ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা এর জনপ্রিয় ৫টি আইডিয়া
ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠার কারণটা কি ভেবে দেখেছেন? এটা কি তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা নাকি সময়ের চাহিদার প্রেক্ষাপটে হচ্ছে?
একটা সময় ছিলো, যুবসমাজের কাছে ইন্টারনেট মানে ছিলো বিনোদনের জগত আর তথ্যের ভাণ্ডার। অন্যদিকে গুরুজনেরা ভাবতেন ইন্টারনেট কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই না। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রথম দিকে ইন্টারনেট ব্যাপারটি এই দুই মতামতের মধ্যে আটকে থাকলেও, খুব কম সময়ের মধ্যে দৃশ্যপট গেলো বদলে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় থেকে ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা করার ধারনাটি শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠলো।
একটা উদাহরন দিয়ে ব্যাপারটি বোঝানো যায়। ২০০৬ সালে ব্রিটেন এ মোট জনসংখ্যার ৩% অনলাইনে কেনাকাটা করতো যেটি ২০২০ এর প্রথমদিকে বেড়ে দাড়ায় ১৯ শতাংশে। কিন্তু করোনা মহামারীর পর থেকে ঐ বছরের এপ্রিলে তা বেড়ে দাড়ায় ৩০ শতাংশে যেটি রীতিমত অনলাইন ব্যবসায়ে বিপ্লব বলা চলে। (Source: অনলাইন শপিং: অনলাইন বাণিজ্যের যাত্রা শুরুর অভিনব ও অজানা কাহিনি)
ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা কেন জনপ্রিয়?
গত বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশ তথা পুরো বিশ্বজুড়ে ডিজিটালাইজেশনের এক উৎসব চলছে যার পুরোটাই এই ইন্টারনেটের হাত ধরে। তাই অফলাইন থেকে জীবনটা বিদ্যুতের গতিতে চলে এসেছে অনলাইনে। আরো অসংখ্য জিনিসের সাথে চোখের নিমিষে ব্যবসার মতো শক্ত একটা বিষয়ও অনলাইনের জগতে প্রবেশ করলো!
প্রথমে এই নিয়ে নানা বিতর্ক আর অনিশ্চয়তা ছিল। পরে সবাইকে অবাক করে দিয়ে গত কয়েক বছরে ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা নিজেকে ব্যবসায় ব্যবস্থার আধুনিক সংস্করণ হিসেবে প্রমান করে ফেলেছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় এই অনলাইন ব্যবসার আইডিয়া রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। ঐ সময় যারা অনলাইনে কিছু করার কথা ভাবেননি কোনদিন, তারা ও ভাবতে শুরু করলেন ঘরে বসে অনলাইনে কিভাবে আয় করা যায়?
আর অবস্থান তৈরির সাথে হয়েছে তুমুল জনপ্রিয়। কারন অনলাইন ব্যবসা মূলত ঘরে বসেই করা যায়। নিজের সময়, সুযোগ, সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে ঘরে বসে ব্যবসা করা যায় বিধায় এটি আজ তুমুল জনপ্রিয়। আজ আমরা জনপ্রিয় ৫টি ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা এর আইডিয়া নিয়ে জানবো।
আরও পড়ুন- ই-কমার্স ব্যবসার নিয়ম
ঘরে বসে অনলাইনে পণ্য বিক্রয়
জীবনযাপনে যা কিছু প্রয়োজন তার সবই এখন অনলাইনে বিক্রি করে ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা সম্ভব। খাবার থেকে কাপড়, গয়না থেকে ঘড়ি, ব্যায়াম করার যন্ত্র থেকে চিকিৎসা সামগ্রী, বই থেকে ইলেকট্রিক সামগ্রী, জমি থেকে ফ্ল্যাট- কি নেই এই তালিকায়!
আপনার ঠিক করতে হবে কোন প্ল্যাটফর্মে আপনি কি বিক্রি করতে চান। অনলাইনে ব্যবসা এর উদ্দ্যেশে এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ফেইসবুক। ফেইসবুক পেইজ, ফেইসবুক গ্রুপ, মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসায়ীরা তাদের পন্যের ছবি ও ভিডিও ক্রেতাকে দেখান, যোগাযোগ করেন এবং পরবর্তীতে কাঙ্খিত পণ্য ডেলিভার করেন। এর বাইরে ইন্সটাগ্রাম একাউন্ট থেকেও পণ্য বিক্রি সম্ভব যদিও তা আমাদের দেশে খুব বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নি। কিছু লাইফস্টাইল পন্যের ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করছেন এই মাধ্যমকেও জনপ্রিয় করার।
তবে অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়া যায় একটি ভালো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করলে। পণ্যের ছবি, দাম, অর্ডার করার নিয়ম সবকিছু গোছানো থাকে ওয়েবসাইটে।
অনলাইন ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আপনার নিজের হাতে তৈরী পণ্য অথবা ব্যবসার আকার বড় হলে লোক রেখে পণ্য উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারেন। অনেকে পাইকারী হারে জিনিস কিনে তা খুচরোভাবে অনলাইনে বিক্রি করে।
ঘরে বসে অনলাইনে ছবি বিক্রি
ক্যামেরা আছে? অথবা ফোনের ক্যামেরার মান ভালো? তাহলে ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে বের হোন। রাস্তা, প্রকৃতি, ভাস্কর্য, সুন্দর দৃশ্য অথবা অনুমতি সাপেক্ষে মানুষের ছবি তুলুন। তুলতে পারেন সাজানো গোছানো ঘরের ছবি কিংবা সুন্দর একটা খাবারের ছবিও। সাথে টুকটাক ভিডিও করুন।
মোট কথা, দৈনন্দিন জীবনের সবধরনের ছবি তুলুন বা নিজের পছন্দের ক্যাটাগরি ঠিক করে নিন। এই মার্কেটিং এর স্বর্ণযুগে ছবি এবং ভিডিওর চাহিদা এখন তুঙ্গে। অনেক ওয়েবসাইট আছে যারা এসব ছবি ভিডিও কিনে নেয় এবং প্রতিটির বিনিময়ে অর্থ প্রদান করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি একটি ইউনিক বিজনেস আইডিয়া।
এরকম কিছু সাইট আছে যেগুলোতে আপনি আপনার নির্বাচিত ফটোগুলো বিক্রি করতে পারবেন। এরকম কিছু সাইট এর নাম দেয়া হল যেটা আশা করি আপনার কাজে আসবে।
- getty images
- etsy
- 500px
- fotomoto
- alamy
- shutterstock
প্রয়োজনে অনলাইনে ছবি তোলা ও ভিডিও করার কিছু কোর্স করুন। এরপর সম্পূর্ণ তৈরী হয়ে আরো প্রফেশনালি কাজটি করুন। তবে এই কাজকে ঠিক মতো ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা হিসেবে নিতে চাইলে ও একে আয়ের উৎস বানাতে চাইলে, আপনাকে ছবি তোলা ও ভিডিও করার কাজটি নিয়মিত করতে হবে।
ছবির এই ব্যবসায় ভিন্নতা আছে তাই আনন্দদায়ক। নিজের গ্যালারিতে শুধু মুহূর্ত ধরে রাখাই নয়, এটি হবে আপনার আয়ের উৎস।
এফিলিয়েট মার্কেটিং
এফিলিয়েট মার্কেটিং দেশে বিদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ছাত্র ছাত্রী, বেকার অথবা পেশাজীবীরা কিছু অতিরিক্ত আয়ের আশায় এফিলিয়েট করছে। কেউ সময় ও শ্রম দিলে, ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা করার এক আধুনিক উপায় এফিলিয়েট মার্কেটিং।
তা কিভাবে করা যায় এই এফিলিয়েট মার্কেটিং? প্রথমে নিজে একটি সাইট বা ইউটিউব চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করুন। মার্কেট প্লেস যেমন অ্যামাজন বা অন্য কোন কোম্পানী যারা এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুযোগ দিয়েছে, সেখান থেকে যেই প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে চান তার লিংক আপনার সাইট বা ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার করুন। এরপর সেই লিঙ্ক ক্লিক করে কেউ যদি পণ্য কিনে তবে আপনিও বিক্রিত পণ্যের দামের উপর নির্দিষ্ট হারে কমিশন পাবেন। এভাবে যতবার ওই পণ্য বা সেবা বিক্রি হবে আপনি দামের একটি অংশ পাবেন।
আপনাকে পছন্দ করতে হবে যে কি ধরণের পণ্য আপনি প্রচারণা করতে চাচ্ছেন। এবং সেই পণ্যের ভালো বর্ণনা যোগ করতে হবে। একে কন্টেন্ট রাইটিং বলে। আর সাথে অবশ্যই পণ্যের ভালো ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করতে হবে। আর এভাবেই এই এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুযোগ দেয় এমন কিছু সাইট এর নাম দেয়া হল যা আপনার কাজে লাগবে আশা করছি।
- ebay partner network
- partnerstack
- shareasale
- amazon associates
- flexoffers
- rakuten advertising
সম্পর্কিত পোস্ট- বিনা পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা।
অনলাইন টিউটর
একসময় শিক্ষক মানে ছিলো বেত হাতে দাঁড়ানো এক রুদ্রমূর্তি। সময় বদলেছে। ছাত্র শিক্ষক এখন কখনো চক বোর্ডের সামনে, কখনো খাতা কলম হাতে, আবার কখনো একটা স্ক্রিনের মাধ্যমেও শিক্ষা দিতে আর নিতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন পড়ে একটি স্মার্টফোন বা কম্পিউটার।
একটি ফেইসবুক গ্রুপ বা পেইজ খুলে সেখানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের এক করা যায়। এরপর সেখান থেকে নিজে পড়ানো শুরুর পাশাপাশি, অন্যান্য শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে, তাদের থেকেও কমিশন পাওয়া যায়। অনলাইনে পড়ানোর কারনে রাস্তার জ্যাম, ক্লান্তি, খরচ বহন করতে হয় না তাই শিক্ষক পড়াতেও পারেন ফুরফুরে মেজাজে।
পাশাপাশি, পড়ানোর জন্য আলাদা রুম ভাড়া নেয়া, বিদ্যুৎ বিল দেয়া, কাজের লোক রাখা এসব বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। তাই নিঃসন্দেহে এটি ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা এর দারুণ আইডিয়াগুলোর ভিতরই পড়ে।
সম্পর্কিত পোস্ট- ব্যবসার আইডিয়া ।
ভয়েস ওভার আর্টিস্ট
আপনার কন্ঠ যদি আকর্ষণীয় হয় আর সঠিক উচ্চারণে কথা বলতে পারেন তা হোক বাংলা কিংবা ইংরেজি অথবা উভয়ই। তাহলে কন্ঠশিল্পী বা ভয়েস আর্টিস্টদের জন্য থাকা ফেইসবুকগুলোতে যোগ হোন। পাশাপাশি আপওয়ার্ক বা ফিভারের মতো সাইটগুলোতেও খুঁজতে পারেন কন্ঠ দেবার কাজ। বর্তমানে ভিডিও কন্টেন্টের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী তাই ভিডিওর সাথে কন্ঠের চাহিদাও বাড়ছে। এই পেশার মানুষদের চাহিদা এখন অনেক বেশি।
এই বিষয়ক কোর্স আছে এবং এই কন্ঠশিল্পীর কাজ করার জন্য কোনো অফিস দেবার প্রয়োজন নেই। অনলাইনেই কাজ খোঁজা যায় এবং নতুনদের জন্যও এই কাজের সাথে জড়িত গ্রুপগুলোতে ভালো পরিমাণে সুযোগ আছে। বিনিয়োগ বলতে একটি ভালো মানের মাইক্রোফোন আর কন্ঠ এডিট করার জন্য ফোনে কিছু সহজ অ্যাপ।
অনলাইনেই কাজ নিবেন আবার অনলাইনেই জমা দিবেন। এক কথায় বলা যায়, একটি ভার্চুয়াল রেকর্ডিং স্টুডিও মালিক এবং কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ করবেন। এটিও ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা করার একটি যুগোপযোগী আইডিয়া।
সম্পর্কিত পোস্ট- নতুন ব্যবসার আইডিয়া ।
ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা- কিছু পরামর্শ
ডিজিটাল এই যুগে মানুষ অপ্রয়োজনীয় বিনিয়োগ বাদ দিয়ে, কিভাবে কম বিনিয়োগে বা প্রায় শুন্য বিনিয়োগে ব্যবসা করা যায় তাই নিয়ে বেশি ভাবছে। তাই, অনলাইনে ব্যবসা করে উপার্জন করার দিকেও লোকের ঝোঁক বাড়ছে। মানুষ বুঝতে শিখেছে ঘরে বসে ছোট ব্যবসা করা যায়।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, অন্য কেউ করছে বলে নিজেও করবেন, এমন ভাবনা ভাবা যাবে না। বরং সবসময়ই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার আগ্রহ কি নিয়ে, কোনো নির্দিষ্ট কাজে পারদর্শিতা আছে কিনা। এবং তা করার জন্য একটি খসরা পরিকল্পনা তৈরী করে ঘরে বসে অনলাইনে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া নির্ধারণ করে তারপর ব্যবসা শুরু করতে হবে। একটু রিসার্চের পর কাজে নামলে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা এর সম্ভাবনাময় জগতে যেকোনো কারোরই সফল হবার সুযোগ আছে।
আরও পড়ুন-
১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া
FAQ
অনলাইনে কাজ করার জন্য নিম্নলিখিত টিপস গুলো অনুসরন করুন।
১। অবশ্যই আপনার ইন্টারনেট ব্যবহার এবং কম্পিউটার সম্পর্কে ভালো দক্ষতা থাকতে হবে।
২। প্রথমে যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হবে।
৩। যে বিষয়ে কাজ শুরু করবেন সেটি আগে নির্বাচন করুন এবং একটি পরিকল্পনা সাজান।
৪। তারপর অনলাইনে সেই বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করুন।
৫। অবশ্যই পরিশ্রম ও লেগে থাকার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।
যদি আপনার অনলাইন ব্যবসা শুরু করার মত প্রস্তুতি থাকে তবে অবশ্যই আপনি অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ডিজিটাইলেজেশন এর এই যুগে একটি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে অনলাইন ব্যবসা শুরু করলে অবশ্যই সফল হতে পারবেন।