ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করতে আপনার কি জানা উচিৎ?
২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ড্রপশিপিং ব্যবসা এর আনুমানিক বাজার ছিল ২৮২ বিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকরা ধারনা করছেন আনুমানিক ২৩% কম্পাউনড বার্ষিক গ্রোথ রেট ধরে ২০২৪ থেকে ২০৩২ সালের মধ্যে এই বাজার আনুমানিক ১৮১৭. ১৩ বিলিয়ন ডলারে পোঁছাতে পারে। আশা করি এই তথ্যের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারছেন বর্তমান সময়ে এবং অদুর ভবিষ্যতে ড্রপশিপিং ব্যবসা এর অবস্থান এবং বিশ্বব্যাপী এর সম্ভাবনা সম্পর্কে।
সাল | ড্রপশিপিং ব্যবসা এর গ্লোবাল বাজার (বিলিয়ন ডলার) | কম্পাউনড বার্ষিক গ্রোথ রেট |
২০২৩ | ২৮২ | |
২০২৪ | ৩৪৬.৮৬ | ২৩% |
২০২৫ | ৪২৬.৬৩ | ২৩% |
২০২৬ | ৫২৪.৭৬ | ২৩% |
২০২৭ | ৬৪৫.৪৫ | ২৩% |
২০২৮ | ৭৯৩.৯০ | ২৩% |
২০২৯ | ৯৭৬.৫০ | ২৩% |
২০৩০ | ১২০১ | ২৩% |
২০৩১ | ১৪৭৭.৩৪ | ২৩% |
২০৩২ | ১৮১৭.১৩ | ২৩% |
ড্রপশিপিং ব্যবসা কি?
বর্তমান ডিজিটাল মিডিয়া নির্ভর দুনিয়াতে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ড্রপশিপিং ব্যবসার আইডিয়া । অনেকের কাছেই এই বিষয়টি সম্পূর্ণ নতুন।
সোজা ভাষায়, ড্রপ শিপিং হল খুচরা ব্যবসার এমন একটি ধরন যেখানে পণ্যের বিক্রেতা নিজের কাছ পন্য স্টক না রেখে গ্রাহকদের অর্ডার নিয়ে থাকে। (source-wikipedia)।
একজন সম্ভাব্য ক্রেতার কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে, সেই অনুযায়ী পণ্য কিনে, তা অর্ডার করা ক্রেতার কাছে সরবরাহ করাই হলো ড্রপশিপিং ব্যবসা। আরেকটু বিস্তারিতভাবে বললে, প্রথমেই আপনাকে নিজের ডিজিটাল স্টোরে যে ধরণের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে চান তার সকল বিস্তারিত তথ্য রাখতে হবে। সম্ভাব্য কাস্টমার সেই ডিজিটাল স্টোরে ঢুকে প্রোডাক্টটি নিয়ে জানতে ও অর্ডার করতে পারবে।
এরপর একজন সাপ্লায়ারের কাছ থেকে পন্যটি কিনে আপনি কাস্টমারকে ডেলিভারি করবেন। মূলত এই পুরো প্রসেসটির নামই ড্রপশিপিং। আজকের এই দিনে যখন ডিজিটাল জগতের জয়জয়কার, তখন ড্রপশিপিং ব্যবসা একটি আশাজনক ব্যবসায়ের নাম।
ড্রপশিপিং ব্যবসা কিভাবে শুরু করতে হয়?
ড্রপশিপিং করতে শুরুতেই স্টোরের প্রয়োজন পড়বে। যেখানে আপনি আপনার পণ্যের ডিটেইলস সাজিয়ে রাখবেন এবং ক্রেতা সেখান থেকে অর্ডার করবেন।
অনেকে আছেন যারা নিজেরাই ই-কমার্স ওয়েবসাইটের ব্যবস্থা করেন। এবং সেখান থেকেই কাজ শুরু করতে পারেন। কিন্তু আর্থিক বা জানাশোনার জায়গায় কমতি থাকলে তা কঠিন হয়। সেইক্ষেত্রে যারা রেডি স্টোর চান, তাদের জন্য সমাধান হলো Shopify এর মতো রেডি স্টোর। যেখান থেকে ড্রপশিপিং ব্যবসার জন্য আপনি ডিজিটাল স্থান ভাড়া নিতে পারবেন। তবে বলে রাখা ভালো ১ বছরে Shopify কোম্পানিকে যত ভাড়া দিতে হয়, সেই সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে একটি E-Commerce ওয়েবসাইট তৈরি করে কাজ করলে তা আরো সুবিধাজনক ও লাভজনক হয় । এর মাধ্যমে কিছু বাড়তি আয়েরও সম্ভাবনা ধীরে ধীরে তৈরি হয়।
ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করার জন্য কি কি প্রয়োজন?
ড্রপশিপিং শুরু করার জন্য কি কি প্রয়োজন? নিম্নে একটি তালিকা দেয়া হল যা আশা করি আপনাকে এই ব্যবসা সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ আইডিয়া দিতে সক্ষম হবে।
- একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট
- নিশ সিলেক্ট করা
- সাপ্লায়ার
- মার্কেটিং করার দক্ষতা
- কাস্টমার কমিউনিকেশনে পারফেক্টশন
ড্রপশিপিং ব্যবসা এর মাধ্যমে কীভাবে সফল হবেন?
ড্রপশিপিং এমন এক ব্যবসার আইডিয়া, যেখানে বিনিয়োগ একদম কম, তাই ঝুঁকিও অনেক কম। তবে এই সেক্টরে সফল হতে হলে কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে।
নিস নির্বাচন
নিস নির্বাচনের উপর ড্রপশিপিং ব্যবসায়ের সাফল্য অনেকখানি নির্ভর করে। তাই সঠিক নিস নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই, ট্রেন্ডিং পণ্যগুলি নিয়ে গবেষণা করুন, আপনার টারগেট মার্কেট চিহ্নিত করে, নিজের কি কি পণ্য নিয়ে আগ্রহ আছে তাও খেয়াল করুন।
চাহিদা বেশি কিন্তু সাথে প্রতিযোগিতা কম এমন একটি নিস পছন্দ করতে পারলে তা থেকে লাভের আশা বেশি করা যায়।
ইউজার ফ্রেন্ডলি অনলাইন স্টোর
অনলাইন স্টোরই কিন্তু ড্রপশিপিং ব্যবসায়ের মূল জিনিস। তাই ইউজার ফ্রেন্ডলি অনলাইন স্টোর তৈরির কোনো বিকল্প নেই। যতটা সম্ভব কম দ্রুত লোডিং সময়, সহজ নেভিগেশন, এবং মোবাইলে ব্যবহারের জন্য সহজ এমনভাবে ওয়েবসাইট অপ্টিমাইজ করা খুব জরুরি। উচ্চ-মানের পণ্যের ছবি, বিস্তারিত বিবরণ, এবং সাইটে এসে গ্রাহকের যা অভিজ্ঞতা তা আপনার ব্যবসায়ের উপর সম্ভাব্য ক্রেতার আস্থা বাড়াবে এবং তাকে আসল ক্রেতাতে রুপান্তর করার সম্ভাবনা বাড়াবে।
সঠিক মার্কেটিং কৌশল
ড্রপশিপিং ব্যবসা এর সাফল্যের পিছনে মার্কেটিংয়ের বিশাল গুরুত্ব রয়েছে। আপনার অনলাইন স্টোরে লোকের আনাগোনা বাড়াতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর সঠিক ব্যবহার, ইনফ্লুয়েন্সের মার্কেটিং এবং সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান (SEO) জরুরি। নিয়মিত তথ্যবহুল আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরী ও প্রচার করতে হবে। বর্তমান প্রতিযোগীতার বাজারে নিজের একটি শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করতে চাইলে এবং একইসাথে দীর্ঘদিন কাস্টমারকে নিজের সাথে ধরে রেখে সফল হতে চাইলে, আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক মার্কেটিং কৌশল নির্ধারণ করা বাধ্যতামূলক।
সৎ ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী নির্বাচন
ড্রপশিপিং ব্যবসা যেহেতু সম্পূর্ণভাবে অন্যের পণ্য নিয়েই পরিচালনা করতে হয় তাই পণ্যের গুণমান এবং সময়মতো ডেলিভারি নিশ্চিত করার বিষয়টিতে ভরসা করা যায় শুধুমাত্র একজন সৎ ও বিশ্বস্ত সরবরাহকারীর উপর। তাই, সরবরাহকারীদের নির্বাচন করার আগে যথেষ্ট খোঁজ নিন, পর্যালোচনা করুন এবং কিভাবে তার সাথে দ্রুততম সময়ে যোগাযোগ করবেন তা আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চিত করুন। একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী নেটওয়ার্ক আপনার ব্যবসায়ের জন্য ইতিবাচক বিষয় যা রীতিমতো ব্যবসায়ের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। ভালো সরবরাহকারীর সাহায্যেই ক্রেতাকে সন্তুষ্ট রাখা যায়।
গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা
ড্রপশিপিং ব্যবসা করে সফল হতে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করা ছাড়া উপায় নেই। সফল হতে চাইলে ভাল গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। তাই গ্রাহকের সাথে যোগাযোগের সহজ উপায় রাখুন, অনলাইনে দ্রুত তার প্রশ্নগুলির উত্তর দিন, তারা কিছু নিতে উদ্বিগ্ন থাকলে সমাধান করুন এবং সঠিক প্রয়োজনমতো সঠিক তথ্য প্রদান করুন। এতে করে গ্রাহক ভরসা করতে পারবে, একাধিকবার ক্রয় করতে আগ্রহ দেখাবে। শুধু তাই নয়, কিছুক্ষেত্রে অন্যকেও আপনার থেকে ক্রয় করতে উৎসাহিত করবে।
নিয়মিত এনালাইসিস এবং নতুন জিনিস আয়ত্ত্ব করা
নিয়ম করে আপনার বিক্রয় ডেটা, গ্রাহকের ফিডব্যাক এবং বাজারের চাহিদা, সমস্যা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করুন। লাভজনকভাবে ব্যবসা করতে এবং গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে এই তথ্যগুলো মাথায় নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনাগুলো করুন। কারণ এর মাধ্যমেই একমাত্র চাহিদা ও যোগানের সমন্বয় করা সম্ভব৷ এই এনালাইসিসের পথে নানা সময় আপনাকে নানা স্কিল বা অভ্যাস আয়ত্ব করতে হতে পারে৷ এই ব্যাপারেও মনযোগী হোন। তাতে করে আপনি আরো চৌকসভাবে ড্রপশিপিং ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।
ড্রপশিপিং ব্যবসা এর সুবিধা ও অসুবিধা
অন্য আরও আট দশটা ব্যবসায়ের মত ড্রপশিপিং ব্যবসা করতে ও সুবিধা অসুবিধা দুটোই রয়েছে। যদি আপনি এই ব্যবসায়ে নতুন হন বা ব্যবসাটি করার পরিকল্পনা করছেন তাহলে এই ব্যবসায়ের সুবিধা অসুবিধা দুটোই আপনার জানা থাকা উচিৎ।
ড্রপশিপিং ব্যবসা এর সুবিধা
১। ড্রপশিপিং ব্যবসাতে যেহেতু ষ্টক করা বা অফলাইন মার্কেটিং করা বা ব্যবসা সার্বিকভাবে পরিচালনা করতে হয়না, সেহেতু পরিচালনা খরচ নেই বললেই চলে।
২। নানারকম পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন কারণ কোনো নির্দিষ্ট পণ্য আপনাকে স্টোর করতে হচ্ছে না তাই শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনো পণ্য বিক্রির চাপ নেই।
৩। ড্রপশিপার হিসেবে পণ্য পরিবহণ এবং প্যাকেজিং নিয়ে আলাদা করে চিন্তিত হবার কিছু নেই। নিয়মিত কোনো চ্যানেল মেইন্টেইন করারও কিছু নেই। বরং অর্ডারকারীর ঠিকানা অনুযায়ী পণ্য পৌঁছে দিতে যখন যে ধরণের, যেই পরিবহণ প্রয়োজন পড়ে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করা যায়।
৪। আজকাল অনেক ড্রপ শিপিং ই-কমার্স ওয়েবসাইট বিনামূল্যে শুরু করার সুযোগ আছে তাই বাজেট নিয়ে চিন্তা কম।
ড্রপশিপিং ব্যবসা এর অসুবিধা
ড্রপশিপিং ব্যবসা এর ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা রয়েছে যা অস্বীকার করা যায় না। যদিও কাস্টমারের চাহিদা বুঝে ও ধৈর্য্য ধরে কাজ করলে সেগুলো দূর করা সম্ভব। অতিরিক্ত প্রতিযোগিতা একজন ড্রপশিপিং ব্যবসায়ীকে কাবু করে ফেলতে পারে। কেননা বর্তমানে প্রায় সকল ই-কমার্স ব্যবসাতে রয়েছে ব্যাপক প্রতিযোগী ভাব। ড্রপশিপিংও কিন্তু এক ধরণের ই-কমার্স বিজনেস।
১। ড্রপশিপিং ব্যবসায়ে লজিস্টিক নিয়ে চিন্তা নেই সত্যি তবে এই সেক্টরে কিন্তু মুনাফা খুব বেশি নয়।
২। সবসময় সময়মতো অর্ডার অনুযায়ী পণ্য সাপ্লাইয়ারের কাছে পাওয়া যায় না।
৩। কিছু ব্যতিক্রম বাদে সাপ্লায়ার কোনো খারাপ বা ভুল পণ্য পাঠালে তার দায়ভার আপনার।
৪। ডিজিটাল স্টোরে পণ্য সাজিয়ে রাখলেও, আসল মার্কেটে কোন পণ্য কখন কি পরিমাণে আছে, কখন কোনটা বেশি বিক্রি হয়ে স্টক কমে যাচ্ছে, এসব ট্র্যাক আপনার কাছে রিয়েল টাইমে থাকে না। যা অত্যন্ত মুশকিলের ব্যাপার। কারণ অর্ডার নেবার পর অনেকসময় দেখা যায় যে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
৫। বর্তমানে এই কাজের মার্কেট অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, কাজ অনুযায়ী অনেকসময় মুনাফা যথেষ্ট হয় না।
শেষ কথা
অন্য যেকোন ব্যবসায়ের মতই সবকিছু জেনে বুঝে, সঠিকভাবে এনালাইসিস করে, যথেষ্ট পরিমাণ মানসিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে সাথে ড্রপশিপিং ব্যবসা করে সফল হওয়া সম্ভব।
FAQ
ড্রপশিপিং করে বেশ ভালো পরিমানে আয় করছেন, এমন অনেকেই আছেন। আপনার পন্যের সরবরাহকারী যে দাম আপনার থেকে পন্য বাবদ নিবেন, তার সাথে নির্দিষ্ট মার্জিন যোগ করে আপনাকে বিক্রি করতে হবে। এক্ষত্রে যে মার্জিন যোগ করবেন, সেটি আপনার লাভ। তবে এক্ষত্রে আপনার খেয়াল রাখতে হবে, মার্জিন যোগ করার পর পন্যের যে দাম দাঁড়াবে সেটা যাতে সমজাতীয় পন্য বিক্রয়কারীদের সমান বা তার চাইতে কম হয়ে। কারণ ই-কমার্স সেক্টরটি অনেকে বেশী প্রতিযোগিতা পূর্ণ এবং এখানে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বেশী দামে বিক্রি করে আপনি টিকতে পারবেন না এবং আপনার ড্রপশিপিং ব্যবসা ও সফল হবেনা। তবে এখানে একবার আপনার ব্যবসা আস্থা অর্জন করলে এ ব্যবসায়ে আপনি অবিশ্বাস্য পরিমান লাভ করতে পারবেন।
অবশ্যই ড্রপশিপিং ব্যবসা হালাল, তবে যে পন্য নিয়ে আপনি ড্রপশিপিং করছেন সেটি হালাল পন্য হওয়া দরকার।