গ্রামের ৫টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া ২০২৪
গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে কাজ করাটা কি তুলনামুলক সহজ? যদি আপনি এটাকে শহরের ব্যবসার সাথে তুলনা করেন তাহলে এটি একদিক থেকে অবশ্যই তুলনামূলক সহজ। তবে গ্রামে ক্রেতা সংখ্যা, লেনদেনের ভলিউম বিবেচনা করলে আবার এটিকে আপনার সহজ বলে মনে নাও হতে পারে। তবে একথা সত্য, গ্রামে ব্যবসা করা এখনকার সময়ে আগের চেয়ে অনেক বেশী সহজ এবং এই ডিজিটাল যুগে গ্রামে একটি সফল ব্যবসা গড়ে তোলাও কষ্টসাধ্য কিছু নয়।
ব্যবসা বরাবরই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়, আর এই ২০২৩ এ এসে সেই চ্যালেঞ্জ যেনো বেড়ে গেছে আরো কয়েক গুন৷ তাই এখনকার সময়ে ব্যবসা করতে গেলে অনেক বিষয় মাথায় রেখে, হিসাব নিকাশ কষে মাঠে নামতে হয়। আর সেক্ষেত্রে একটি বড় বিষয় বিবেচনায় রাখা জরুরি, যা হলো ব্যবসা স্থাপন করার স্থান।
গ্রামে ব্যবসা দাঁড় করানো অনেকদিক থেকেই লাভজনক। জনবল, কাজ পরিচালনা ও অন্যান্য খরচ সবই শহরের তুলনায় কম থাকে। একই ব্যবসা শহরে চালানো আর্থিকভাবে যতখানি চাপের, গ্রামে তা অনেকটাই হ্রাস পায়। একইসাথে ঝুঁকিও কম থাকে। আজ তাই আমরা আলোচনা করবো ২০২৪ এ লাভজনক কিছু গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে।
গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া
১. তাজা ও ফর্মালিনমুক্ত সবজির ব্যবসা
গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে সবজির ব্যবসা একটি অন্যতম লাভজনক ব্যবসা। সবজি এমন এক খাবার যার চাহিদা গ্রাম, শহর সবখানে। এবং এই সবজির চাহিদার কোনো নির্দিষ্ট সময়, ঋতু, এলাকা নেই৷ কিন্তু ব্যাপার হলো এই ২০২৪ সালে এসে ভেজালমুক্ত তাজা সবজি বাজারে পাওয়া কঠিন৷ তারপরও মানুষের প্রাত্যাহিক খাবারের পাতে সবজি একটা কমন আইটেম, এবং সেই কারনেই সকল শ্রেণী, পেশার মানুষের কাছে এর চাহিদা এখন তুঙ্গে।
আবাদি জমি বাদে এ ব্যবসার জন্য বড় অংকের অন্য কোনো বিনিয়োগ প্রয়োজন পড়ে না। গ্রামে চাষের জন্য জায়গা নেয়া যায় আবার অনেকের পিতৃ সম্পত্তিও থাকে। গ্রামের বাজার থেকেই কম খরচে সার, বীজ, কীটনাশক কিনে সহজে এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে এমন কোনো উপকরণের যোগান প্রয়োজন পড়ে না যার জন্য শহরের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে কাঁচামাল সংগ্রহজনিত খরচ নেই৷
সারাবছর ফলন হয় এমন সবজিসহ ঋতুভেদে জন্মানো সবজি চাষের দিকে নজর রাখতে হবে৷ একই ক্ষেতে কি কি প্রকার সবজি একইসাথে ফলানো সম্ভব, দুই লাইন সবজির মধ্যে কোনো একটা শাকের পদ লাগানো যায় কিনা এসব খেয়াল রাখা একজন কৃষি ব্যবসায়ীকে সফলতা এনে দেয়। পাশাপাশি এখন প্রতিটি জেলা পর্যায়ে কৃষি অফিসগুলোতে আবহাওয়া পূর্বাভাস, সময়পযোগী পদক্ষেপ এসব নিয়ে ধারণা দেয়া হয়৷ ব্যবসার সাবধানতা নিশ্চিত করতে এসব নিয়ে ধারণা রাখা উচিৎ।
সাধারণ এলাকার বাজার, ফর্মালিনমুক্ত বাজার হিসেবে সাপ্তাহিক আয়োজন, এমনকি অনলাইনেও তাজা ও ভেজালমুক্ত সবজির ক্রেতামহল তৈরি করা সম্ভব৷ গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে সবজির ব্যবসা বেশ লাভজনক।
২. মাছ ও মুরগীর যৌথ ব্যবসা
মাছ ও মুরগীর যৌথ ব্যবসার ধারনা খুবই জনপ্রিয় ও প্রচলিত একটি ব্যবসা।
শুনতে অবাক লাগলেও একসাথে মাছ ও মুরগীর খামার ব্যবসা করতে খরচ হয় তুলনামূলক কম। তাই একে লাভজনক গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে গন্য না করে উপায় নেই৷
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে গ্রামে আনাচে কানাচে থাকা পুকুর থেকে একটি বেছে নিতে হবে৷ পুকুর বর্গা নিতে গ্রামাঞ্চলে তেমন খরচ হয় না৷ পুকুরে নানান দেশী মাছের চাষ করা যায়৷ শুধু খেয়াল রাখতে হবে এমন কোনো মাছের চাষ যেনো না হয় যা চাষের অন্য মাছকে খেয়ে ফেলবে। এ ব্যাপারে আপনার অবশ্যই যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। না জেনে বা কোন প্রকার ধারনা ব্যতিত এটি শুরু করলে আপনি ক্ষতিরও সম্মুখীন হতে পারেন।
আর দেশী মাছের পোনার জন্যও শহরে আসার কিছু নেই কারণ তা গ্রামেই সহজলভ্য। এরপর পুকুরের উপর বাঁশের মাচা তৈরি করে তাতে মুরগী পালন করা যায়৷ এতে সুবিধা হলো মাছের খাবারের খরচ অনেকটাই কমে আসে কারণ মুরগীর বিষ্ঠা মাছের অন্যতম খাবার।
আর মুরগী পালনের সাথে তো ডিমও উৎপাদন হয়। ফলে সবমিলিয়ে আমিষের সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েক ধরনের পদ বাজারজাত করা সম্ভব এক স্থান থেকেই। তাই ২০২৪ এ গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে মাছ ও মুরগীর সমন্বিত ব্যবসা খুবই লাভজনক।
আরও পড়ুন- ৩ লাখ টাকার ব্যবসা।
৩. মাশরুম চাষ ও বিক্রি
বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে মাশরুমের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বিশেষ করে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট গুলোতে মাশুরুমের চাহিদা বেড়েই চলেছে। আমিষের মতো স্বাদ কিন্তু নিরামিষের প্রয়োজন মেটায় বলে বিশেষত শহরাঞ্চলে এর চাহিদা বেশি। আবার দেশে এখন নানান বিদেশী খাবারের পদ তৈরির চল হয়েছে। তাই শুধু বাড়িতে নয়, রেস্টুরেন্টেও এর যোগান দিতে হয়। অনেকে ভাবতে পারে যে মাশরুম চাষ করতে হয়তো অনেক জায়গা বা আয়োজন প্রয়োজন।
কিন্তু বিষয়টি আসলে তা নয়। গ্রামে থেকে করার মতো ভালো একটি গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া এটি। কারন খোলা জায়গা বা নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় কিছুটা জায়গা নিয়েও এই মাশরুমের চাষ সম্ভব। আর গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়ির সামনেই কিছুটা উঠান বা আঙ্গিনা ধরণের জায়গা থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠানে এখন মাশরুম চাষের ট্রেনিং দেয়া হয়।
এই ব্যবসায় মূলধনও খুব কম প্রয়োজন পড়ে। আবার মূলধনের তুলনায় লাভ উঠে আসে কয়েকগুন। তাই এই ব্যবসাটি অন্যতম একটি লাভজনক গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া।
৪. বাণিজ্যিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
গ্রামের দিকে তরুন তরুনীরা কাজের জন্য দিকনির্দেশনার অভাবে ভোগে। শহরের দিকে যেমন নানা প্রান্তে কর্মমুখী কর্মসূচী বা প্রতিষ্ঠান গ্রামে তা নেই। তাই গ্রামের দিকে প্রশিক্ষণের ভালো ব্যবসা চালু করা সম্ভব। সেলাই, কম্পিউটারের কাজ, বিউটি পার্লারের কাজ, পশুপালন এমনকি ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর জন্যও প্রশিক্ষনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যায়। গ্রামে কিছু ঘর ভাড়া করা অথবা অনাবাদী জমিতে নিজের মতো জায়গা তৈরী করে নিয়ে এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রের কাজ পরিচালনা করা যায়। কম্পিউটার শিক্ষা দিলে সেক্ষেত্রে কিছু বড় অংকের মূলধন লাগে। আর প্রয়োজন পড়ে ভালো প্রশিক্ষকের।
তবে উদ্যোক্তা যদি এমন কিছুর প্রশিক্ষণ দেন যাতে তিনি নিজেই পারদর্শী, সেক্ষেত্রে খরচ কমে হয়। গ্রামে এরকম উদ্যোগ কম থাকার কারণে অল্পদিনের মধ্যে মুনাফা আসতে শুরু করে। এবং যেহেতু প্রতিবছরই শিক্ষার্থীরা পাশ করে কাজ খোঁজে অথবা যারা পড়াশোনা করে না তাদের একটা অংশ কাজের সন্ধানে নামে, তাদের কাছে বছরজুড়ে এসব প্রশিক্ষণের চাহিদা লেগেই থাকে তাই অংশগ্রহণকারীর অভাব হয় না। তাই নিঃসন্দেহে এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ব্যবসা গ্রামে করার জন্য একটি লাভজনক গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া৷
৫. নানা রকম তেলের ব্যবসা
তেল এমন এক জিনিস যার বিভিন্ন ধরণ বিভিন্ন কাজে লেগে থাকে এবং এর চাহিদা কখনো কমে না। কিন্তু এখনকার যুগে ভালো মানের খাঁটি তেল খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই কেউ যদি খাঁটি তেলের আশ্বাস দিতে পারে, গ্রাম ও শহরের বাজারে তার যোগানের প্রতি আগ্রহ থাকে সবার। বিশেষ করে শহর এলাকায় তো এখন ভেজালমুক্ত তেলের এক বিশাল ক্রেতাগোষ্ঠি সৃষ্টি হয়েছে।
তা হোক ভোজ্যতেল বা চুলে দেবার নারকেল তেল। সয়াবিন, নারকেল তেল ও সরিষার তেলের মতো বহুল ব্যবহৃত আইটেমগুলো যদি কেউ শহরে বাজারজাত করতে পারে, তার জন্য এটি হতে পারে একটি লাভজনক গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া। পাশাপাশি, অনলাইনে তেলের ব্যবসা এখন জমজমাট। সুন্দর প্যাকেজিং অথবা গ্রামের সাদামাটা ভাব বজায় রাখতে সাধারণ বোতল, দুই ই ব্যবহার করা যায়। এ ব্যবসাটি অন্যতম লাভজনক একটি গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া।
আরও ব্যবসার আইডিয়া
FAQ
লাভজনক গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে কোনটি আপনার জন্য সঠিক তা নির্ধারনের আগে একটি বিষয় ভাবতে হবে৷ আপনি কোন অঞ্চলে আছেন বা কোন অঞ্চলে ব্যবসা করবেন৷ সেই অঞ্চল কোন ব্যবসার জন্য সঠিক এবং আপনার কাজ করার জন্য যে ধরনের জনবল প্রয়োজন তা ওই এলাকায় আছে কিনা। তাই, স্বাধীনভাবে নিজের ব্যবসায়ীক পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে ভাবুন, ভেবে সিদ্ধান্ত নিন এবং সাহস নিয়ে এগিয়ে যান। ব্যবসায়ে সাহসের চেয়ে জরুরি কোনো মূলধন নেই৷