১ লাখ টাকা বিনিয়োগে ৫টি লাভজনক ব্যবসা
১ লাখ টাকায় ব্যবসা শুরু করে কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে এমন অনেক সফলতার গল্প আমাদের আশেপাশেই রয়েছে। যদি তারা পারেন, তাহলে আপনি কেন পারবেন না?
ব্যবসা একটি পেশা বা কাজ যা লোকজন করে থাকে অর্থ উপার্জনের জন্য। আজকাল অনেক মানুষই চাকরির থেকে বেশি ব্যবসার প্রতি আগ্রহ বেশী দেখাচ্ছে। এমনকি কখনো কখনো দেখা যায় মানুষ তার মোটা টাকা মাইনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করা শুরু করছে ও সফলও হচ্ছে। আবার অনেকসময় মানুষ ব্যবসা করার চিন্তা থেকে সরে আসে কারন তারা ভাবে ব্যবসা করার জন্য একটি বড় পরিমাণ মূলধন লাগে। কিন্তু আপনি কি জানেন ১ লাখ টাকায় ব্যবসা করেও সফলতা অর্জন করা যায়!
এই আর্টিকেলে আজ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসার আইডিয়া শেয়ার করা হবে যার দ্বারা আপনি ১ লাখ টাকায় ব্যবসা করার একটি ভালো আইডিয়া পেয়ে যাবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খুটি-নাটি বিষয়গুলি উল্লেখ করব। যাতে করে খুব সহজেই আপনি সঠিক গাইডলাইন পান ও সফলতা অর্জন করতে পারেন।
১ লাখ টাকায় ব্যবসা করুন
আপনি এক লাখ টাকায় অনেক ধরনের ব্যবসা করতে পারবেন। তবে আমরা গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি আইডিয়া শেয়ার করবো । চলুন জেনে নেই।
- ভাতঘর এর ব্যবসা।
- দুধ সাপ্লাই এর ব্যবসা।
- ফাস্টফুড এর দোকান।
- অনলাইনে পোশাক ও অলংকার বিক্রির ব্যবসা।
- অনলাইন নার্সারি এর ব্যবসা।
ভাতঘর এর ব্যবসা
ভাতঘর এর ব্যবসা খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা। কেননা এই ব্যবসার চাহিদা অনেক বেশি থাকে । বর্তমানে অধিকাংশ মানুষই লাঞ্চ ও ডিনার এ বাইরে খেতে পছন্দ করে। চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী বা মেসে থাকা ছাত্রদের অনেক সময় প্রয়োজন এর তাগিদে বাহিরে খাবার খেতে হয়।
আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, রেস্টুরেন্ট এর ব্যবসা উল্লেখ না করে ভাতঘর এর ব্যবসা কেন বললাম। এর যুক্তি সংগত কারন আছে। রেস্টুরেন্ট বলতে মোটামুটি সব ধরনের খাবারই চলে আসে। কিন্তু ভাতঘর এ শুধুমাত্র ভাত এবং ভাতের সাথে খাওয়ার জন্য আনুষঙ্গিক খাবার আইটেম থাকে। এটা একটা মার্কেটিং টেকনিক বলা যেতে পারে। যারা রেস্টুরেন্ট এ ভাত খাওয়ার জন্যই যান, তারা যে দোকানে শুধু ভাত পাওয়া যায় সেই দোকান এর প্রতি আকর্ষিত বেশী হয়। এটা মুলত পরিছন্নতা, খাবার এর মান, স্বাদ, খাবার এ তেলমশলার ব্যবহার সহ খাবার এর দাম, এরকম বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে।
তাই আপনি এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন। এই ব্যবসায় সফলতা লাভ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে কয়েকটি বিষয় অনুসরন করতে হবে।
- ভালো জায়গা নির্বাচন করা। অর্থাৎ, এমন একটি স্থানে জায়গা নির্বাচন করবেন যেখানে লোকসমাগম বেশি। গ্রামে হলে বাজার আর শহরে হলে কোন একটি নামকরা স্থান যেখানে সকলেই আসে। অথবা যেখানে যাতায়াত করা সহজ। অবশ্য আপনার ভাতঘর এর খাবার এর মান ও স্বাদ ভালো হলে ক্রেতা আপনার দোকান নিজ থেকেই খুঁজে নিবে।
- খাবারের মান ও স্বাদ ভালো করা। অর্থাৎ এমন ভাবে খাবার তৈরি করা যাতে করে একবার খেলে দ্বিতীয়বার আবার খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। পাশাপাশি খাবারের গুণগত মানও ভালো হয়।
- অবশ্যই নতুন নতুন তরকারি এর আইটেম রাখতে হবে। যাতে করে আপনার দোকানে নতুন নতুন খাবার খাওয়ার জন্য লোকজন ভিড় করে।
এই ব্যবসাটি দোকান এর এডভান্স ও অন্যান্য বিনিয়োগ মিলিয়ে ১ লাখ টাকার মূলধনের মধ্যে করা সম্ভব। সম্ভাবনাময় এই ১ লাখ টাকায় ব্যবসা করে মাসে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা ও আয় করা সম্ভব।
আরও পড়ুন- ৩ লাখ টাকার ব্যবসা।
দুধ সরবরাহের ব্যবসা
দুধ সরবরাহের (supply) ব্যবসা আপনি ইচ্ছা করলে শহরেও করতে পারেন অথবা গ্রামেও করতে পারেন। তবে শহরে করলে লাভবান বেশী হবেন। এই ব্যবসায় প্রচুর পরিমাণে লাভ করতে পারবেন। কেননা দুধের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এ ব্যবসা করার জন্য আপনাকে কয়েকটি বিষয় অনুসরন করতে হবে তাহলে খুব সহজেই লাভ করতে পারবেন এবং সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
- ভালো এবং উৎকৃষ্টমানের দুধ সরব্রয়া করা। কোন ধরনের ধোঁকাবাজি না করা লাভ বেশি করার জন্য। আর ধোঁকাবাজি অর্থাৎ পানি মিশ্রন করে দু্ধ সরবরাহ করা যাবে না।
- বিভিন্ন গ্রামের বাজার থেকে দুধ সংগ্রহ করা অথবা সৎ ও ভালো গোয়ালদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করা । এখানে সৎ ও ভালো এর শর্ত করা হয়েছে যাতে করে কোন ধরনের ধোঁকাবাজি না করে।
- সময়মতো দুধ সাপ্লাই করা।
দুধ সাপ্লাই এর ব্যবসাটি ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া গুলোর মধ্যে অন্যতম লাভজনক ব্যবসা। তবে এই ব্যবসাটি পরিশ্রম সাপেক্ষ। ব্যবসাটির সাফল্য আপনার কাজের ধারাবাহিকতা এবং সততার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে।
সম্পর্কিত পোস্ট- দৈনিক আয়ের ব্যবসা ।
ফাস্টফুড এর দোকান
বাংলাদেশের মানুষ মজাদার এবং স্পাইসি খাবার খেতে খুব ভালোবাসে। ছোট করে যদি ফাস্ট ফুডের দোকান দেওয়া যায় তাহলে, আপনি ভাল মুনাফা লাভ করতে পারেন। এর জন্য আপনার মূলধন মাত্র এক লাখ টাকা হলেও আপনি শুরু করতে পারবেন।
ফাস্ট ফুডের ব্যবসায় লাভবান হতে হলে আপনাকে একটু কৌশলী হতে হবে। আর খাবারের মান ভাল আর খাবার মজাদার হলেই আপনি আপনার ব্যবসাটিকে দাড় করাতে পারবেন, ব্যাপারটি এমন নয়। আপনাকে অবশ্যই কিছু ভিন্ন স্বাদের ইউনিক খাবার আইটেম আপনার দোকানে রাখতে হবে। ব্যবসা শুরু করার জন্য বেশকিছু নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন যেমন :
- আপনায় দৈনন্দিন কাঁচামাল সংগ্রহ করার জন্য একটি নিদিষ্ট উৎস নির্বাচন করতে হবে।
- ব্যবসার পরিকল্পনা ফাইনাল হলে আপনার দোকানের ডিজাইন এবং ডেকোরেশন ঠিক করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে কতৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমতিপত্র নিতে হবে।
অবশ্যই আপনার ফাস্তফুড এর দোকান এ কমন আইটেম এর পাশাপাশি কিছু ইউনিক ফাস্টফুড আইটেম রাখবেন। এতে আপনার দোকান এর সুনাম ছড়িয়ে পড়বে এবং বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে।
১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া গুলোর মধ্যে ফাস্টফুড জনপ্রিয় একটি ব্যবসা। সঠিক পরিকল্পনায় ব্যবসাটি করতে পারলে মাসে ৫০০০০ টাকা ও আয় করা সম্ভব।
আরও পড়ুন- চা পাতার ব্যবসা।
অনলাইনে পোশাক ও অলংকার বিক্রির ব্যবসা
আপনি সহজেই ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া হিসেবে একটি অনলাইন পোশাক ও অলংকার বিক্রির ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই জিনিসগুলো মানুষকে বেশী আকৃষ্ট করে। এসব আইটেম আপনার ক্রেতা পাবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
এই ব্যবসায়ে লাভবান হতে হলে আপনাকে অবশ্যই সময়ানুবর্তী এবং কৌশলী হতে হবে। আপনি ব্যবসা শুরু করার আগে কিছু কেস স্টাডির মধ্য দিয়ে যেতে পারেন এবং আপনি কি ধরনের পণ্য বিক্রি করবেন সেগুলো নির্বাচন করতে পারেন। এবং আপনার কালেকশন অবশ্যই ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে পারে, এমন হতে হবে।
অনলাইনে ব্যবসা করার জন্য ব্যবসার লোগো, ডিজাইন, পণ্যের ধরণ এবং অন্যান্য কাগজপত্র দেখিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স নিতে হবে।
আপনার কালেকশন এ অবশ্যই ভালো ভালো এবং ইউনিক ডিজাইন এর পোশাক ও অলংকার থাকতে হবে। ক্রেতা আকর্ষণের জন্য এই ধরনের ব্যবসায়ে ভালো কালেকশন থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
সম্পর্কিত পোস্ট- ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা
অনলাইন নার্সারি এর ব্যবসা
অনলাইন নার্সারি ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়া এর মধ্যে একটি নতুন ব্যবসার আইডিয়া। লোকেরা অনলাইনে বিভিন্ন হাউস-হোল্ড জিনিস কিনতে পছন্দ করে এবং সাথে গাছপালাও। আপনি যদি অল্প একটু জায়গার সংস্থান করতে পারেন বা ছাদবাগান করতে পারেন এবং সঠিক পরিচর্যা করতে পারেন তাহলে অবশ্যই সফলভাবে এই ব্যবসাটি করতে পারবেন।
আপনি আপনার বাড়িতে সজ্জা গাছপালা, ফুলের গাছপালা, ফলের গাছপালা এবং অন্যান্য অনেক ধরণের গাছপালা উত্থাপন করতে পারেন। এই গাছগুলি অনলাইনে বিক্রয়ের জন্য দেওয়া যেতে পারে। আপনি এই উদ্ভিদগুলির যথাযথ যত্ন এবং বৃদ্ধির জন্য তথ্যপূর্ণ টিপস এবং নির্দেশিকাসহ এই উদ্ভিদগুলির ফটোগুলি আপলোড করতে পারেন তাহলে আপনার অনেক অনেক ক্রেতা হবে।
অনলাইনে নার্সারির এই বিজনেসের ধারণাটি অনেক লোকের জন্য বেশ ব্যবহারিক এবং আয়ের একটি যুক্তিসঙ্গত উৎস তৈরিতে সহায়তা করতে পারে। অনেক মানুষ এতে আনন্দ এবং নান্দনিকতার ছোঁয়া পাবে।
১ লাখ টাকায় ব্যবসা- আরও কিছু আইডিয়া
উপরে উল্লিখিত ১ লাখ টাকায় ব্যবসা আইডিয়াগুলো ছাড়াও নিম্নে উল্লিখিত ব্যবসাগুলো ১ লাখ টাকা মূলধনের মধ্যে শুরু করতে পারেন।
- বেবি ফুড এর ব্যবসা।
- ষ্টেশনারী এর দোকান।
- রেডিমেড আইসক্রিম শপ।
- ফটোগ্রাফি ব্যবসা।
- মোবাইল রিপেয়ারিং শপ।
তাছাড়া ও অল্প পুঁজিতে বিভিন্ন মেনুফেকচারিং এর বিজনেস আছে, যা আপনি এক লাখ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করতে পারেন। তবে অন্য যে কোন ব্যবসার মতই ১ লাখ টাকায় ব্যবসা গুলোয় সফল হওয়ার জন্য পরিকল্পনা ছাড়াও পরিশ্রম ও ধৈর্যের গুরুত্ব অপরিসীম ।
আরও পড়ুন- ২ লাখ টাকায় ব্যবসা।
১০ হাজার টাকায় ২৫টি ব্যবসার আইডিয়া।
FAQ
১০ লাখ টাকা মূলধনে শুরু করা যায় এমন বেশ কিছু ভালো লাভজনক ব্যবসা রয়েছে।
১। স্যানিটারি সামগ্রি এর ব্যবসা।
২। স্পোর্টস আইটেম এর ব্যবসা।
৩। ক্রোকারিজ এর ব্যবসা।
৪। সিরামিক আইটেম এর ব্যবসা।
৫। বড় মুদি দোকানের ব্যবসা।
৬। ব্র্যান্ডেড পোশাক এর শোরুম এর ব্যবসা।
৭। মোবাইল এর দোকান।
৮। লেডিস পোশাক ( বোরখা, হিজাব, শাড়ি, থ্রিপিস ইত্যাদি) এর ব্যবসা।
৯। বড় ফার্মেসি এর ব্যবসা।
১০। চেইন রেস্টুরেন্ট এর ফ্রাঞ্চাইজি ( পিতজা হাট, কেএফসি ইত্যাদি)।
কিছু কিছু ব্যবসা রয়েছে যেগুলো দিয়ে দৈনিক আয় করা যায়।
১। খাবার এর দোকান।
২। মোবাইল রিচারজ এবং কম্পিউটার প্রিন্ট এর দোকান।
৩। বিকাশ/নগদ/রকেট ইত্যাদি এর দোকান।
৪। টি স্টল।
৫। জুস বার।
যে কোন ভালো মানের ব্যবসা শুরু করার জন্য এক কোটি টাকা যথেষ্ট মূলধন। বর্তমান বাজারে ১ কোটি টাকা দিয়ে নিচের ব্যবসা গুলো শুরু করা যায়।
১। বড় কোম্পানির পরিবেশক এর ব্যবসা।
২। আবাসিক হোটেল এর ব্যবসা।
৩। ট্রান্সপোর্ট এর ব্যবসা।
৪। পাবলিক পরিবহন এর ব্যবসা।
৫। রেন্ট এ কার এর ব্যবসা।