারণ এতে ২-৩ মিনিট এর মধ্যে লিকার আসে এবং তিন থেকে চার ঘন্টা লিকার সংরক্ষিত হয় এই গ্রেড এর চা পাতা তে। তাই বাংলাদেশের বেশিরভাগ চা দোকানে জিবিওপি চা পাতাই বেশি বিক্রি হয়। এরকম প্রতিটা গ্রেড এর বিভিন্ন দাম ও স্থানভেদে চাহিদার ভিন্নতা আছে।

এগুলো একদম বেসিক একটি তথ্য। আপনি প্যাকেটজাত চা পাতা বিক্রি করতে চান, পাইকারি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগ এ খুচরা বিক্রি করতে চান, তাহলে আপনাকে এসব তথ্য জানতে হবে। এসব তথ্য আপনাকে এই ব্যবসাতে ভালো করতে সাহায্য করবে। এরকম আরও কিছু তথ্য এই পোস্ট এই দেয়া হল।

চা পাতার ব্যবসার প্রকারভেদ

সরাসরি ক্রেতার নিকট খুচরা বিক্রি বাদে চা পাতার ব্যবসা প্রধানত নিম্নে উল্লিখিত ভাবে করা যায়।

  • চা পাতার প্রক্রিয়াজাতকরন, প্যাকেজিং এবং বাজারজাতকরন।
  • চা পাতার ডিলারশিপ ব্যবসা
  • চা পাতার পাইকারি ব্যবসা।
  • চা পাতার খুচরা ব্যবসা (রিটেইল এ বিক্রয়)।
  • চা পাতার রপ্তানি ব্যবসাই।
  • চা পাতার আমদানি ও বাজারজাত ব্যবসা।

চা ব্যবসা করতে কি কি লাইসেন্স প্রয়োজন?

চা পাতার ব্যবসা এর ধরন অনুসারে এর সাথে সম্পর্কিত লাইসেন্স দরকার হতে পারে। চা বোর্ড থেকে এসব লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। তবে চা বোর্ড এর লাইসেন্স এর বাইরে ও কিছু ব্যবসায়িক লাইসেন্স ও কাগজপত্র আছে যেগুলো অন্যান্য রেগুলেটরি বডি থেকে করতে হয়। যেমন- ট্রেড লাইসেন্স, ট্রেডমার্ক লাইসেন্স, বিএসটিআই সনদ, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স, বিআইএন, টিআইএন ইত্যাদি।

নিচের লাইসেন্স গুলো চা বোর্ড থেকে সংগ্রহ করতে হয় ব্যবসার ধরন অনুসারে।

  • খুচরা ও পাইকারি লাইসেন্স– যদি আপনি চা পাতার পাইকারি এবং খুচরা বিক্রয় করতে চান, তাহলে চা বোর্ড থেকে ২৫০০ টাকার বিনিময়ে এই লাইসেন্স করাতে হবে। এই লাইসেন্সটি পেতে আপনাকে কিছু কাগজপত্র আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। যেমন- ট্রেড লাইসেন্স, এনআইডি নাম্বার, প্রতিষ্ঠান ও গোডাউন এর ঠিকানা, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ইমেইল আইডি, মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি।
  • বিটার লাইসেন্স– এই লাইসেন্স এর দরকার হবে যদি আপনি চা পাতার কোন অকশন এ বিড করতে চান। চা বোর্ড থেকে ১০০০০ টাকার বিনিময়ে এই লাইসেন্স করাতে হবে। কাগজপত্র খুচরা ও পাইকারি লাইসেন্স করাতে যা জমা দিয়েছেন সেটা এবং এর সাথে খুচরা ও পাইকারি লাইসেন্স জমা দিতে হবে।
  • ব্লেন্ডার লাইসেন্স– এই লাইসেন্সটি দরকার হয় যদি আপনি প্যাকেটজাত চা পাতা বাজারজাত করতে চান। চা বোর্ড থেকে ২০০০০ টাকার বিনিময়ে এই লাইসেন্সটি সংগ্রহ করতে হবে। এই লাইসেন্সটি পেতে খুচরা ও পাইকারি লাইসেন্স, বিটার লাইসেন্স সহ বিএসটিআই সনদ, ট্রেডমার্ক লাইসেন্স, ব্যাংক সল্ভেন্সি সার্টিফিকেট এবং টি টেস্টার এর সিভি জমা দিতে হবে।
  • ব্রোকার লাইসেন্স– ব্রোকার লাইসেন্সটি ২৫০০০ টাকার বিনিময়ে চা বোর্ড থেকে করাতে হবে। লাইসেন্সটি পেতে আপনাকে পাইকারি ও খুচরা লাইসেন্স এর সাথে কিছু তথ্য যেমন- কোম্পানির নাম, কোম্পানি গঠনের তারিখ, পরিচালকের সংখ্যা, TIN নাম্বার, BIN নাম্বার ইত্যাদি দিতে হবে।
  • বাগান থেকে সরাসরি চা পাতা বিক্রয় করার জন্য লাইসেন্স– এই লাইসেন্সটি দরকার হবে যদি আপনার একটি চা বাগান থাকে এবং আপনি চা বাগান থেকে চা পাতা যে কোন লেভেলেই বিক্রি করতে চান।
  • চা পাতা এক্সপোর্ট লাইসেন্স– আপনি যদি চা পাতা রপ্তানি করতে চান তাহলে এই লাইসেন্সটি চা বোর্ড থেকে করাতে হবে।
  • চা পাতা ইমপোর্ট লাইসেন্স– আপনি যদি চা পাতা আমদানি করে ব্যবসা করতে চান তাহলে চা বোর্ড থেকে এই লাইসেন্সটি দরকার হবে।

চা পাতার ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?

প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে কি ধরনের ব্যবসা শুরু করতে চান।

যদি আপনি স্থানীয় পর্যায়ে চা পাতা পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করতে চান, বা কোন চা কোম্পানির ডিলারশিপ করতে চান, তাহলে আপনার মূলধন লাগতে পারে মার্কেট সাইজ ও চাহিদা বুঝে। এক্ষেত্রে, ৫০০০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০-২৫ লাখ টাকা ও বিনিয়োগ লাগতে পারে। যদি আপনি খোলা চা পাতা সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটজাত করে নিজ ব্র্যান্ড এর নামে বা নাম ছাড়া বাজারজাত করতে চান তাহলে আপনার বিনিয়োগ মার্কেট সাইজ ও চাহিদা্র উপর ভিত্তি করে ৫ লাখ থেকে ২-৩ কোটি টাকাও লাগতে পারে। যদি আপনি রপ্তানি করতে চান তাহলে ও সেটা চাহিদা বা অর্ডার এর উপর ভিত্তি করে ১০-১৫ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকাও লাগতে পারে।

এই আর্টিকেল এ আমরা চা পাতার ডিলারশিপ ব্যবসা এবং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা সম্পর্কে আলোচনা করব। এতে আপনি কম পুঁজিতে এই ব্যবসা শুরু করার একটা ধারনা পেয়ে যাবেন।

চা পাতার ডিলারশিপ ব্যবসা

আপনি নামি বা ভালো কোন চায়ের কোম্পানি যেমন সিলন গোল্ড, ইস্পাহানি মির্জাপুর,  তাজা,  নাম্বার ওয়ান চা, ফিনলে চা ইত্যাদি ব্র্যান্ড এর যেকোনো একটি কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আপনার এলাকায় তাদের ডিলারশিপ নিতে পারেন।

যদি প্রতি কেজি চা পাতার ডিলারমূল্য যদি ৩৫০ করে ধরি, তবে প্রথম লিফটিং এ মিনিমাম ৫০ কেজি চা পাতার দাম পড়ছে ১৭৫০০ টাকা। গোডাউনে মার্কেট সাপ্লাই এর ব্যাক আপ হিসেবে আপনার উচিত অন্তত আরো ৫০-৭০ কেজি চা পাতা মজুদ রাখা। এটাকে ফ্লোর স্টক বলা হয়। এক্ষেত্রে অবশ্য কোম্পানির নিজস্ব রুলস থাকতে পারে। 

অর্থাৎ, রানিং স্টক, ব্যাক আপ স্টক, গোডাউন এডভান্স এসব মিলিয়ে শুরুর দিকে আপনার ১ লাখ টাকার মত বিনিয়োগ লাগতে পারে। তবে মার্কেট চাহিদা বিবেচনায় এই বিনিয়োগ বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত পোস্ট- ১ লাখ টাকায় ব্যবসা

চা পাতার খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা

চা পাতার পাইকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনি আমদানি করে অথবা সরাসরি বাগান থেকে চা পাতা সংগ্রহ করে পাইকারি আড়তে বিক্রি করতে পারেন। তবে সেটা বড় বিনিয়োগ এর ব্যাপার।

এবার আসা যাক, চা পাতার খুচরা ব্যবসার জগতে । খুচরা ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনাকে পাইকারিতে কিনে রিটেইল পর্যায়ে খুচরা বিক্রি করতে হবে।

যদি আপনার বিনিয়োগ ৫০০০০ টাকা বা তার বেশী হয়, তাহলে আপনি পাইকারি পার্টি থেকে চা পাতা কিনে আপনার এলাকার চায়ের দোকান ও ছোট গ্রসারি শপ গুলোকে টার্গেট করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। প্রতিটা এলাকাতে এলাকাতে বিভিন্ন জায়গায় অনেক চা দোকান আছে। আপনার কাজ হবে সেই দোকান গুলোতে রেগুলার যাতায়াত করে, তাদের কাছে আপনার চা পাতা বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া। আপনি তাদের কাছে মার্কেট প্রাইসের চেয়ে একটু কম দামে উন্নত চা-পাতার সাপ্লাই দিবেন এই আস্থা তৈরি করাতে হবে।

শুরুতে তারা আগ্রহ দেখাবেনা তেমন, এটাই স্বাভাবিক।  কিন্তু দমে গেলে চলবে না। কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত ভাবে এসব দোকানিকে বিক্রয় প্রস্তাব দিয়ে, প্রথমদিকে অল্প কিছু বাকি দিয়ে দেখতে পারেন। দেখবেন বেশ কিছু দোকানি একটা পর্যায়ে আপনার চা পাতা নিতে আগ্রহ দেখাবে। তারপর আপনি তাদেরকে নিয়মিত চা পাতার সাপ্লাই দেওয়া শুরু করবেন। এভাবে একসময় দেখবেন আপনার চা পাতার ব্যবসা তে বেশ কিছু স্থায়ী কাস্টমার তৈরি হয়ে গেছে। চাহিদা বুঝে তখন আপনি আরো বিনিয়োগ বাড়াতে পারেন।

সম্পর্কিত পোস্ট- ২ লাখ টাকায় ব্যবসা

কোথায় পাবেন পাইকারি চা পাতা?

সিলেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি পরিমাণে চা উৎপাদন হয়। তাই সিলেট চায়ের রাজধানী হিসেবেই সুপরিচিত। ভালো মানের এবং সবচেয়ে কম দামের পাইকারি চা পাতা কেনার জন্য সিলেটের শ্রীমঙ্গল উত্তম। শ্রীমংগল এ খোঁজ নিলে আপনি অনেক বড় বড় চায়ের পাইকারি আড়তের খোঁজ পেয়ে যাবেন। এছাড়া চিটাগাং এবং ঢাকায় ও অনেক পাইকারি আড়তের খোঁজ পাবেন। Google এ সার্চ দিলে এরকম কিছু পাইকারি আড়তের ঠিকানা ও যোগাযোগ এর নাম্বার পেয়ে যাবেন।

চা পাতার ব্যবসাতে লাভ কেমন?

প্রথমে ডিলারশিপের কথা বলা যাক। যেহেতু ডিলার হিসেবে আপনি বিক্রি করবেন রিটেইল এ তাই ডিলার মূল্য থেকে রিটেইল এর ক্রয়মূল্য এর পার্থক্যটাই আপনার লাভ। কোম্পানিগুলোর কেজি প্রতি রিটেইল প্রাইস যদি ৩৭৫ টাকা হয় আর ডিলার হিসেবে আপনার ক্রয়মূল্য যদি ৩৫০ টাকায় হয় কেজি প্রতি আপনার লাভ থাকবে ২৫ টাকা। আপনার এলাকায় যদি ১০০+/- রিটেইল থাকে এবং প্রতি রিটেইল এভারেজ এ দৈনিক ২ কেজি ও চা পাতা নেয়, তাহলে আপনার দৈনিক বিক্রয় হবে ২০০ কেজি এবং ২৫ টাকা কেজি প্রতি লাভ হিসেবে আপনার দৈনিক আয় হবে ৫০০০ টাকা, যেটা মাসিক হিসেবে ১৫০০০০ টাকা। এস আর, ডেলিভারি খরচ এবং গোডাউন খরচ যদি মাসিক ৬০০০০ টাকা হয় তাহলে আপনার মাসিক নিট আয় হবে ৯০০০০ টাকা। আপনার বিনিয়োগ অনুপাতে এই পরিমান নিট আয় অবিশ্বাস্য!

একইভাবে পাইকারিতে ধরা যাক আপনি কেজিপ্র্তি ৩৩০ টাকা করে ৫০ কেজি চা পাতা কিনলেন। এতে আপনার বিনিয়োগ হল ১৬৫০০ টাকা। এরপর  আপনার এলাকায় এবং আশেপাশের এলাকায় ধরা যাক ৭০/৮০  টি চা দোকানে আপনি গেলেন। দোকানিরা সাধারণত কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ৩৮০-৪০০ টাকা কেজি তে চা পাতা কেনে। এই রেট অবশ্যই উঠানামা করে। আপনি যদি চা পাতা গুলো এসব দোকানদারদের কাছে কিছুটা কমিয়ে ৩৬০ টাকা করেও বিক্রি করতে পারেন তাহলে তারা অবশ্যই আপনার কাছ থেকে নেবে।

এখন প্রতিদিন ৩২০ টাকা করে ৫০ কেজি চা পাতা যদি আপনি দোকানগুলোতে সরবরাহ করতে পারেন, তাহলে প্রতি কেজি তে আপনার লাভ থাকছে ৩০ টাকা করে।  সুতরাং আপনার আয় হচ্ছে ১৫০০ টাকা প্রতিদিন। মাসে ১৫০০ কেজি চা পাতা এভাবে বিক্রি হলে আপনার মাসিক আয় হবে ৪৫০০০ টাকা। এখানে সব খরচ বাদ দিয়ে যদি আপনার নিট লাভ ২৫০০০ টাকা ও থাকে তাহলে মাসিকে আপনার লাভ কত দাড়ায়? বিনিয়োগ অনুপাতে এই লাভের পরিমাণ মাসিক ১৫১%, যেটা চা পাতার ব্যবসা দিয়েই করা সম্ভব!

চা পাতার ব্যবসাতে ঝুঁকি কেমন?

চা পাতার ব্যবসা বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া গুলোর একটি, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সকল ব্যবসাতেই কম বেশি ঝুঁকি থাকে। কাজেই সেসব দিক গুলো জেনেই ব্যবসায় নামা উচিত। এই ব্যবসা এর ক্ষেত্রে ও কয়েকটি ঝুঁকি রয়েছে। একটা হল যদি আপনি খারাপ চা পাতা সংগ্রহ করেন, আর একটা হল, চা পাতা সংগ্রহ করার সময় বেশী দামে নিয়ে ফেললেন। আপনাকে অবশ্যই চা পাতার কোয়ালিটি বুঝতে হবে অথবা এগুলো ভালো বুঝে এমন একজনের সহায়তা নিতে হবে।

আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, আপনাকে অবশ্যই চা পাতার প্রতিদিনের পাইকারি দামের আপডেট রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে বেশী দামে চা পাতা সংগ্রহ করার ঝুঁকি কিছুটা কম থাকবে। আরেকটি ঝুঁকি হল, এই ব্যবসায়ে আপনাকে স্বল্প মেয়াদে বাকি দিতে হবে কারণ বাকি ছাড়া দোকানদার আপনার পন্য নিতে চাইবেনা

যদি শুধুমাত্র কম টাকার পেছনে ছুটে যেখান সেখান থেকে মানহীন বা লো কোয়ালিটি এর চা পাতা সংগ্রহ করেন তাহলে চায়ের মান ভালো হবে না। আপনার ক্রেতা হারাতে হবে এবং আপনার ব্যবসা লাভের মুখ দেখতে পাবেনা । কাজেই ভালো জায়গা থেকে দেখে শুনে মানসম্পন্ন চা ক্রয় করুন এবং একটা শক্তিশালী বিক্রয় নেটওয়ার্ক তৈরি করুন। আবার বিক্রয় বাড়ানোর জন্য ভাল-খারাপ পার্টি যাচাই না করে বাকি দেয়া ও যাবেনা। চেষ্টা করতে হবে যতটা সম্ভব নগদে বিক্রি করার। তাহলে ইনশাআল্লাহ এই ব্যবসা থেকে আপনি অবিশ্বাস্য রকম আয় করতে পারবেন।

পরিশেষ

চায়ের চাহিদা বিবেচনায় বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের সব দেশে চা পাতার ব্যবসা লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। তবে যে ব্যবসাটি করবেন সেটা ভালোভাবে না জেনে বুঝে ব্যবসায়ে নেমে গেলে লোকসানের সম্ভাবনা থাকবেই। তাই এই ব্যবসা লাভজনক ভাবে করতে গেলে অন্য সব ব্যবসার মতই এই ব্যবসাতেও আপনার ভালো ধারনা থাকা আবশ্যক।

আরও পড়ুন- ইউনিক বিজনেস আইডিয়া

নতুন ব্যবসার আইডিয়া

FAQ

১ কেজি চা পাতার দাম কত?

বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড এর চা পাতার দাম এ ভিন্নতা আছে। নামি ব্র্যান্ড এর অধিকাংশই ৪০০ বা ৫০০ গ্রাম এর প্যাকেট চা পাতা ও বক্স টি ব্যাগ বিক্রি করে। তবে এভারেজ ধরলে ১ কেজি চা পাতার এমআরপি ৪০০ টাকার কম বেশী হতে পারে।

চা পাতার পাইকারি বাজার কোথায়?

সিলেট, হবিগঞ্জ, মোলভিবাজার, শ্রীমঙ্গল, পঞ্চগড়, ঢাকার মিরপুর, ফার্মগেট, আলুবাজার, চিটাগাং এর কোতোয়ালি, খাতুনগঞ্জ এবং চৌমুহনীতে চা পাতার পাইকারি ব্যবসা করে এরকম অনেক পার্টি রয়েছে।

চা বিক্রি কি ভালো ব্যবসা?

চা বিক্রি একটি লাভজনক ও নিরাপদ ব্যবসা। লাভের মার্জিন বিবেচনা ও বিনিয়োগের কম ঝুঁকি বিবেচনায় নিলে এটা খুবই ভালো ব্যবসা। এটা অনেকটা লস ছাড়া ব্যবসা ও বলা চলে।

চা পাতা কত প্রকার ও কি কি?

চা পাতা প্রস্তুত করার যে প্রক্রিয়া সেটা অনুসারে চা পাতাকে নিম্নোক্ত শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
১। গ্রিন টি।
২। ব্লাক টি।
৩। হোয়াইট টি।
৪। ইয়েলো টি।
৫। ইষ্টক টি।
৬।উলং টি।
৭। প্যারাগুয়ে টি।

ভালো চা পাতা চেনার উপায় কি?

ভালো চা পাতা বা আসল চা পাতা চেনার সহজ কিছু উপায় আছে।
১। কিছু চা পাতা হাতের তালুতে রেখে ঘষে দেখতে পারেন। যদি হাতে চা পাতার কোন রঙ থাকে তাহলে বুঝবেন চা পাতাতে ভেজাল আছে।
২। একটি গ্লাসে ঠাণ্ডা পানি নিয়ে তাতে অল্প চা পাতা মেশান। ১ মিনিট পর দেখবেন রঙ আসছে কিনা। যদি ১ মিনিটেই রঙ আসে তাহলে চা পাতাতে শতভাগ ভেজাল আছে কারণ ভেজালমুক্ত ফ্রেশ চা পাতাতে এত তাড়াতাড়ি রঙ আসবেনা।
৩। ভেজালমুক্ত চা পাতা চেনার আরেকটি চমৎকার উপায় হল টিস্যু পেপার এ চা রেখে তাতে অল্প পানি দিয়ে ১-২ মিনিট রোদে শুকাতে দেয়া। ১-২ মিনিট পর টিস্যু থেকে চা পাতা গুলো সরিয়ে দেখতে হবে টিস্যুতে চা পাতার কোন দাগ বা রঙ দেখা যায় কিনা। যদি কোন দাগ বা রঙ দেখা না যায় তাহলে বুঝতে হবে চা পাতাতে কোন ভেজাল নেই।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।